কেন ২১ অক্টোবরে লালকেল্লায় জাতীয় পতাকা উত্তোলন করলেন না মোদী? কটাক্ষ বিজেপি নেতার
২১ অক্টোবর আজাদ হিন্দ সরকারের প্রতিষ্ঠা দিবসে লালকেল্লায় ফি বছর জাতীয় পতাকা তোলা উচিত সরকারের। তা না করলে ১৫ আগস্ট স্বাধীনতা দিবসে এই ঐতিহাসিক সৌধে দাঁড়িয়ে তেরঙ্গা উত্তোলনের অধিকার কারও নেই। বৃহস্পতিবার প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর উদ্দেশে এমনই চাঁচাছোলা ভাষায় লালকেল্লায় দাঁড়িয়ে তোপ দাগলেন নেতাজি সুভাষচন্দ্রের নাতি চন্দ্রকুমার বসু। প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশে দেওয়া তাঁর এই ভাষণের সময় সরকারি অনুষ্ঠান মঞ্চে ছিলেন সংস্কৃতি মন্ত্রকের দুই রাষ্ট্রমন্ত্রী অর্জুনরাম মেঘওয়াল এবং মীনাক্ষী লেখি। অনুষ্ঠান শেষে মীনাক্ষীদেবী চন্দ্রবাবুর সঙ্গে একান্ত আলাপচারিতায় ফি বছর ২১ অক্টোবর লালকেল্লায় জাতীয় পতাকা উত্তোলনের বিষয়টি সরকার গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনা করবে বলে আশ্বাস দেন।
নেতাজির স্বপ্নের আজাদ হিন্দ সরকারের (আইএনএ) প্রতিষ্ঠা দিবসকে মান্যতা দেওয়ার ক্ষেত্রে মোদী সরকারই প্রথম উদ্যোগ নেয় তিনবছর আগে ২০১৮ সালে। বসু পরিবার এবং অগণিত নেতাজি অনুগামীর আবেগকে মর্যাদা দিয়ে আইএনএ সরকারের ৭৫তম প্রতিষ্ঠা দিবসের অনুষ্ঠান মহা সমারোহে পালন করে তারা। স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী সে বছর ২১ অক্টোবর লালকেল্লায় গিয়ে তেরঙ্গা উত্তোলন করে দেশের ‘প্রথম স্বাধীন সরকার’-কে স্বীকৃতি দেন। তার পরের বছর ছিল লোকসভার ভোট। সেই ভোটে বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে দ্বিতীয়বারের জন্য বিজেপির ক্ষমতায় আসার পিছনে মোদীর লালকেল্লার সেই কর্মসূচি বকলমে অনেকটাই ভূমিকা পালন করেছে বলে মনে করে রাজনৈতিক মহল। কিন্তু ভোট হয়ে যাওয়ার পরই ২০১৯ সাল থেকে লালকেল্লায় এই দিনটিতে সরকারি স্তরে অনুষ্ঠান হলেও তার গুরুত্ব অনেক কমে যায়। প্রধানমন্ত্রীও আর অংশ নেননি তাতে। এনিয়ে বসু পরিবার এবং নেতাজি অনুগামীদের মধ্যে এক ধরনের ক্ষোভ ও হতাশা তৈরি হয়। এবছরও যাতে মোদী এই অনুষ্ঠানে এসে এদিন তেরঙ্গ উত্তোলন করেন তার জন্য পরিবারের তরফে চন্দ্রবাবু প্রধানমন্ত্রী-সহ কেন্দ্রের একাধিক মন্ত্রীকে চিঠি লেখেন। নিদেনপক্ষে রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দ যাতে এই অনুষ্ঠানে এসে তার গুরুত্ব বৃদ্ধি করেন তার জন্যও আর্জি জানান তিনি। যদিও তাঁদের এই আর্জি প্রধানমন্ত্রী বা সরকারের কাছে আমল পায়নি।
আইএনএ দিবস পালনের গুরুত্ব হ্রাসের বিষয়টি মনেপ্রাণে মেনে নিতে পারেননি চন্দ্রবাবুরা। এদিন সংস্কৃতি মন্ত্রকের তরফে লালকেল্লায় যে সংক্ষিপ্ত অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয় সেখানে তাঁকে আমন্ত্রণ জানানো হয় অন্যতম বক্তা হিসেবে। গোড়ায় তাতে অংশ না নেওয়ার কথাই ভেবেছিলেন তিনি প্রতিবাদ হিসেবে। পরে মত বদল করেন। অনুষ্ঠান মঞ্চের পূর্ণ সুযোগ কাজে লাগিয়ে মনের ক্ষোভ উগরে দেন মার্জিত ভাষায়। তিনি বলেন, নেতাজি ছিলেন দেশের সর্বোত্তম দেশপ্রেমিক। নেতাজির হাতে তৈরি আজাদ হিন্দ বাহিনীর ৬০ হাজারের মধ্যে ২৬ হাজার বীর সেনা স্বাধীনতার জন্য জীবন দিয়েছেন। ৭৫তম প্রতিষ্ঠা দিবসে প্রধানমন্ত্রী মোদীর নেতৃত্বে সেই স্বীকৃতি মিলেছিল লালকেল্লায় তেরঙ্গা উত্তোলনের মাধ্যমে। কিন্তু তারপর সেই কর্মসূচি আর হয়নি। মনে রাখা দরকার, ২১ অক্টোবরে না তুললে ১৫ আগস্ট লালকেল্লায় কারও জাতীয় পতাকা উত্তোলনের অধিকার থাকে না।