বাধার মধ্যেই ‘পিপলস্ চার্জশিট’ কর্মসূচি সামনে রেখে গোয়া নির্বাচনে ঝাঁপাল তৃণমূল
বাংলায় বিজেপিকে পর্যুদস্ত করার পর উত্তর-পূর্ব ভারতের পাশাপাশি দেশের পশ্চিমাঞ্চলের দিকেও নজর দিয়েছে তৃণমূল। বিজেপিশাসিত রাজ্যগুলিই প্রথম টার্গেট তৃণমূলের। তাই ত্রিপুরার পর পশ্চিমের গোয়াকে টার্গেট করেছে তৃণমূল। হঠাৎ করে নয়, সাত ইস্যুকে সামনে রেখে জেনে-বুঝেই গোয়া দখলে ঝাঁপিয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ব্রিগেড।
এর আগে আজ গোয়া কর্তৃপক্ষ হঠাৎ তৃণমূলের কর্মসূচির বাধা দেয়। তৃণমূলের পক্ষ থেকে অভিযোগ জানানো হয় যে চারদিন আগে অনুমতি দেওয়ার পরও হঠাৎ করেই অনুমতি বাতিল করা হয়েছে। তাই পানাজির আজাদ ময়দানে ধর্নায় বসে গোয়া তৃণমূল নেতারা। ২০২২-এর ফেব্রুয়ারিতে ভোট। তার লক্ষ্যে তৃণমূল এখন থেকেই প্রচার শুরু করে দিতে চাইছে। সোমবার থেকেই আনুষ্ঠানিকভাবে প্রচার শুরু করল তৃণমূল। এদিন দুপুরে গোয়ার রাজধানী পানাজিতে পিপলস্ চার্জশিট কর্মসূচিতে ছিলেন তৃণমূল সাংসদ সৌগত রায়, মহুয়া মৈত্র ও প্রাক্তন কেন্দ্রীয়মন্ত্রী বাবুল সুপ্রিয়।
ইতিমধ্যে গোয়ায় কংগ্রেসকে ভেঙে তছনছ করে দিয়েছে তৃণমূল। তিনমাস পরে নির্বাচন, তার আগে এই স্বল্প সময়ের মধ্যে বিজেপির চ্যালেঞ্জার হয়ে ওঠাই তাদের প্রাথমিক লক্ষ্য। আর সময় যেহেতু স্বল্প পুরো তৃণমূল ঝাঁপিয়ে পড়েছে পশ্চিম ভারতের ছোট রাজ্য গোয়ায়। এমনকী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও ২৮ অক্টোবরে আসছেন গোয়া অভিযানে।
বিজেপির বিরুদ্ধে প্রথম বাণ- ভ্যাকসিন। তৃণমূল কোন কোন ইস্যুতে গোয়ার বিজেপি সরকারের বিরোধিতা করবে এবং যে যে ইস্যু নিয়ে গোয়ায় মানুষের কাছে যাবে, সেই সাত দফা ইস্যু নির্বাচন করেছে তৃণমূল কংগ্রেস। এই ইস্যুগুলির মধ্যে রয়েছে- গোয়ার মানুষ ভ্যাকসিনের দ্বিতীয় ডোজ পাননি। ভ্যাকসিন পেয়েছে বলে যে সংখ্যা দেখানো হচ্ছে, তা আসলে পরিযায়ী ও পর্যটকদের সংখ্যা ধরে।
তৃণমূলের দ্বিতীয় ইস্যু হবে রাজ্যের আইন-শৃঙ্খলা বিজেপি সরকারের বিরুদ্ধে তৃণমূলের দ্বিতীয় ইস্যু হবে রাজ্যের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি। গোয়ার আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি অত্যন্ত খারাপ বলে অভিযোগ করে তৃণমূল। তাই এই ইস্যু গুরুত্ব সহকারে রাখা হয়েছে তৃণমূলের অ্যাজেন্ডায়। তৃণমূলের মতে, বিজেপিশাসিত সরকার ৮৬ শতাংশ তদন্তে সাফল্য পেয়েছে বলে যে দাবি করে তা সর্বৈব মিথ্যা। অপরাধ আটাকানো যায়নি এখানে, মহিলালারাও নিরাপদ নয় গোয়ায়।
এছাড়া তৃণমূল তৃতীয় ইস্যু করছে, কর্মসংস্থানে নজর নেই বিজেপির। চাকরি হয়েছে বলে দাবি করা হচ্ছে, তা সঠিক নয়। চতুর্থ ইস্যু করা হচ্ছে, পানীয় জলসংকটকে। পঞ্চম ইস্যু হবে- বাংলায় যখন লক্ষ্মীর ভাণ্ডারের টাকা পৌঁছে গিয়েছে, তখন গোয়ায় একাধিক সামাজিক প্রকল্পের সুবিধা মিলছে না। ষষ্ঠ ইস্যু হবে- রাজ্যের অর্থনৈতিক হাল খুব খারাপ। তারা সিএজি রিপোর্টকে হাতিয়ার করতে চাইছে। আর সপ্তম ইস্যু হিসেবে উঠে আসছে- সিদ্ধি নায়ক খুনের ঘটনা। এই সাত ইস্যুকে সামনে রেখেই লড়বে তৃণমূল।
২০১৭ সালের নির্বাচনে গোয়ায় কংগ্রেস ছিল বৃহত্তম দল। ৪০ আসনের গোয়ায় কংগ্রেস জিতেছিল ১৭ আসনে। আর বিজেপি পেয়েছিল ১৩টি আসন। বিজেপি দলবদলের খেলা চালিয়ে কংগ্রেসকে ভেঙে সরকার গঠন করে। বর্তমানে গোয়ায় বিজেপি ১৩ থেকে বেড়ে ২৭ হয়ে গিয়েছে। কংগ্রেস ১৭ থেকে কমে ৫। কংগ্রেসের এই ব্যর্থতাকেই তুলে ধরে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দল গোয়ায় সাম্রাজ্য বিস্তার করতে চাইছে। তারা বোঝাতে চাইছে কংগ্রেসের ক্ষমতা নেই বিজেপির চোখে চোখ রেখে লড়াই করার, সেটা পারে তৃণমূলই। তাই তৃণমূলই এখানে আসল কংগ্রেস। সেইমতো নির্দিষ্ট লক্ষ্য নিয়েই গোয়ায় যাচ্ছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।