ত্রিপুরায় পুরভোটে শুভেন্দুকে প্রচারের আর্জি তৃণমূলের
ত্রিপুরায় (Tripura) তৃণমূলের দীপাবলি ধামাকা! শেষ ল্যাপে আগরতলার ৫১টি সহ বিভিন্ন পুরসভার আসনে প্রার্থীদের মনোনয়ন করিয়ে চমক দিয়েছে ঘাসফুল শিবির। রাজনৈতিক মহল বলছে সংগঠন বিস্তারের কাজ শুরু করার কয়েক মাসের মধ্যেই সব আসনে প্রার্থী দিতে পারাটাই “প্রথম জয়”। ত্রিপুরাবাসীর সমর্থন পাওয়ার বিষয়েও অনেক আত্মবিশ্বাস পেয়ে গেল মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের (Mamata Banerjee) দল।
এরপরই স্বভাবসিদ্ধ ভঙ্গিতে বাংলার বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীকে (Suvendu Adhikary) কটাক্ষ করেছেন রাজ্য সাধারণ সম্পাদক কুণাল ঘোষ। তিনি মনেপ্রাণে চাইছেন ত্রিপুরা পুরভোটে বিজেপির হয়ে প্রচারে নামুন শুভেন্দু। কিন্তু কেন? টুইটে কুণাল লিখছেন, “ত্রিপুরায় নাকি তৃণমূলকে দেখাই যাচ্ছিল না? এখন সামলাতে অমিত শাহ ও দিল্লির নেতাদের ডাকতে হচ্ছে। ভাই তোমরা শুভেন্দুকেও নিয়ে যাও। ওই মুখ ঘোরালে তৃণমূলের উপকার। যত ঘুরবে, যত বকবে, তত মানুষ তোমাদের থেকে সরে যাবেন। অভিষেকের সভার পর তৃণমূল আরও আত্মবিশ্বাসী।”
আসলে টুইটে কুণাল শুভেন্দুকে খোঁচা মেরেছেন বাংলায় একের পর এক ভোটে বিজেপির ভরাডুবি নিয়ে। একুশের বিধানসভা ভোট হোক কিংবা উৎসবের মরশুমে উপনির্বাচন, যেখানেই শুভেন্দু গেরুয়া শিবিরের হয়ে প্রচারে গিয়েছেন, সেখানেই গো-হারা বিজেপি। সম্প্রতি, রাজ্যের চার বিধানসভা আসনের উপনির্বাচনে বিজেপির দায়িত্বে ছিলেন শুভেন্দু। কিন্তু তৃণমূলের পক্ষে ফল ৪-০ হয়েছে। এমনকি, শান্তিপুরে নিজেদের জেতা আসন ধরে রাখতে মরিয়া বিজেপির হয়ে মাটি কামড়ে পড়েছিলেন শুভেন্দু। কিন্তু শুধু হার নয় রেকর্ড মার্জিনে হেরেছে বিজেপি। আর দিনহাটায় বাংলার বিধানসভা ভোটের ইতিহাসের সর্বোচ্চ মার্জিনে জিতেছে তৃণমূল। গোসাবা, খড়দহেও একই অবস্থা। পুজোর আগে ভবানীপুরের স্মৃতি এখনও টাটকা। এই সব জায়গা গুলিতেই ভোটের আগে দৌড়ে বেড়িয়েছিলেন শুভেন্দু। সাড়ে পাঁচ মাস আগে রাজ্যের বিধানসভা ভোটেও শুভেন্দুর নিজের জেলা অবিভক্ত মেদনীপুরের ৩৫টি আসনের মধ্যে ২৬টি জিতেছে তৃণমূল। শুভেন্দুর বাড়ি দক্ষিণ কাঁথিতেও হেরেছে বিজেপি। ফলে শুভেন্দু যেখানেই যাচ্ছেন সেখানেই সোনা ফলছে তৃণমূলের। আর ভরাডুবি হচ্ছে বিজেপির। অর্থাৎ, বিজেপির শুভেন্দু তৃণমূলের জন্য “পয়া” তেমনটি বোঝাতেই কুণালের কটাক্ষ টুইট।
