বিপর্যস্ত উত্তরাখণ্ডে আটকে প্রায় ২০০ বাঙালি, নিরাপদে ফিরিয়ে আনতে উদ্যোগী রাজ্য
টানা বৃষ্টি, ভূমি ধস, হড়পা বান। এককথায় প্রাকৃতিক দুর্যোগে বিপর্যস্ত উত্তরাখণ্ড। আর বেড়াতে গিয়ে সেখানেই আটকে পড়েছেন প্রায় ২০০ বাঙালি। কেউ নৈনিতাল, কেউ বা কৌশানি, কেউ আবার কেদারনাথ দর্শন সেরে নামার পথে। পরিস্থিতি এতটাই প্রতিকূল যে, উদ্ধারের কাজও গতি হারাচ্ছে বারবার। এই পরিস্থিতিতে রাজ্যের সব পর্যটককে নিরাপদে ঘরে ফিরিয়ে আনতে উদ্যোগী হয়েছে রাজ্য সরকার। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় রাজ্যের পর্যটনমন্ত্রী ইন্দ্রনীল সেনকে উদ্ধারকাজ তদারকির নির্দেশ দিয়েছেন। মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশক্রমে দিল্লিতে পশ্চিমবঙ্গের রেসিডেন্ট কমিশনার কৃষ্ণ গুপ্তও উত্তরাখণ্ড প্রশাসনের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ চালিয়ে যাচ্ছেন। প্রয়োজনমতো সব ব্যবস্থা করা হবে বলে আশ্বস্ত করেছেন তিনি।
পায়ের তলায় সর্ষে রাখা বাঙালি করোনার কারণে গত দেড় বছর ঘরবন্দি। বিধিনিষেধে শিথিলতা এবং পুজোর ছুটি একসঙ্গে মিলতে আর আটকে রাখা যায়নি তাদের। উত্তরাখণ্ডের নৈনিতাল, রানিখেত, আলমোড়া বরাবর বাঙানির পছন্দের তালিকায় উপরের দিকে। সঙ্গে তীর্থস্থান কেদারনাথ, বদ্রীনাথ তো রয়েইছে। সেখানে বেড়াতে গিয়েই বিপত্তি বাংলার প্রায় ২০০ পর্যটকের। রবিবার থেকে শুরু হওয়া বৃষ্টির জেরে নামে ভূমিধস। মঙ্গলবার সকালে হড়পা বান। নৈনিতাল বিচ্ছিন্ন। কৌশানির হোটেলে ফিরে গেলেও বিপদ এড়াতে পারেননি অনেকে। এঁদের মধ্যে অনেকে যেটুকু সময় ফোনের নেটওয়ার্ক পেয়েছেন, তার মধ্যেই লাইভ ভিডিও করে বা ফোন করে বিপদের কথা জানিয়ে সাহায্যের জন্য কাতর আবেদন করেছেন। বিষয়টি নজরে আসতেই তৎপর রাজ্য প্রশাসন।
জানা গিয়েছে, ওই পর্যটকরা মূলত কলকাতা ও সংলগ্ন শহরাঞ্চল, হাওড়া, হুগলি, উত্তর ২৪ পরগনার বাসিন্দা। নিউটাউনের জ্যাংড়া, হাতিয়াড়ার ১৪ জন ঘুরতে গিয়েছিলেন কৌশানি। সোমবার কৌশানির হোটেল থেকে বেরিয়ে কাঠগোদাম স্টেশনে যাওয়ার সময় প্রবল বৃষ্টিতে তাঁদের রাস্তার সামনের অংশ ধসে যায়। দীর্ঘক্ষণ সেখানে আটকে থাকার পর স্থানীয় গ্রামবাসীরা তাঁদের কোনওরকমে উদ্ধার করে নিজেদের বাড়িতে নিয়ে যায়। হুগলির চুঁচুড়ার ২৯ নম্বর ওয়ার্ডের বুড়োশিবতলার বাসিন্দা বিশ্বজিৎ রায় সপরিবারে গিয়েছিলেন উত্তরাখণ্ডে। কেদারনাথ, বদ্রীনাথ তীর্থ দর্শন করে ২৪ তারিখ তাঁদের ফেরার কথা ছিল। তাঁরা আটকে পড়েছেন কেদারনাথে। ব্যাপক ঝোড়ো হাওয়া, প্রবল বৃষ্টিতে অসহায় অবস্থার কথা বাড়ির লোকদের জানিয়েছেন তাঁরা। আলমোরা ঘুরে কাঠগোদাম আসার পথে কাচ্চিধাম এলাকায় ধসের কবলে পড়েছেন হাওড়ার কোনা, সালকিয়া এবং আমতা এলাকার ১৪ পর্যটক। যোশিমঠ থেকে হরিদ্বার ফেরার পথে আটকে পড়েছেন মহেশতলা ও বেহালার ৭ জন।
কবে তাঁরা ফিরতে পারবেন বাড়ি? এই উত্তরের অপেক্ষায় পর্যটকদের পরিবার এখন রাজ্য সরকারের দিকেই তাকিয়ে।