রাজ্য বিভাগে ফিরে যান

দীপাবলি উপলক্ষে ১৫ লক্ষ মোমবাতি তৈরি করলেন দৃষ্টিহীনরা

November 3, 2021 | 2 min read

৮ টন প্যারাফিন ওয়াক্স বা মোম দিয়ে প্রায় ১৫লক্ষ দীপাবলির মোমবাতি তৈরি করলেন সুতাহাটার চৈতন্যপুরের ১০জন দৃষ্টিহীন যুবক। মনের আলো দিয়ে তৈরি তাঁদের এই মোমবাতিতে উদ্ভাসিত হবে শিল্পশহর হলদিয়ার দীপাবলি। করোনা বিপর্যয়ের মধ্যেও দৃষ্টিহীনদের তৈরি এই মোমবাতির চাহিদা এতটুকু কমেনি। বরং আগের চেয়ে চৈতন্যপুরের দৃষ্টিহীনদের মোমবাতির কদর বেড়েছে করোনার পর। এবার শিল্পশহর ছাড়িয়ে সারা পূর্ব মেদিনীপুর জেলাজুড়ে ছড়িয়েছে তাঁদের মোমবাতি। দূষণ ঠেকাতে দৃষ্টিহীনদের তৈরি মোমবাতিতেই এবার দীপাবলি উদযাপনে আগ্রহ বেশি হলদিয়াবাসীর।

চৈতন্যপুর বিবেকানন্দ মিশন আবাসিক দৃষ্টিহীন পুনর্বাসন কেন্দ্রে দীপাবলির মোমবাতি তৈরি শুরু হয় মাসচারেক আগে জুলাই মাসে। এবার ঘনঘন প্রাকৃতিক বিপর্যয়, করোনার প্রকোপ ও অতি বৃষ্টির ফলে জলমগ্ন হওয়ায় কাজকর্ম ব্যাহত হয়েছে। তবু দৃষ্টিহীন যুবকদের নাছোড় মনোভাবের জন্য অন্যান্য বারের চেয়ে এবার বাড়তি মোমবাতি তৈরি সম্ভব হয়েছে। তাঁরা মিশনে পড়াশোনার পর স্বনির্ভর হওয়ার তাগিদে হাতের কাজ শিখে মোমবাতি তৈরি শুরু করেন। গত চার মাস দীপাবলির মোমবাতি জোগান দিতে সঞ্জয় দোলাই, কার্তিক সানকিদের সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত চলত একটানা লড়াই চলে। রেডিওতে গান চালিয়ে কাজে মগ্ন সবাই। কেউ বড় কড়াইয়ে প্যারাফিন তরল করছেন, তারপর তা মগে করে এনে ঢালছেন মেশিনে। কিছুক্ষণ পর ছাঁচ থেকে বেরিয়ে আসছে ধপধপে সাদা নানা আকারের মোমবাতি।

পুনর্বাসন কেন্দ্রের ম্যানেজার প্রভাস সামন্ত বলেন, এবার করোনার জন্য বাজার কেমন হবে তা নিয়ে সংশয় ছিল। কিন্তু এবারই দেখলাম হলদিয়া ছাড়িয়ে কোলাঘাট, নন্দীগ্রাম ও জেলার বিভিন্ন জায়গা থেকে পাইকেররা এসে প্যাকেট মোমবাতি কিনে নিয়ে যাচ্ছেন। বাজি বিক্রি নিয়ে আইনি জটিলতা থাকায় ব্যবসায়ীরা মোমবাতির উপর জোর দিয়েছেন। এবার প্রায় ৮টন প্যারাফিন দিয়ে ৫০হাজার প্যাকেট মোমবাতি তৈরি হয়েছে। এর দাম ২৪টাকা থেকে ৬০টাকা পর্যন্ত। দৃষ্টিহীন যুবকরা বলেন, বছরের পর বছর ধরে দীপাবলির মোমবাতি তৈরি করছি। আলো জ্বালিয়ে সবাই যখন আনন্দ করে, তখন খুশির আলোয় ভরে ওঠে আমাদের মন।

মোমবাতির চাহিদা বাড়লেও করোনার জন্য এবার মহিষাদলের পিতলের তৈরি কালী প্রতিমা বা চৈতন্যপুরে মাটির ছাঁচের কালী প্রতিমার চাহিদা কম। মহিষাদলের গড়কমলপুরের ঘাঘরা এলাকায় রয়েছে পিতল কাঁসা শিল্পীদের বসবাস। বাড়ির সামনেই ঝকঝকে দোকানে সার দিয়ে সাজানো রয়েছে নানা আকৃতির কালীপ্রতিমা। বিভিন্ন ধরনের প্রতিমার মূর্তি তৈরিতে নাম রয়েছে উত্তম রানার। এই মূর্তির দাম এক হাজার থেকে ১০হাজার টাকা পর্যন্ত। শিল্পীরা বলেন, অন্যান্যবার গড়ে ১৫ থেকে ২০টি প্রতিমা বিক্রি হতো। এবার বাজার তেমন ভালো নয়। দূরদূরান্ত থেকে মানুষ কালীপ্রতিমা নিয়ে যেতেন। একই অবস্থা চৈতন্যপুর চিত্রকর পাড়ায়। নেপাল চিত্রকর বলেন, করোনার জন্য দু’বছর ধরে বাজার খুব খারাপ। বাড়ির সবাই ছাঁচের প্রতিমা তৈরির উপর ভরসা করেন। গড়ে সবাই দু’চারটি করে অর্ডার পেয়েছেন।

TwitterFacebookWhatsAppEmailShare

#diwali, #colourful candles, #Chaitanyapur, #Sutahata

আরো দেখুন