তিনহাজার টন আসার কথা থাকলেও চলতি মরসুমে মাত্র ১৬ টন ইলিশ পেল এপার বাংলা
সরকারি ছাড়পত্র মিলেছিল অনেকটাই। তবু চলতি মরশুমে ওপার থেকে পর্যাপ্ত ইলিশ এল না এপারে। এবছর কালীপুজোর আগে দ্বিতীয় দফায় ইলিশ আমদানির ছাড়পত্র দিয়েছিল বাংলাদেশ সরকার। কিন্তু যে পরিমাণ ইলিশের ছাড়পত্র দেওয়া হয়েছিল, তার ছিটেফোঁটাও এল না এ’রাজ্যে। পদ্মাপাড়ে ইলিশের জোগানের অভাবের কারণেই বেশি মাছ আমদানি করা যায়নি, এমনটাই বলছেন ব্যবসায়ীরা। দ্বিতীয় দফায় প্রায় সাড়ে তিন হাজার টন ইলিশ আসার কথা ছিল, তার এসেছে মাত্র ১৬ টন।
এবার বর্ষায় রাজ্যের নিজস্ব ইলিশ নিয়ে হা-হুতাশের অন্ত ছিল না মাছপ্রিয় বাঙালির। চড়া দরের কারণে বড় ইলিশ হাতছাড়া হয় প্রায় সকলেরই। দীঘা, শঙ্করপুর, কাকদ্বীপ বা ডায়মন্ডহারবার থেকে সামান্য কিছু ছোট ইলিশ বাজারে এসেছিল ঠিকই, কিন্তু তার দর এতটাই বেশি ছিল যে, হাত দিতে বড় একটা সাহস পাননি সাধারণ মানুষ। নিষিদ্ধ খোকা ইলিশ যেটুকু বাজারে এসেছে, ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা কেজি দরে তা কিনে দুধের স্বাদ ঘোলে মেটাতে হয়েছে।
তাই পদ্মার ইলিশের দিকে নজর ছিল অনেকেরই। বাংলাদেশ সরকার গত সেপ্টেম্বর মাসে ঘোষণা করে, তারা মোট ৪ হাজার ৬০০ টন ইলিশ রপ্তানি করতে রাজি। গত বছর পুজোর আগে যে পরিমাণ ইলিশ এরাজ্যে রপ্তানির ছাড়পত্র দিয়েছিল হাসিনা সরকার, এবার তার দ্বিগুণেরও অনেক বেশি ইলিশ পাঠাবে বলেছিল ঢাকা।
ইলিশ এদেশে আনার যে শর্ত বাংলাদেশ সরকার বেঁধে দেয়, তাতে সমস্যায় পড়েন মাছ ব্যবসায়ীরা। সেপ্টেম্বরের শেষের দিকে প্রথম ধাপে বাংলাদেশ সরকার এদেশে ২ হাজার ৮০ টন ইলিশ রপ্তানির অনুমতি দিয়েছিল। তার জন্য সময়সীমা রাখা হয়েছিল ১০ অক্টোবর। মোট ৫২টি সংস্থাকে তার জন্য অনুমতি দেওয়া হয়। তার দিন দু’য়েকের মধ্যেই ফের বাংলাদেশ সরকার জানায়, এদেশের আরও ৬৩টি সংস্থা ইলিশ আমদানি করতে পারবে। আরও ২ হাজার ৫২০ টন ইলিশ আনতে পারবে ওই সংস্থাগুলি। তবে এবার সময়সীমা বেঁধে দেওয়া হয় ৩ অক্টোবর। গোল বাঁধে এখানেই। এত অল্প সময়ে এত পরিমাণ ইলিশ এদেশে নিয়ে আসা কার্যত অসম্ভব, জানিয়ে দেন ব্যবসায়ীরা। ওই সময়সীমার মধ্যে মাত্র এক হাজার টনের সামান্য কিছু বেশি ইলিশ এরাজ্যে ঢোকে। অর্থাৎ বাংলাদেশ সরকার যেটুকু মাছের ছাড়পত্র দিয়েছিল, তার চারভাগের এক ভাগেরও কম ইলিশ আমদানি হয়।
গত ২৬ অক্টোবর দ্বিতীয় দফায় ফের ইলিশ রপ্তানির ছাড়পত্র দেয় বাংলাদেশ সরকার। তারা জানায়, যে পরিমাণ ইলিশ রপ্তানির অনুমতি দেওয়া হয়েছিল, তার পুরোটা রপ্তানি করা সম্ভব হয়নি। তাই ফের সেই ইলিশ রপ্তানি করা যাবে। অর্থাৎ প্রায় সাড়ে তিন হাজার টন ইলিশ আসতে পারবে এপার বাংলায়। এবার বাংলাদেশ সরকার সময়সীমা বেঁধে দেয় ৫ নভেম্বর। মাছ ব্যবসায়ীরা জানাচ্ছেন, এই সময়ের মধ্যে মাত্র ১৬ টন ইলিশ এসেছে পশ্চিমবঙ্গে। তার কারণ কী? ব্যবসায়ীদের বক্তব্য, সরকার অনুমতি দিলেও, পদ্মাতেও ইলিশ প্রায় নেই বললেই চলে।
বাংলাদেশে ইলিশ ধরা পড়ছে না। সেই কারণেই রপ্তানিকারক সংস্থাগুলি জোগান দিতে পারছে না। ব্যবসায়ীদের কথায়, সরকার যদি সময়সীমা বাড়াত, তাহলে হয়তো আরও একটু বেশি ইলিশ আসতে পারত। কিন্তু তা হয়নি। তাই দ্বিতীয় দফায় বাঙালির পদ্মার ইলিশের স্বাদ এক প্রকার অধরাই রয়ে গেল।