ই-শ্রম পোর্টালে নাম তোলায় দেশের অগ্রণী বাংলা
অসংগঠিত ক্ষেত্রের শ্রমিকদের সংখ্যা সহ তাদের বর্তমান পেশার হাল-হকিকৎ সম্পর্কে ওয়াকিবহাল হওয়ার জন্য কেন্দ্রের নরেন্দ্র মোদী সরকারের সদ্য চালু করেছে তথ্যসমৃদ্ধ ই-শ্রম পোর্টাল। সেই পোর্টালে এবার দেশের সব রাজ্যকে টপকে নাম নথিভুক্তির তালিকায় এক নম্বরে উঠে মমতা বন্দ্যাপাধ্যায়ের সরকার পরিচালিত বাংলা। শনিবার পর্যন্ত এই পোর্টালে রাজ্যের ১ কোটি ৩১ লক্ষেরও বেশি শ্রমিক নাম লিখিয়েছে তাদের বিশদ তথ্য জানিয়ে। বাংলার কোটায় কেন্দ্র সাকুল্যে ২ কোটি ৭৮ লক্ষ শ্রমিকের নাম নথিভুক্ত করানোর লক্ষ্যমাত্রা বেঁধে দিয়েছে। কোটির সংখ্যা ছাড়ানোর নিরিখে বাংলার পর আর মাত্র একটি রাজ্যই রয়েছে। তা হল ওড়িশা। পোর্টাল চালু হওয়ার দু’মাসের মধ্যে সারা দেশে এদিন পর্যন্ত প্রায় ৫ কোটি ৬৭ লক্ষ নাম নথিভুক্ত হয়েছে। আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে ১০ কোটি নাম এই পোর্টালে তোলার টার্গেট নিয়ে এগচ্ছে কেন্দ্র।
নাম তোলার যে পরিসংখ্যান এ পর্যন্ত কেন্দ্রীয় শ্রমমন্ত্রকের হাতে এসেছে, তাতে একটি বিষয়ে বেশ উদ্বেগে রয়েছেন সরকারি আধিকারিকরা। লকডাউনের জেরে দেশের পরিযায়ী শ্রমিকদের দুর্দশার পরিপ্রেক্ষিতে সুপ্রিমকোর্টের গুঁতোয় এই তথ্যভাণ্ডার তৈরির উদ্যোগ নেয় মোদী সরকার। কিন্তু নথিভুক্ত হওয়া তথ্য বলছে, মাত্র ২.৩৯ শতাংশ শ্রমিক নিজেদের পরিযায়ী বলে উল্লেখ করেছে। প্রায় ৫৫ শতাংশ শ্রমিক নিজেদের কৃষিকাজের সঙ্গে যুক্ত থাকার কথা জানিয়েছে। এছাড়া নির্মাণকাজ ও গৃহস্থালির কাজকর্মের সঙ্গে যুক্ত থাকার কথা বলেছে যথাক্রমে ১২.৬৩ ও ৮.৩৬ শতাংশ শ্রমিক। বাকি অংশ বিভিন্ন ধরনের পেশার কথা উল্লেখ করেছে তাদের নামের সঙ্গে।
পরিসংখ্যান যাচাই করে আরও একটি বিষয় যথেষ্ট উল্লেখযোগ্য বলে শ্রমমন্ত্রকের আধিকারিকরা জানিয়েছেন। তা হল, নাম নথিভুক্তির ব্যাপারে মহিলাদের উৎসাহ। এ পর্যন্ত যা নাম নথিভুক্ত হয়েছে তার অর্ধেকের সামান্য কিছু বেশি সংখ্যা দখল করেছে মহিলারা। প্রায় অর্ধেক রয়েছে পুরুষের নাম। গোটা দেশের প্রাথমিকভাবে কৃষি, বিভিন্ন ধরনের পরিষেবা ও শ্রমনির্ভর কাজের সঙ্গে যুক্ত অসংগঠিত ক্ষেত্রের প্রায় সাড়ে ৩৮ কোটি শ্রমিকের নাম ওই পোর্টালে নথিভুক্ত করার টার্গেট নিয়ে এগচ্ছে কেন্দ্র। কিন্তু ১৬ থেকে ৬০ বছর বয়সের সীমারেখার মধ্যে এত সংখ্যক মহিলা যে নিজেদের অসংগঠিত শ্রমিক হিসেবে দাবি করে পোর্টালে নাম লেখাবে, তা গোড়ায় মন্ত্রকের কল্পনায় ছিল না। মন্ত্রকের কর্তাদের অবশ্য বক্তব্য, গৃহস্থালী (ডোমেস্টিক ওয়ার্ক) এবং কৃষিকাজের মতো দুটি পেশাকেও সরকার অসংগঠিত শ্রমিক হিসেবে মর্যাদা দিয়ে কিছু সামাজিক সুরক্ষার সুযোগ-সুবিধা দেওয়ার কথা ঘোষণা করায় মহিলাদের মধ্যে এই উৎসাহ তৈরি হয়েছে। উল্লেখ্য, ই-শ্রম পোর্টালে নথিভুক্ত শ্রমিক-কর্মচারীরা ২ লক্ষ টাকার দুর্ঘটনাজনিত মৃত্যু বিমার আওতায় থাকবে বলে ইতিমধ্যেই কেন্দ্র ঘোষণা করেছে। এছাড়া আগামীদিনে বিভিন্ন সময়ে কেন্দ্রের তরফে নানাবিধ প্রকল্পের সুবিধা তারা পাবে।