এবার বালিখাদানগুলির বহর বাড়ানোর উদ্যোগ নিল রাজ্য সরকার
রাজ্যের বালিখাদানগুলিতে অবৈধ কারবার রুখতে ইতিমধ্যেই পদক্ষেপ করেছে রাজ্য সরকার। বালি তোলার ক্ষেত্রে আনা হয়েছে আলাদা নীতি। রয়্যালটি বাবদ সঠিক অঙ্কের টাকা যাতে সরকারের ভাঁড়ারে আসে, তার জন্য ই-চালান ব্যবস্থা চালু হয়েছে। এই কাজের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে শিল্প দপ্তরের আওতায় থাকা ওয়েস্ট বেঙ্গল মিনারেল ডেভেলপমেন্ট অ্যান্ড ট্রেডিং কর্পোরেশনকে। তারাই এবার বালিখাদানগুলির বহর বাড়ানোর উদ্যোগ নিল। নতুন করে খাদান খুঁজে, তার থেকে বালি তোলার কাজ শুরু করতে চায় তারা। এরাজ্যে যে খাদানগুলি রয়েছে, সেগুলির আয়তন বড় জোর পাঁচ হেক্টর বা তার আশপাশে। খাদানগুলির বহর বাড়ানোর উদ্দেশ্যে এবার রাজ্যের সব বালিখাদানকে দু’টি ভাগে ভাগ করতে চায় তারা। একটি ভাগে থাকবে ২০ হেক্টর বা তার বেশি আয়তনের খাদান। অপর ভাগে খাদানগুলি থাকবে ২০ হেক্টরের নীচে। কর্পোরেশনের কর্তাদের দাবি, এতে যেমন খাদানগুলির ব্যবসায়িক গ্রহণযোগ্যতা আরও বাড়বে, তেমনই সরকারের রাজস্ব আদায় আরও ভালো হবে।
এরাজ্যে কমবেশি দু’হাজার বালিখাদান আছে। অনেক সময়েই অভিযোগ ওঠে, বালি তোলার কাজে কোনও স্বচ্ছতা নেই। এমনকী পরিবেশ রক্ষার বিষয়টিকেও বুড়ো আঙুল দেখানো হয় অনেক ক্ষেত্রে। এই অবৈধ কারবারে ক্ষতি সরকারেরও। অন্যদিকে, ছোট আকারের খাদানগুলির তুলনায় বড় খাদানের বালি তোলা অনেক বেশি লাভজনক। ওয়েস্ট বেঙ্গল মিনারেল ডেভেলপমেন্ট অ্যান্ড ট্রেডিং কর্পোরেশন সূত্রে খবর, নতুন করে যে খাদানগুলি চালু করার কাজ শুরু হয়েছে, সেখানে কারা খননকার্য চালাবে, তা বাছাই করার জন্য একটি তালিকা তৈরি করা হচ্ছে। এর ফলে যে সংস্থাগুলিকে বাছাই করা হবে, একমাত্র তারাই আগামী দিনে খাদানগুলির ই-অকশনে অংশ নেওয়ার অনুমতি পাবে। কর্পোরেশনের কর্তারা বলছেন, আমরা এই তালিকা তৈরি করার জন্য শুধুমাত্র এমন সংস্থা চাইনি, যারা বিরাট অঙ্কের কারবারে যুক্ত আছে। যে কোনও ছোট সংস্থাও সেই তালিকায় থাকতে পারবে।
তবে খননকাজে অভিজ্ঞতা আছে, এমন সংস্থাকেই আমরা তালিকায় রাখব। তাদের যে বালি তোলার কাজেই শুধুমাত্র অভিজ্ঞ হতে হবে, তা নয়, যে কোনও খননকাজের অভিজ্ঞতা হলেই চলবে। আগামী দিনে যে নতুন খাদানগুলি চিহ্নিত করা হবে, সেখানে প্যানেলভুক্ত নতুন সংস্থাগুলি নিলামে অংশ নিতে পারবে। পুরনো যে খাদানগুলির লিজ যার যার হাতে আছে, তারাই সেই কাজ চালিয়ে যাবে। তাদের চুক্তির মেয়াদ শেষ হয়ে গেলে, তখন নতুন করে খাদানগুলির নিলাম করা হবে। সেক্ষেত্রে তালিকাভূক্ত সংস্থাগুলি নিলামে অংশ নেওয়ার সুযোগ পাবেন, এমনটাই জানিয়েছেন কর্পোরেশনের কর্তারা।
এদিকে সরকার ই-চালান প্রক্রিয়া শুরু করায় বালির দাম খোলা বাজারে বাড়তে শুরু করেছে বলে অভিযোগ উঠেছে। ইমারতি কারবারের সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিরা বলছেন, পুজোর আগে থেকেই রাতারাতি প্রায় দ্বিগুণ হয়ে গিয়েছে পাইকারি বাজারের বালির দর। তার প্রভাব পড়তে শুরু করেছে নির্মাণ শিল্পে। আচমকা বালির দাম অনেকটা বেড়ে যাওয়ার আবাসন শিল্প রীতিমতো চাপে পড়েছে। বহু ক্ষেত্রে সঠিক গুণমানের বালি পাওয়া যাচ্ছে না বলেও অভিযোগ রয়েছে। সরকারকে সঠিক অঙ্কের রয়্যালটি দেওয়ার কারণে ইচ্ছাকৃতভাবেই এই দাম বাড়ানো হচ্ছে বলে অভিযোগ করছেন ইমারতি কারবারিরা।