আব্বাসের সাথে সেলিমের অটুট সম্পর্কে বিপাকে আলিমুদ্দিন
যেমনটা ভাবা হয়েছিল তেমনটাই হচ্ছে। ব্রিগেডের মঞ্চে যেমন ভাইজানকে গলা জড়িয়ে ধরেছিলেন মহম্মদ সেলিমরা, দলের সম্মেলন মঞ্চে আব্বাস সিদ্দিকীকে নিয়ে আলিমুদ্দিনের একাংশের নেতার সেই গদগদ ভাবকেই তীব্র সমালোচনায় বিঁধছেন শাখাস্তরের কর্মীরা (CPIM)। তাঁদের সাফ কথা, কংগ্রেসের সঙ্গে জোট করা দলের পায়ে গোদের মতো ফুলে ছিল, তার উপর বিষফোড়া হয়ে উঠেছিল আইএসএফ।
সেপ্টেম্বর মাস জুড়ে সিপিএমের শাখাস্তরের সম্মেলন চলেছে। থেকে শুরু হয়েছে এরিয়া কমিটির সম্মেলন। দেখা যাচ্ছে কোচবিহার থেকে কাকদ্বীপ পর্যন্ত, জেলায় জেলায় এরিয়া কমিটির সম্মেলনগুলিতে জোট রাজনীতি নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন নিচুতলার নেতারা। আর সেই সমালোচনায় কংগ্রেসের সঙ্গে জোট যেমন রয়েছে তেমনই এবার বর্শাফলক হয়ে উঠেছে আইএসএফ তথা আব্বাস সিদ্দিকি।
সিপিএম সূত্রে জানা গিয়েছে, জেলাস্তরের নেতারা গিয়ে বোঝানোর আপ্রাণ চেষ্টা করছেন, আইএসএফ আসলে ধর্মনিরপেক্ষ। এও বোঝানো চলছে, আব্বাস ধর্মগুরু হলেও তাঁর মুখ দিয়ে সব অংশের গরিব ও অনগ্রসর মানুষের অংশীদারিত্বের দাবির কথা বলিয়ে নেওয়া গিয়েছে।
কিন্তু সিপিএমের নিচুতলার সিংহভাগ কর্মী মনে করছেন, এসব আসলে বলার জন্য বলা। যে ভাবে মানুষ প্রত্যাখ্যান করেছে ভোট বাক্সে তাতে স্পষ্ট, ধর্মনিরপেক্ষ হিসেবে মানুষ কখনওই আব্বাস ও তাঁর নতুন গজানো দলের সঙ্গে জোটকে গ্রহণ করেনি। সিপিএমের একটা বড় অংশ এও মনে করছে, শুধুমাত্র ভোটের অঙ্ক কষে এই রকম একটা ‘মৌলবাদী’ মানুষকে ধর্মনিরেপক্ষ হিসেবে তুলে ধরা আসলে তঞ্চকতা ছিল। হাওড়ার একটি সম্মেলনে এক মহিলা নেত্রী সম্পাদকীয় খসড়া প্রতিবেদনের উপর আলোচনা করতে উঠে বলেছেন, “আব্বাসকে মেকআপ করিয়ে ধর্মনিরপেক্ষতার পরাকাষ্ঠা সাজানো হয়েছিল। কিন্তু বাংলাদেশের ঘটনার পর সেই মেকআপ খসে পড়েছে। ম্যানুফ্যাকচারড সেকুলাররা এরকমই হন।”
আব্বাসের প্রশ্নে দলের পলিটব্যুরোর সদস্য মহম্মদ সেলিমকে নিচুতলার কর্মীরা সবচেয়ে বেশি আক্রমণ শানাচ্ছেন বলে সিপিএমের বিভিন্ন জেলার এরিয়া স্তরের সম্মেলন থেকে খবর মিলছে। বহু জায়গায় সম্মেলন চলছে মধ্যরাত পর্যন্ত। দলের অভ্যন্তরীণ গণতন্ত্র মেনে ভোটাভুটিও চলছে দেদার। অনেক জায়গায় বিদায়ী কমিটির দীর্ঘদিনের নেতারা হেরে যাচ্ছেন। সেখানে জায়গা করে নিচ্ছেন নতুনরা। পর্যবেক্ষকদের মতে, এটা সিপিএমের সাংগঠনিক কাঠামোর ক্ষেত্রে স্বাস্থ্যকর হলেও জেলা ও আলিমুদ্দিন স্ট্রিটের নেতাদের জন্য বেশ বিড়ম্বনার। কারণ এর প্রভাব জেলা সম্মেলনেও পড়তে পারে। যা মুখ বুজে শুনতে হবে রাজ্য নেতাদের।