আবার শোনা যাচ্ছে, ২১ ও ২২ নভেম্বর দু’দিনের সফরে ত্রিপুরা যাচ্ছেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। সরকারিভাবে বলা হচ্ছে সেখানে একটি ফরেনসিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিলান্যাস করবেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। কিন্তু পুরভোটের সময়কেই শিলান্যাস করার জন্য কেন বেছে নিলেন, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে রাজনৈতিক মহলে। আসলে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের আগরতলার সভা করার পরই হারে কাঁপুনি ধরে গিয়েছে ত্রিপুরা বিজেপির। তাই শিলান্যাসের নামে আসলে পুরভোটের প্রচার করতেই যে অমিত শাহের ত্রিপুরা সফর, তা দিনের আলোর মতো পরিস্কার। পুরসভা ধরে রাখতে তাই কৌশলে অমিত শাহ সহ দিল্লি নেতৃত্বকে প্রচারে নিয়ে আসতে হচ্ছে। কিন্তু তৃণমূল মনে করিয়ে দিয়েছে, এই অমিত শাহ ও দিল্লি নেতৃত্ব পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভা ভোটের আগে কার্যত ডেইলি প্যাসেঞ্জার হয়েও বিজেপির বিপর্যয় রুখতে পারেননি।
প্রসঙ্গত, ত্রিপুরার এখন প্রবল আত্মবিশ্বাসী তৃণমূল শিবির। আগরতলা পুরসভার ৫১টি ওয়ার্ডেই প্রার্থী দেওয়ার মধ্য দিয়ে তা প্রমাণ হয়েছে। তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে তালিকার প্রায় ৫০ শতাংশই মহিলা। বুধবার ত্রিপুরার রাজধানী শহরের বিভিন্ন ওয়ার্ড থেকে মিছিল করে মনোনয়ন জমা দেন তৃণমূল প্রার্থীরা। ছিলেন দলের রাজ্য আহ্বায়ক সুবল ভৌমিক এবং রাজ্যসভা সাংসদ সুস্মিতা দেব।
তৃণমূলের ঘোষিত প্রার্থী তালিকায় রয়েছেন, রামনগরের বিজেপি বিধায়ক সুরজিৎ দত্তের ভাই তপন। নব্বইয়ের দশকে কংগ্রেস জমানার মন্ত্রী সুরজিৎ একদা ত্রিপুরা তৃণমূলের সভাপতিও ছিলেন। বিজেপি-র প্রাক্তন মন্ত্রী তথা আগরতলারই বিধায়ক সুদীপ রায় বর্মণের ঘনিষ্ঠ অনুগামী শ্যামল পালও রয়েছেন তৃণমূলের প্রার্থী তালিকায়। রয়েছেন, ত্রিপুরা যুব কংগ্রেসের প্রাক্তন সভাপতি বাপ্টু চক্রবর্তী এবং বিদায়ী পুরসভার কংগ্রেস কাউন্সিলর পান্না দেবও।
আগামী ২৫ নভেম্বর আগরতলা পুরসভা-সহ ত্রিপুরার ১৩টি পুর পরিষদ এবং ৬টি নগর পঞ্চায়েতে ভোট। গণনা ২৮ নভেম্বর। ৫ নভেম্বর পর্যন্ত মনোনয়ন জমা নেওয়ার কাজ চলবে। মনোনয়ন প্রত্যাহারের শেষ তারিখ ৮ নভেম্বর। ইতিমধ্যেই ত্রিপুরার কিছু এলাকায় বিরোধীদের ভয় দেখানোর অভিযোগ উঠেছে সে রাজ্যের শাসকদল বিজেপি-র বিরুদ্ধে।