রাজ্য বিভাগে ফিরে যান

লাগাতার হারের জন্য দায়ী ‘ধর্মীয় মেরুকরণ’, বঙ্গ বিজেপিতে ক্ষোভ

November 4, 2021 | 2 min read

বিধানসভা ভোটের পর লাগাতার উপনির্বাচনে হারের ময়না তদন্তে বসেছিল গেরুয়া পার্টি। ২০১৯ সালের লোকসভায় চমকপ্রদ ফলাফলের দু’বছরের মধ্যে এমন কী হল, যাতে বিজেপি প্রার্থীদের জমানত জব্দ হচ্ছে। প্রাথমিক বিশ্লেষণে ‘ধর্মীয় মেরুকরণ’ লাইন নিয়ে রাজ্য পার্টির অনেক নেতাই নিজেদের আপত্তি জানিয়েছেন। তাঁদের বক্তব্য, পশ্চিমবঙ্গের সংস্কৃতির সঙ্গে এই ধর্মীয় মেরুকরণ খাপ খায় না। বরং ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের বিরুদ্ধে আক্রমণাত্মক হতে গিয়ে একটা বড় অংশের ভোট হাতছাড়া হয়েছে। পাশাপাশি শিক্ষিত অসাম্প্রদায়িক বাঙালি হিন্দু ভোটও বিজেপির ঝুলি থেকে সরে গিয়েছে। গত কয়েক বছরে বাম-কংগ্রেসকে পিছনে ফেলে বঙ্গ রাজনীতিকে প্রধান বিরোধী শক্তি হয়ে উঠেছিল বিজেপি। কিন্তু সাম্প্রতিক রাজনৈতিক পরিসরে ক্রমেই নিজেদের প্রাসঙ্গিকতা হারাচ্ছে পদ্ম পার্টি। দলের একটা বড় অংশের ব্যাখ্যা, অযাচিতভাবে হিন্দু-মুসলমান করার জন্য এই করুণ হাল। গো-বলয়ের রাজনীতির সঙ্গে বাংলাকে মেলানো উচিত নয়। কেন্দ্রীয় নেতারা তা এখনও উপলব্ধি করতে পারল না।


এ প্রসঙ্গে রাজ্য বিজেপির মুখ্য মুখপাত্র শমীক ভট্টাচার্যের ঘুরিয়ে ফিরিয়ে যা বলছেন, তার সারাংশ হল, ধর্মীয় মেরুকরণ’ ইস্যু বেশ কিছুটা হলেও, দলীয় পর্যায়ে ক্ষতি করেছে। তাঁর ব্যাখ্যা, আমরা যা বলতে চেয়েছি হয়তো শব্দ চয়ন কিংবা প্রয়োগের ক্ষেত্রে কোথাও কোনও ভুল ছিল। বাংলার মানুষকে আমরা নিজেদের বক্তব্য বোঝাতে হয়তো ভুল করেছি। এটা আমাদের ব্যর্থতা। তবে শমীকবাবুর স্পষ্ট কথা, বিজেপি ধর্মীয় মেরুকরণের রাজনীতি করে না। বাম আমলে সিপিএম ধর্ম নিয়ে সুড়সুড়ি দিতে শুরু করেছিল। বন্ধ কারখানার গেটে সিটু নেতারা রামমন্দির নিয়ে বক্তৃতা দিতেন। পরবর্তী সময়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের আচরণ-বক্তব্য, ধর্মীয় মেরুকরণের রাজনীতিকে ইন্ধন জুগিয়েছে। বিজেপির এই প্রাক্তন বিধায়কের দাবি, আমরা বিভাজনের রাজনীতির বিরুদ্ধে কথা বলছি। আমরা চাই তোষণমুক্ত সামাজিক-অর্থনৈতিক ব্যবস্থা। সমস্ত ধর্মের মানুষ যাতে নিজেদের অধিকার নিয়ে বাঁচতে পারেন।  বাংলায় সংখ্যালঘুদের মনে  ভয়-বিভ্রান্তি তৈরি করে আতঙ্কের পরিবেশ তৈরির চেষ্টা হয়েছে। বিজেপি আগামীদিনে তা কাটিয়ে দিতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করবে বলেও জানিয়েছেন শমীকবাবু।


উল্লেখ্য, বিধানসভা নির্বাচন পর্বে শুভেন্দু অধিকারী, রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়, মুকুল রায়ের মতো নেতারা সরাসরি ব্যক্তি আক্রমণে গিয়ে মেরুকরণের রাজনীতির সলতে পাকিয়েছিলেন। এমনকী খোদ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ,  যোগী আদিত্যনাথের মতো নেতারাও প্রচারে এসে হিন্দু-মুসলমান তাস খেলে ছিলেন। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে সরাসরি একাধিক আপত্তিকর ব্যক্তিগত আক্রমণ করা হয়েছিল। যার ফল ভুগতে হয়েছিল বিজেপিকে। ২০০ আসনের স্বপ্ন ফেরি করা দল এসে ঠেকেছিল ৭৭-এ। নির্বাচনোত্তর পর্বে এই বিভাজনের রাজনীতিকে দায়ী করে একাধিক বিধায়ক বিজেপি ছেড়ে তৃণমূলে যোগ দিয়েছেন। স্বভাবতই আগামীদিনে দলের ভাঙন রুখতে এবং পার্টির সার্বিক বিস্তারে ‘লাইন’ বদল কার্যত অবশ্যাম্ভাবী হয়ে পড়েছে গেরুয়া পার্টির বঙ্গ শিবিরে। 

TwitterFacebookWhatsAppEmailShare

#Bengal, #bjp, #politics, #bengal politics

আরো দেখুন