উত্তরবঙ্গ বিভাগে ফিরে যান

প্রাকৃতিক দূর্যোগে দার্জিলিং-কালিম্পং জেলায় ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ ৪০০ কোটি

October 24, 2021 | 2 min read

ধসে নিখোঁজ দার্জিলিংয়ের মহকুমা শাসকের বাংলোর হোমগার্ড সুমন থাপার(৫৫) মৃতদেহ উদ্ধার হল। চার দিন ধরে তল্লাশি অভিযান চালিয়ে শনিবার ওই মৃতদেহ উদ্ধার করেছে প্রশাসন। অন্যদিকে, প্রকৃতিক দুর্যোগে দার্জিলিং ও কালিম্পং জেলায় প্রাথমিক ভাবে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে প্রায় ৪০০ কোটি টাকা। তা বেড়ে ৭০০ কোটি টাকার মতো হতে পারে বলে প্রশাসনের আধিকারিকদের ধারণা। তবে, দুর্যোগ কাটার পরও দুই জেলায় ত্রাণ শিবিরে রয়েছে বহু মানুষ। প্রশাসনের আধিকারিকরা অবশ্য বলেন, বিপর্যয়ের পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক হয়েছে। পুনর্গঠনের কাজ শুরু হয়েছে। 


চার দিন আগে মঙ্গলবার রাতে ধসের কবলে পড়ে দার্জিলিং সদরের মহকুমা শাসকের বাংলো। তখন কাছারি রোডের সেই বাংলোয় কর্মরত ছিলেন ওই হোমগার্ড। রাতেই তিনি নিখোঁজ হন। বুধবার সকাল থেকে তাঁর খোঁজে যৌথভাবে তল্লাশি অভিযানে নামে দমকল, সিভিল ডিফেন্স, পুলিস এবং এনডিআরএফ বাহিনী। তাঁদেরকে সহযোগিতা করেছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, টানা চার দিন ধরে কাছারি রোডের সেই বাংলো থেকে পাহাড়ের ঢাল বেয়ে কয়েকশো মিটার নিচ পর্যন্ত তল্লাশি অভিযান চালানো হয়। বালি, পাথর, কাদা, পাথরের স্তূপ, কংক্রিটের দেওয়ালের ধ্বংসাবশেষ সরিয়ে এদিন ওই হোমগার্ডের মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়। এদিন মৃতদেহ ময়নাতদন্তের পর সুমনের পরিবারের সদস্যদের হাতে তা তুলে দেওয়া হয়। রংলিরংলিয়ট চা বাগান এলাকায় মৃতের বাড়ি। তাঁর স্ত্রী ও দুই ছেলেমেয়ে বর্তমান। দার্জিলিংয়ের জেলাশাসক এস পুন্নমবালম বলেন, চার দিন ধরে তল্লাশি অভিযান চালিয়ে ওই হোমগার্ডের মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। বিপর্যয়  ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ দপ্তরের নিয়ম অনুসারে মৃতের পরিবারের সদস্যদের এক্সগ্রাশিয়া হিসাবে দু’লক্ষ টাকা প্রদান করা হবে। 

এদিকে, নিম্নচাপের জেরে সোম থেকে বুধবার পর্যন্ত হওয়া প্রাকৃতিক দুর্যোগে দার্জিলিং ও কালিম্পং পাহাড়ে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, শুধুমাত্র দার্জিলিং জেলার পাহাড় ও সমতলে প্রাথমিকভাবে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৩৫০কোটি টাকা। এই তালিকায় আংশিক ও সম্পূর্ণভাবে ক্ষতিগ্রস্ত ১৫০০টি বাড়ি, ৯০টি রাস্তা, দার্জিলিংয়ের এসডিও’র বাংলো, মিরিক এসডিও’র বাংলো চত্বর, শিলিগুড়িতে ৭০০ হেক্টোর জমির ধান, শিলিগুড়িতে মহানন্দা ও বালাসন নদীর বাঁধের ৪০০০ মিটার অংশ প্রভৃতি রয়েছে। এর বাইরে অনেক রাস্তার গার্ডওয়াল, কালভার্ট, সেতু, পানীয় জলের কল, বিদ্যুতের খুঁটি, অর্কিড ও কমলালেবুর বাগান ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। গরু, শুয়োর, মুরগি, হাঁস সহ কিছু গবাদিপশুরও মৃত্যু হয়েছে। সেইসব ক্ষয়ক্ষতির হিসাব এখনও তৈরি হয়নি। 


প্রশাসনের আধিকারিকদের ধারণা, তিন দিনের বৃষ্টি ও ধসে সবমিলিয়ে এই জেলায় ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ বেড়ে ৭০০ কোটির আশপাশে দাঁড়াতে পারে। দার্জিলিংয়ের জেলাশাসক অবশ্য বলেন, বৃষ্টি ও ধসে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নির্ধারণ করার কাজ চলছে। তা শেষ না হওয়া পর্যন্ত এব্যাপারে নিশ্চিতভাবে কিছু বলা সম্ভব নয়। 


তিন দিনের বিপর্যয়য়ে কালিম্পং জেলাতেও প্রচুর রাস্তা, শতাধিক বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, প্রাথমিক ভাবে এই জেলাতেও ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ প্রায় ৫০ কোটির আশপাশে। এই ক্ষতির পরিমাণ আরও বাড়তে পারে। প্রশাসনের আধিকারিরা জানান, দুর্যোগে দুই জেলায় ক্ষতির পরিমাণ ৭৫০ কোটি টাকার কাছাকাছি দাঁড়াতে পারে। 


এদিকে, দার্জিলিং পাহাড়ে এখনও বহু দুর্গত মানুষ ত্রাণ শিবিরে রয়েছেন। প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, এবার জেলায় দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন প্রায় ১৩ হাজার মানুষ। এখনও পাহাড়ে চালু রয়েছে ১৬টি ত্রাণ শিবির। তাতে আশ্রয় নিয়ে আছেন ২২০ জন। তবে, এবারের বিপর্যয়ে প্রাণ হানির ঘটনা তেমন হয়নি। প্রশাসনের আধিকারিকদের দাবি, আবহাওয়ার পূর্বাভাস মেলার পরই ধস প্রবণ এলাকা থেকে বহু মানুষকে নিরাপদ জায়গায় স্থানান্তরিত করা সম্ভব হয়েছে। তাই বিপর্যয়ে প্রাণহানি রোখা সম্ভব হয়েছে। 

TwitterFacebookWhatsAppEmailShare

#West Bengal, #Darjeeling, #Kalimpong, #Natural calamity

আরো দেখুন