তাঁতের শাড়ির বাঙালিয়ানার খোঁজে কাটোয়ায় নোবেলজয়ী
বহুদিন দেশছাড়া। কিন্তু এখনও অটুট বাঙালিয়ানা। তাই তাঁতের শাড়ির টানে কাটোয়ার প্রত্যন্ত গ্রাম আমডাঙায় আচমকাই হাজির নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ অভিজিৎ বিনায়ক বন্দ্যোপাধ্যায়। শাড়ি দেখতে নয়। কিনতে। হরিতলা তাঁতিপাড়ায় ভিভিআইপিকে দেখতে হাজির গোটা গ্রাম।
প্রত্যন্ত গ্রামে নোবেলজয়ী ঢোকার আগেই পুলিশে পুলিশে ছয়লাপ হয়ে যায় গোটা গ্রাম। তারপরে ঢোকে অভিজিৎবাবুর কনভয়। তবে গাড়ি থেকে নামা ইস্তক অভিজিৎবাবুকে দেখে মনেই হয়নি, তিনি এমন ওজনদার মানুষ। পায়ে হেঁটে তাঁতিদের দরজায় দরজায় ঘুরলেন। কীভাবে তাঁত বোনা হচ্ছে, কীভাবে নকশা তোলা হচ্ছে, কীভাবে সুতো যন্ত্রে ফেলা হচ্ছে, সবকিছু খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখেন। সুতির জামদানি শাড়ি কেনেন বেশ কয়েকটা। গ্রামের তরফে তাঁতিদের হাতে তৈরি উত্তরীয় দিয়ে বরণ করা হয় দারিদ্র নিয়ে গবেষণায় সফল নোবেলজয়ীকে। তাঁতের শাড়ি দেখে বেজায় খুশি অভিজিৎবাবু বললেন, ‘‘এখানকার তাঁতবস্ত্রের কথা শোনার পর থেকেই একবার সবকিছু নিজের চোখে দেখার ইচ্ছে ছিল। সেই ইচ্ছে পূরণ হল। খুবই ভাল লাগল।’’ তাঁতশিল্পী গদাই দাস বলছিলেন, ‘‘অতবড় মানুষ, অথচ কোনও গুমর নেই। আমাদের সঙ্গে মাটিতে বসেই খাওয়াদাওয়া করলেন। প্রণাম করতে গেলাম। না নিয়ে বললেন, এখন আর ওসব নেই।’’ আমডাঙা গ্রামে এতবড় মাপের মানুষের পা পড়ায় আপ্লুত সংশ্লিষ্ট জগদানন্দপুর পঞ্চায়েত প্রধান গৌতম ঘোষাল বললেন, ‘‘ওঁর ছোঁয়ায় এখানকার তাঁত যদি আরও একটু বিস্তারলাভ করে তাহলে ভাল হয়।’’ এখানকার আমডাঙাই শুধু নয়, লাগোয়া পাঁচবেড়িয়া, মুস্থুলি, একডালা গ্রামের বেশিরভাগ মানুষের জীবিকাই তাঁতবোনা। এখানে তৈরি টাঙ্গাইল, জামদানির কদর ভিনদেশেও। তাতে বাড়তি মাত্রা জুড়ল নোবেলজয়ীর ঝটিকাসফর।