রাজ্য বিভাগে ফিরে যান

বিভীষণকে কোনও সাহায্যই করেনি অমিত শাহ, ওষুধ নিয়ে পাশে দাঁড়াল রাজ্য

November 8, 2021 | 2 min read

ভোটের আগে এসেছিলেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। বাড়িতে মধ্যাহ্নভোজের সময় পাশে বসে বলেছিলেন, দিল্লির এমসে নিয়ে গিয়ে মেয়ের চিকিৎসা করাতে সাহায্য করবেন। কিন্তু বাঁকুড়ার চতুরডিহি গ্রামের বিভীষণ হাঁসদার দাবি, কেন্দ্রীয় কোনও সাহায্য আজ পর্যন্ত পাননি। শুধু এক বার দেখা করে গিয়েছিলেন স্থানীয় সাংসদ সুভাষ সরকার। তবে পাশে দাঁড়িয়েছিল রাজ্য সরকার। বিভীষণের মেয়ে রচনার জন্য ওষুধ ও ইঞ্জেকশন পৌঁছে দিয়েছিল স্থানীয় প্রশাসন। কিন্তু কয়েক দিন চলার পর তা বন্ধ হয়ে যায়। মেয়ের চিকিৎসা করাতে হিমশিম খাওয়া শুরু হয় দিনমজুর বিভীষণের। গত শনিবার সেই সংক্রান্ত খবর প্রকাশিত হয় আনন্দবাজার অনলাইনে। তার পরেই ফের বিভীষণের বাড়িতে ফের পৌঁছে গেল স্থানীয় প্রশাসন। হাতে তুলে দিল ওষুধ।

রাজ্যে বিধানসভা নির্বাচনের আগে ২০২০-র ৫ নভেম্বর বাঁকুড়ায় রাজনৈতিক সফরে এসেছিলেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ । সেই সময় বাঁকুড়া শহর থেকে প্রায় ১০ কিলোমিটার দূরে চতুরডিহি গ্রামের বিভীষণের বাড়িতে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর মধ্যাহ্নভোজের আয়োজন করেছিলেন স্থানীয় বিজেপি নেতৃত্ব । মধ্যাহ্নভোজের ফাঁকে পাশে বসে থাকা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে বিভীষণ জানিয়েছিলেন, নিজের মেয়ে রচনার ডায়াবিটিসজনিত কঠিন অসুখের কথা। শুনে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রচনাকে দিল্লির এমসে নিয়ে গিয়ে চিকিৎসা করানোর ব্যবস্থা করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী ফিরে যেতেই বাঁকুড়ার বিজেপি সাংসদ ও তৎকালীন রাজ্য সরকারের পঞ্চায়েত দফতরের প্রতিমন্ত্রী শ্যমল সাঁতরা দফায় দফায় বিভীষণের বাড়িতে গিয়ে রচনার উন্নত চিকিৎসার আশ্বাস দিয়ে আসেন। প্রথম প্রথম রচনার প্রয়োজনীয় ওষুধ ও ইঞ্জেকশন সরবরাহের ব্যবস্থাও করা হয়েছিল। কিন্তু এক বছর পূর্ণ হওয়ার আগেই সব বন্ধ হয়ে যায়। গত কয়েক মাস ধরে রচনার চিকিৎসার জন্য প্রতি মাসে প্রয়োজনীয় খরচের পাঁচ হাজার টাকা দিনমজুরি করে জোটাতে হচ্ছিল বিভীষণ আর তাঁর স্ত্রী মনিকা হাঁসদাকে।

বিভীষণের স্বপ্নভঙ্গের যন্ত্রণা আনন্দবাজার অনলাইনে প্রকাশ পেতেই টনক নড়ে প্রশাসনের। সোমবার দুপুরে চতুরডিহি গ্রামে বিভীষণের বাড়িতে হাজির হন বাঁকুড়া ১ নম্বর ব্লকের বিডিও অঞ্জন চৌধুরী ও ব্লক স্বাস্থ্য আধিকারিক (বিএমওএইচ) অরিজিৎ কুন্ডু। বিভীষণের হাতে রচনার চিকিৎসার এক মাসের জন্য প্রয়োজনীয় ওষুধ ও ইনসুলিন ইঞ্জেকশন তুলে দেন তাঁরা। অঞ্জন পরে বলেন, “শনিবার রাতে আমরা বিভীষণবাবুর বাড়িতে এসে খোঁজ নিয়ে গিয়েছিলাম। সরকারি ভাবে রচনার প্রয়োজনীয় ওষুধ ও ইঞ্জেকশন এই পরিবারকে দেওয়া হচ্ছিল। সরবরাহে ঘাটতি থাকার কারণে কিছু দিন তা বন্ধ হয়ে যায়। আজ আমরা প্রশাসনিক নির্দেশে এক মাসের ওষুধ ও ইঞ্জেকশন দিয়ে গেলাম। নিয়মিত যাতে রচনার স্বাস্থ্যপরীক্ষা হয় সে জন্য স্থানীয় আশাকর্মীদের ইতিমধ্যেই নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।’’

বিএমওএইচ অরিজিৎ বলেন, “রচনার অসুখের একটাই চিকিৎসা, ইনসুলিন গোত্রের ইঞ্জেকশন চালিয়ে যাওয়া। এই পরিবারের হাতে যাতে সরকারি ভাবে নিয়মিত ইনসুলিন ইঞ্জেকশন পৌঁছে দেওয়া যায় তার ব্যবস্থা করা হয়েছে। রক্তে শর্করার মাত্রা হের ফের করলে যাতে ইনসুলিনের ডোজ বদল করা যায় তার জন্য নিয়মিত স্বাস্থ্যপরীক্ষারও ব্যবস্থাও করা হয়েছে।’’

এক বছর পরে মেয়ে রচনার চিকিৎসায় রাজ্য প্রশাসন ও স্বাস্থ্য দফতর এ ভাবে এগিয়ে আসায় খুশি বিভীষণ। তিনি বলেন, “মেয়ের চিকিৎসার জন্য মাসে পাঁচ হাজার টাকা জোগাড় করতে খুব কষ্ট হচ্ছিল। আমি ও আমার স্ত্রী দু’জনে অন্যের জমিতে দিনমজুরি করেও ওই টাকা সব সময় জোগাড় করতে পারছিলাম না। সরকারি ভাবে নিয়মিত ওষুধ ও ইঞ্জেকশন সরবরাহ করা হলে মেয়ে সুস্থ থাকতে পারবে। বিডিও সাহেব আজ বলেছেন, সে ব্যবস্থা তাঁরা নিয়মিত করবেন।”

TwitterFacebookWhatsAppEmailShare

#Amit shah, #West Bengal Govt

আরো দেখুন