করোনা সংক্রমণের খবর প্রকাশের জের, চীনের জেলে মৃত্যুমুখে মহিলা সাংবাদিক
‘ভরকেন্দ্র’ উহানের করোনা সংক্রমণের খবর প্রকাশ্যে তুলে ধরেছিলেন তিনি। শুরুর দিকে সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে কর্তৃপক্ষের গা-ছাড়া মনোভাব নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন। সেই ‘অপরাধে’র শান্তি হিসেবে তাঁকে জেলে ভরেছিল চীনের কমিউনিস্ট সরকার। সেই জেলবন্দি সাংবাদিক ঝ্যাং ঝান বর্তমানে মৃত্যুমুখে। ভগ্ন শরীরে নিয়েই বন্দিদশায় অনশন চালিয়ে যাচ্ছেন তিনি। ৩৮ বছরের এই মহিলা সাংবাদিকের প্রাণরক্ষায় সরব হয়েছে মানবাধিকার সংগঠনগুলি। চীন সরকারের কাছে ঝানকে দ্রুত মুক্তি দেওয়ার আর্জি জানিয়েছে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল। যদিও, ঝানের মুক্তির এই দাবিকে শুক্রবার ‘চীন-বিরোধী রাজনৈতিক ষড়যন্ত্র’ বলে বিবৃতি দিয়েছে জি জিনপিং সরকারের বিদেশমন্ত্রক। এই মহিলা সাংবাদিক কেমন আছেন, তা নিয়েও চীনা বিদেশ মন্ত্রক নীরব। মন্ত্রকের মুখপাত্র ওয়াং ওয়েনবিন বলেন, ‘চীনে আইনের শাসন রয়েছে। কেউ আইন ভাঙলে আইন মোতাবেক তাকে শাস্তি পেতেই হবে।’ শারীরিক পরিস্থিতি নিয়ে চীন সরকার মুখে কুলুপ আঁটলেও ‘রিপোর্টার্স উইথআউট বর্ডার্স’-এর দাবি, কারও সাহায্য ছাড়া হাঁটা, এমনকী মাথা তোলার শক্তিও ঝানের আর নেই।
পরিস্থিতি বেগতিক বুঝেই ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারিতে উহান যান ঝান। মহামারীর শুরুর দিনগুলিতে সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে কর্তৃপক্ষের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। স্মার্টফোনে ভিডিও করেন সব কিছু। এরপর ২০২০ সালেরই মে মাসে তাঁকে আটক করা হয়। ডিসেম্বরে চার বছরের কারাদণ্ড হয় এই মহিলা সাংবাদিকের। ‘নৈরাজ্যে উস্কানি’ দেওয়ার অভিযোগে। সাধারণত এই একই অভিযোগের অছিলায় আখছার প্রতিবাদী কণ্ঠ ধামাচাপা দেওয়া হয় চীনে। উইঘুর মুসলিমদের উপর নির্যাতন সহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগও প্রায় রোজকার বিষয় কমিউনিস্ট চীনে। এবার মহিলা সাংবাদিকের উপর দমনপীড়ন চালানোর ঘটনা নিয়েই শোরগোল চরমে।
ঝানের ভাই ঝ্যাং জু সোশ্যাল মিডিয়ায় লিখেছেন, ‘দিদি হয়তো আর বেশিদিন বাঁচবে না। ওর ওজন একেবারে কমে গিয়েছে। সামনেই শীত। ঠান্ডার ধাক্কা হয়তো সামলে উঠতে পারবে না। চিঠি লিখে ওকে নিজের যত্ন নিতে বলেছি। ঈশ্বর আর নিজের বিশ্বাস ছাড়া আর কোনও কিছুর পরোয়া করে না দিদি।’ চলতি বছরের গোড়ার দিকে জেলবন্দি সাংবাদিকের আইনি দলের তরফে জানানো হয়েছে, ঝান অনশনে রয়েছেন। নাকে নল দিয়ে তাঁকে জোর করে খাওয়াচ্ছে জেল কর্তৃপক্ষ। বর্তমানে তাঁর শারীরিক পরিস্থিতি কেমন, তা নিয়েও স্পষ্ট কিছু জানানো হচ্ছে না।
ঝানের এই অবস্থা সামনে আসার পর বৃহস্পতিবার চীন সরকারের কাছে অবিলম্বে তাঁর মুক্তির আর্জি জানিয়েছে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল। এই মহিলা সাংবাদিকের প্রাণরক্ষায় প্রয়োজনীয় চিকিৎসার ব্যবস্থা করতেও বলা হয়েছে। অ্যামনেস্টির
তরফে একটি বিবৃতিতে গুয়েন লি বলেছেন, ‘ঝানকে আটক করে রাখার ঘটনা লজ্জাজনক। মানবাধিকারের উপর হামলা।’ ‘রিপোর্টার্স উইথআউট বর্ডার্স’-এর পূর্বএশিয়া ব্যুরোর প্রধান সেড্রিক আলভিয়ানি বলেন, ‘ঝ্যাং ঝানের দ্রুত মুক্তি নিশ্চিত করতে চীনের উপর চাপ তৈরি করা উচিত আন্তর্জাতিক মহলের। সব শেষ হয়ে যাওয়ার আগেই তা করতে হবে।’ বিদেশি সংবাদমাধ্যমকে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ঝানের এক পরিচিত জানিয়েছেন, প্রতিবাদী এই সাংবাদিককে রাখা হয়েছে সাংহাইয়ের মহিলা জেলে। সপ্তাহ তিনেক আগে ঝানের সঙ্গে দেখা করতে চেয়ে কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন জানিয়েছিল। কিন্তু এখনও পর্যন্ত তার কোনও জবাব মেলেনি।