অরুণাচল সীমান্তে বিপুল সমরসজ্জা ভারতের, মোতায়েন বোফর্স কামান
এবার আর লাদাখ নয়। দেশের অন্য প্রান্ত—অরুণাচল সীমান্তে। যাবতীয় আলোচনা বা আন্তর্জাতিক সহবতের পরোয়া না করে ফের আগ্রাসী লালফৌজ। আর তাই ভারতও চাইছে না এতটুকু রেয়াত করতে। সম্ভাব্য সবরকম পরিস্থিতির মোকাবিলা করতে হবে। এটাই নয়াদিল্লির লক্ষ্য। তাই গ্রাউন্ড জিরো এখন অরুণাচল সীমান্ত। তাওয়াংয়ে বিপুল সমরসজ্জা সেরে ফেলেছে ভারত। মোতায়েন করা হয়েছে বোফর্স কামান, এম ৭৭৭ আল্ট্রা লাইট হাউইৎজার, সিএইচ-৪৭এফ চিনুক চপার, এল-৭০ গানের মতো অত্যাধুনিক যুদ্ধ সরঞ্জাম। চলছে মহড়া। জওয়ানদের শারীরিক কসরৎও। চীন এক কদম এগলে ভারত যাতে তাদের দু’কদম পিছনে সরিয়ে দিতে পারে, জোরদার প্রস্তুতি চলছে তারই। তবে কম যাচ্ছে না চীনও। ভারতের এম ৭৭৭ আল্ট্রা লাইট হাউইৎজারের মোকাবিলায় অরুণাচল সীমান্তে একশোরও বেশি লং রেঞ্জ রকেট লঞ্চার মোতায়েন করেছে লালফৌজ। সব মিলিয়ে, উত্তর-পূর্বে এখন পুরোদস্তুর যুদ্ধের মহড়া দু’পক্ষের।
কিছুদিন আগেই অরুণাচল সীমান্ত লাগোয়া ভারতীয় ভূখণ্ডে ঢুকে পড়ে বেশ কয়েকজন চীনা সেনা। মুখের উপর জবাব দেয় ভারতীয় বাহিনীও। তারপর থেকেই কারণে-অকারণে সীমান্তে গতিবিধি বাড়িয়েছে লালফৌজ। তারই পাল্টা জবাব দিতে উত্তর-পূর্বে ভারতের এই সমরসজ্জা বলে মনে করা হচ্ছে। বৃহস্পতিবার তারই অঙ্গ হিসেবে ভারতীয় সেনার কার্যত ‘যুদ্ধ-মহড়া’ দেখল তাওয়াং সেক্টরের পাহাড়ি এলাকা। মহড়াতে অংশ নেয় সেনার ‘অ্যান্টি ট্যাঙ্ক স্কোয়াড বাহিনী’। এলাকাটি একেবারে চীনের নাকের ডগায়। কীভাবে কঠিন বর্মে মোড়া লক্ষ্যবস্তুকে নিকেশ করা যায়, তারই কৌশল ঝালিয়ে নিয়েছে বাহিনী। প্রকাশ্যে এসেছে মহড়ার একটি ভিডিও ফুটেজও। সেখানে দেখা যাচ্ছে, কুয়াশাচ্ছন্ন সীমান্ত ঘেঁষা পাহাড়ি পথ। বাঙ্কারে থাকা জওয়ানরা বেরিয়ে এসে দ্রুত কামান বসাচ্ছেন। কামানের মুখ তাক করা রাস্তার দিকে। এক জওয়ানকে বলতে শোনা যাচ্ছে, ‘আমি রেডিও টেলিফোনিক পদ্ধতির মাধ্যমে পুরো ডেমো প্রক্রিয়াটিকে অনুকরণ করছি। সঙ্গে রয়েছে ট্যাঙ্ক-বিরোধী গাইডেড মিসাইল টিম। তারা এখন কীভাবে ট্যাঙ্ককে লক্ষ্য করে ক্ষেপণাস্ত্র উৎক্ষেপণ করে, সেটা আপনি দেখতে পাবেন।’ বাঙ্কারের পাশে দাঁড়িয়ে রেডিও টেলিফোনিক পদ্ধতি নিয়ন্ত্রণ করতে দেখা যাচ্ছে এক সেনা অফিসারকে।
সেনা সূত্রে খবর, মাস দুয়েক আগে থেকেই উত্তর-পূর্বের সীমান্তে সমরসজ্জা বাড়ানো হচ্ছে। অতি সম্প্রতি ‘ফরওয়ার্ড পজিশন’-এ বোফর্স কামান, অ্যান্ডি এয়ারক্র্যাফ্ট গান এল-৭০ সহ প্রচুর অত্যাধুনিক অস্ত্র ও সামরিক যান মোতায়েন করা হয়েছে। এছাড়াও ইলেক্ট্রো অপটিক সেন্সর, থার্মাল ইমেজিং পাওয়ারের মতো প্রযুক্তিকেও কাজে লাগানো হচ্ছে মহড়ায়। সেনার এক আধিকারিক জানিয়েছেন, এল-৭০ গানের প্রযুক্তিগত বিবর্তন ঘটানো হয়েছে। এখন মানবহীন যে কোনও ড্রোনকে নিখুঁত নিশানায় নামিয়ে আনতে সক্ষম এই যুদ্ধাস্ত্র। ভারতের এমন প্রস্তুতি দেখে বেজিংও বেশ চাপে। চীনের একটি দৈনিকের খবর, অরুণাচল সীমান্ত লাগোয়া লং রেঞ্জ রকেট লঞ্চারকে শামিল করেছে চীন। যা ভারতের এম ৭৭৭ আল্ট্রা লাইট হাউইৎজারের দ্বিগুণ ক্ষমতাশালী বলে লালফৌজের দাবি।