বিরোধীরা প্রার্থী দিতে পারল না ৭ পুরসভায়, ত্রিপুরায় গেরুয়া সন্ত্রাস অব্যাহত
হুমকি, মারধর আর সন্ত্রাস—যে কোনও মূল্যে মনোনয়নপত্র জমা দেওয়া থেকে আটকাতে হবে বিরোধীদের। দু’বছর আগের পঞ্চায়েত নির্বাচনের ‘হাড়হিম করা সন্ত্রাস পর্ব’ এবারের পুরভোটেও বজায় রাখছে ত্রিপুরা বিজেপি। আগামী ২৫ নভেম্বর আগরতলা কর্পোরেশন সহ ত্রিপুরার ২০টি পুরসভার মোট ৩৩৪টি ওয়ার্ডে নির্বাচন। বুধবারই ছিল মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার শেষ দিন। রাজ্য নির্বাচন কমিশন সূত্রে প্রাপ্ত পরিসংখ্যান অনুযায়ী, মোট ওয়ার্ডের এক-তৃতীয়াংশ কার্যত বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জিতে গিয়েছে গেরুয়া শিবির। সাতটি পুরসভায় তারা ইতিমধ্যেই সংখ্যাগরিষ্ঠ। ওই সাতটির মধ্যে পাঁচটি পুর পরিষদ এবং দু’টি নগর পঞ্চায়েত। বিরোধীদের অভিযোগ, স্রেফ ‘চোখ রাঙিয়ে’ই সেগুলি দখলে নিয়েছে ত্রিপুরার শাসক দল বিজেপি। এরপর শুরু হয়েছে হুমকি দেখিয়ে, সন্ত্রাস ছড়িয়ে বিরোধীদের প্রার্থীপদ প্রত্যাহারের কাজ। ২০১৯-এর জুলাই মাসে ত্রিপুরায় আয়োজিত পঞ্চায়েত নির্বাচনে ৯৬ শতাংশ আসনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়ী হয়েছিল মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব দেবের দল। তখন গেরুয়া শিবিরের দাবি ছিল, তাদের ‘ভালোবেসে’ এভাবে জয়ের পথ প্রশস্ত করেছে ত্রিপুরাবাসী। যদিও বাস্তবে বাড়ি ভাঙচুর, লুটপাট, অগ্নিসংযোগ, খুন-জখমের মতো বেশ কিছু ‘ভালোবাসার নমুনা’ বহন করতে হয়েছে উত্তর-পূর্ব ভারতের ছোট্ট রাজ্যের বাসিন্দাদের। বিরোধী তৃণমূল কংগ্রেস, সিপিএম এবং কংগ্রেসের অভিযোগ, গতবারের রেকর্ড ভাঙার লক্ষ্য নিয়েই শুরু হয়েছে গেরুয়া তাণ্ডব। আগামী ৮ নভেম্বর, মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের শেষদিন পর্যন্ত তা চলার আশঙ্কা করা হচ্ছে।
রাজ্য নির্বাচন কমিশনের তথ্য বলছে, আগরতলা কর্পোরেশন সহ ২০টি পুরসভার মোট ৩৩৪টি ওয়ার্ডেই প্রার্থী দিয়েছে বিজেপি। রাজ্যের প্রধান বিরোধী বামফ্রন্ট মনোনয়ন জমা করেছে ২২৭টি আসনে। এর মধ্যে সিপিএমের প্রার্থী ২১৪ জন। অন্যদিকে, প্রথমবার ত্রিপুরায় নির্বাচনী লড়াইতে নেমে মোট ১২৫টি ওয়ার্ডে মনোনয়নপত্র জমা দিতে পেরেছে তৃণমূল। তার মধ্যে আগরতলা কর্পোরেশনের ৫১টি ওয়ার্ডেই তাদের প্রার্থী রয়েছে। সাংগঠনিকভাবে দুর্বল কংগ্রেসও প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছে ১০১টি ওয়ার্ডে।
এ প্রসঙ্গে ত্রিপুরা সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক জিতেন চৌধুরী বলেন, ‘আমরা আগরতলা সহ অধিকাংশ পুরসভায় সব আসনে প্রার্থী দিয়েছি। কিন্তু রাজ্যের চারজন মন্ত্রীর বিধানসভা এলাকার মধ্যে পড়ে এমন পাঁচটি পুর পরিষদ ও দু’টি নগর পঞ্চায়েতে কোনও প্রার্থী দিতে পারিনি শাসক দলের সন্ত্রাসের কারণে। আগাম হুমকি ও হামলার মুখে প্রাণ সংশয় বা সম্পত্তি নষ্টের আশঙ্কা থাকায় মনোনয়ন জমা করার ঝুঁকি নেওয়া যায়নি।’ তৃণমূলের রাজ্য স্টিয়ারিং কমিটির আহ্বায়ক সুবল ভৌমিক এবং প্রাক্তন রাজ্য সভাপতি আশিসলাল সিং এবং প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি বীরজিৎ সিংহও একই সুরে আঙুল তুলেছেন বিজেপির দিকে। সুবলবাবুর অভিযোগ, ‘খোয়াই, উদয়পুর, বিলোনিয়া ও সাব্রুমে রিটার্নিং অফিসারের দপ্তর ঘেরাও করে রেখেছিল গেরুয়া বাহিনী। যাতে কেউ মনোনয়নপত্র জমা দিতে না পারে।’ রাজ্য বিজেপির অন্যতম মুখপাত্র সুব্রত চক্রবর্তী অবশ্য সন্ত্রাসের যাবতীয় অভিযোগ নস্যাৎ করেছেন প্রত্যাশিতভাবেই। তিনি বলেন, ‘ওই সব জায়গায় প্রার্থী খুঁজে না পেয়ে এখন সন্ত্রাসের অজুহাত তৈরি করছে বিরোধীরা। নিজেদের দুর্বলতা আড়াল করতেই এই অজুহাত।’ তাঁর যুক্তি, সন্ত্রাসই যদি কারণ হয়, তাহলে বাকি দুই-তৃতীয়াংশ আসনে সেই ছবি দেখা গেল না কেন!এই মুহূর্তে