ভোটে নেই আসন, পুজোর স্টলে কোটি টাকার বই বিক্রির দাবি সিপিএমের! ঠাট্টা নেটদুনিয়ায়
বিধানসভায় কোনও সদস্য নেই। পশ্চিমবঙ্গ থেকে কোনও সদস্য নেই লোকসভাতেও। এমন চরম দুঃসময়েও শারোদৎসবে এক কোটি টাকার বই বিক্রি করেছে রাজ্যের প্রাক্তন শাসক সিপিএম। এমনই দাবি করেছেন দলের নেতারা। তাঁরাই জানাচ্ছেন, ওই বিরাট অঙ্কের বই বিক্রিতে সর্বাগ্রে উত্তর ২৪ পরগনা জেলা কমিটি।
এ বারের বিধানসভা ভোটে রাজ্য থেকে কার্যত নিশ্চিহ্ন হয়ে গিয়েছে সিপিএম। প্রাপ্ত ভোটের শতাংশ নেমে এসেছে ৫-এ। তবে এখনও পর্যন্ত আলিমুদ্দিন স্ট্রিট যে তথ্য হাতে পেয়েছে, তাতে সিপিএমের উত্তর ২৪ পরগনা জেলা কমিটি পুজোয় স্টল দিয়ে ১০ লক্ষ টাকার বেশি বই বিক্রি করেছে। শারদোৎসবে গোটা রাজ্যে প্রায় ১,২০০ বইয়ের স্টল দিয়েছিল সিপিএম। গত কয়েক দশক ধরে দুর্গাপুজোর সময় এই স্টল দিয়ে থাকে তারা। শুধু স্টল করাই নয়, বই বিক্রিতেও ভাল সাড়া পেয়ে উজ্জীবিত রাজ্য নেতৃত্ব। এক সিপিএম নেতার দাবি, বামপন্থী ও সমকালীন রাজনীতি এবং মার্কসীয় সাহিত্যের নানা বই বিক্রি সবচেয়ে বেশি বিক্রি হয়েছে ওই স্টলগুলি থেকে।
দ্বন্দ্বমূলক বস্তুবাদে বিশ্বাসী সিপিএম সরাসরি দুর্গাপুজোয় না জড়ালেও উৎসবের মরসুমে বইয়ের স্টল করার রীতি ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পরেও ছাড়েনি। উৎসবের মরসুমে এই ধরনের স্টল দেওয়াকে সিপিএম নেতৃত্ব দলের সাংগঠনিক কর্মসূচি হিসেবেই ধরেন। ধারাবাহিক এই কর্মসূচির কারণেই বিধানসভা ভোটে ধরাশায়ী হওয়ার প্রভাব বই বিক্রিতে পড়েনি বলেই দাবি সিপিএমের রাজ্য নেতাদের একাংশের।
প্রতিবারই পুজোয় বইয়ের স্টল করার জন্য সিপিএমের বিভিন্ন স্তরের কমিটিকে বইয়ের জোগান দেয় সিপিএম পার্টির প্রকাশনা সংস্থা। সূত্রের খবর, টাকার অঙ্কে উত্তর ২৪ পরগনা জেলা ১০ লক্ষ টাকার উপর বই বিক্রি করে রাজ্যের মধ্যে শীর্ষে রয়েছে। ওই জেলার এক সিপিএম নেতার কথায়, ‘‘রাজ্যের সবচেয়ে বড় জেলা হল উত্তর ২৪ পরগনা। তাই স্বাভাবিকভাবেই এই জেলায় স্টলের সংখ্যাও বেশি। ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পরেও অন্যান্য জেলার তুলনায় এই জেলায় সাংগঠনিক শক্তি রয়েছে সিপিএমের। ফলস্বরূপ আমরা বেশি বই বিক্রি করতে পেরেছি।’’ এমত সব কারণেই রাজ্যে বই বিক্রির পরিমাণ কোটি টাকা ছাড়িয়েছে বলে দাবি নেতাদের একাংশের।
তবে বই বিক্রির পূর্ণাঙ্গ হিসাব এখনও হাতে আসেনি আলিমুদ্দিন স্ট্রিটের। আসন্ন কালীপুজো ও জগদ্ধাত্রী পুজো উপলক্ষেও কিছু নির্দিষ্ট জায়গায় বইয়ের স্টল দেওয়ার কথা সিপিএমের। বারাসতে কালীপুজোর পাশাপাশি কৃষ্ণনগর ও চন্দননগরের জগদ্ধাত্রী পুজোতেও বইয়ের স্টল দেবেন সিপিএম নেতৃত্ব। দলের নেতাদের আশা, ওই দুই উৎসবে বই বিক্রির পরিমাণ এক লাফে অনেকটাই বেড়ে যাবে।
উৎসবের স্টলে এত সংখ্যক বই বিক্রি প্রসঙ্গে সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য তথা রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রী নেতা সুজন চক্রবর্তী বলেন, ‘‘আসলে এখনও বাংলার শিক্ষিত সমাজের মধ্যে বামপন্থার একটা আলাদা জায়গা রয়েছে। তৃণমূল-বিজেপি’র জমানায় নির্বাচন মেরুকরণের জাঁতাকলে আটকে পড়েছে। কিন্তু বই বিক্রির ক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে রাজ্যের মানুষের বিরাট অংশের আস্থা এখনও বামপন্থী দলগুলোর ওপর রয়েছে।’’