উত্তরবঙ্গ বিভাগে ফিরে যান

জলপাইগুড়িতে কালীপুজোয় ভিড়, সংক্রমণ বৃদ্ধির আশঙ্কা চিকিৎসা মহলের

November 9, 2021 | 2 min read

কোভিড বিধি মানতে লাগাতার চেষ্টা চালাচ্ছে প্রশাসন। সঙ্গে আরও বেশি সংখ্যক মানুষকে ভ্যাকসিন দেওয়ার কাজ চলছে। এই দুইয়ের জেরে কিছুটা হলেও থিতু হয়েছে করোনা ভাইরাসের দাপট। প্রাকপুজোর সময় জলপাইগুড়ি জেলায় আক্রান্তের সংখ্যা ১০’র নীচে ছিল। এতে স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা অনেকটাই স্বস্তি পেয়েছিলেন। কিন্তু, কালীপুজোয় শহর ও শহর সংলগ্ন বেশ কয়েকটি বিগবাজেটের পুজোমণ্ডপে যেভাবে লাগামছাড়া ভিড় হয়েছে, তাতে নতুন করে আতঙ্কিত চিকিৎসকরা। ফের করোনার গ্রাফ বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করছেন তাঁরা।  


জেলার এক স্বাস্থ্য আধিকারিকের বক্তব্য, আগামী ৭ থেকে ১০ দিনের মধ্যে ফের জেলার করোনা আক্রান্তের গ্রাফ ঊর্ধ্বমুখী হতে পারে। তাঁর যুক্তি, মাস্ক ছাড়াই বহু মানুষ মণ্ডপে মণ্ডপে ঘুরেছেন। ফলে আগামী কয়েকদিন জেলার সংক্রমণ বাড়লে আশ্চর্য হওয়ার কিছু থাকবে না। 


৪ নম্বর ঘুমটির কাছে শহর লাগোয়া নবারুণ সঙ্ঘের বুর্জ খলিফা ও তার উল্টোদিকে দাদাভাই ক্লাবের সংবাদপত্রের সেকাল ও একাল, ভগৎ সিং কলোনির ভয় মহলের মতো থিমে তৈরি মণ্ডপ দেখতেও ভিড় ছিল লাগামছাড়া। মণ্ডপের অন্তত কয়েকশো মিটার দূর থেকে মানুষের ভিড়ে ঠাসা ছিল রাস্তা। তারউপর পুজো দেখতে আসা বহু মানুষকে মাস্ক ছাড়াই ভিড়ে ঘুরে বেড়াতে দেখা যায়। 


স্থানীয়দের অভিযোগ, শহরে রুজিরুটির তাগিদে আসা মানুষ, যাঁরা ৪ নম্বর ঘুমটির রাস্তা ব্যবহার করে গরালবাড়ি, বাহাদুর, চাউলহাটি, সোবারহাট, ক্যাম্পের হাট সহ বিভিন্ন গ্রামীণ এলাকায় রাতে ফেরেন, তাঁদের কয়েক কিমি পথ যেতে তিন ঘণ্টার বেশি সময় লেগেছে। পুজো উদ্যোক্তাদের অবশ্য সাফাই, তাঁরা মাস্ক পরার জন্য বারবার মাইকিং করেছেন। নবারুণ সঙ্ঘের কালীপুজো কমিটির পক্ষে রাজেশ মণ্ডল বলেন, থিমের টানে মানুষ এসেছেন। কিন্তু, আমাদের তরফে প্রথম থেকে প্রচেষ্টা ছিল, করোনা বিধি মেনে যেন দর্শনার্থীরা মণ্ডপে আসেন। মাস্ক ছাড়া কেউ মণ্ডপে যাতে প্রবেশ না করেন, তা দেখা হয়েছে। দিনে দু’বার করে স্যানিটাইজ করা হয়েছে মণ্ডপ চত্বর, দর্শনার্থীদের ঢোকার রাস্তা। ভগৎ সিং কলোনির পুজো কমিটির সদস্য সঞ্জয় সরকার বলেন, আমাদের পক্ষে যতটা করা সম্ভব হচ্ছে, আমরা করছি। মাস্ক ছাড়া কাউকেই মণ্ডপে ঢুকতে দেওয়া হয়নি। ভয় মহল দর্শনের মাঝে মাঝেই আমরা স্যানিটাইজ করছি। একইভাবে অন্যান্য পুজো কমিটিও নিজেদের ব্যবস্থাপনার কথা জানিয়েছে। জেলা পুলিসের ডিএসপি (হেড কোয়ার্টার) সমীর পাল বলেন, যে  পুজো মণ্ডপগুলিতে ব্যাপক ভিড়ের খবর মিলেছে, সেখানেই পুলিসের তরফে অতিরিক্ত বাহিনী নামিয়ে সামাল দেওয়া হয়েছে পরিস্থিতি। নিয়ন্ত্রণ করা হয়েছে যানবাহন চলাচল। গত কয়েকদিন ভোর সাড়ে ৩টে পর্যন্ত পুলিস রাস্তায় মোতায়েন থেকে ভিড় সামাল দিয়েছে।  কোথাও কোনও অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটার আগেই যথাযথ ব্যবস্থা নিয়েছে পুলিস। যাঁদের মাস্ক ছাড়া দেখা গিয়েছে, তাঁদের সতর্ক করা হয়েছে। তাঁর বক্তব্য, মানুষ যদি সতর্ক না হন, নিজের স্বাস্থ্যের ব্যাপারে খেয়াল না রাখেন, তাহলে কে কী করতে পারেন। 


জনস্বাস্থ্য দপ্তরের উত্তরবঙ্গের ওএসডি ডাঃ সুশান্ত রায় বলেন, ২০২০ সালের মার্চ মাস থেকে বলে আসছি, ভিড় এড়াতে হবে। মাস্ক পরতে হবে। করোনা নিয়ে এখনই হাল ছেড়ে দেওয়ার কোনও কারণ নেই। যাঁরা ভিড়ে যাচ্ছেন বা গিয়েছেন, তাঁদের  সংক্রামিত হওয়ার শঙ্কা থেকেই যায়। পুজোর আগে পর্যন্ত সংক্রমণ কমছিল। কিন্তু, কিছুদিন ধরে ফের সংক্রমণ বাড়ছে। কয়েকদিন আগে পর্যন্ত জেলার কোভিড হাসপাতাল বিশ্ববাংলা ক্রীড়াঙ্গণে তিন বা চারজন ভর্তি ছিলেন। এখন সেখানে ১১ জন ভর্তি রয়েছেন। তবে কালীপুজোর ভিড়ে কতটা সংক্রমণ বাড়ল তা বোঝা যাবে, আরও সপ্তাহ খানেক বাদে। 

TwitterFacebookWhatsAppEmailShare

#Corona, #covid 19, #jalpaiguri, #covid virus

আরো দেখুন