রাজ্য বিভাগে ফিরে যান

আবেগ আর অসংখ্য টুকরো স্মৃতিকে সাক্ষী করে বিধানসভায় স্মরণ সুব্রত মুখোপাধ্যায়কে

November 9, 2021 | 2 min read

আবেগ আর অসংখ্য টুকরো স্মৃতিকে সাক্ষী করে এক ভাবগম্ভীর পরিবেশে রাজ্য বিধানসভা স্মরণ করল প্রয়াত সুব্রত মুখোপাধ্যায়কে। আর তাঁকে ঘিরেই কিছু সময়ের জন্য হলেও পরিষদীয় গণতন্ত্রে একান্ত কাম্য পারস্পরিক সৌজন্যের আবহ দেখা গেল সোমবার। সেই আবহে বাংলার অন্যতম সফল এই রাজনীতিবিদের রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক দক্ষতার কথা উঠে এল শাসক-বিরোধী সবার বক্তব্যেই। গত বৃহস্পতিবার প্রয়াত হন পঞ্চায়েতমন্ত্রী। এতে শোকাহত মুখ্যমন্ত্রী। একসময় যাঁর হাত ধরে দুর্বার আন্দোলনের পাঠ নিয়েছিলেন এইভাবে হঠাৎ তাঁর চলে যাওয়া মানতে পারছেন না মমতা। তাই সুব্রতবাবুর মরদেহ একবারের জন্যও দেখেননি তিনি। এমনকী, এদিন বিধানসভার স্মৃতিচারণ পর্বেও অনুপস্থিত ছিলেন। বিকেলে অবশ্য বিশ্ববাংলা কনভেনশন সেন্টারে পুজোর উদ্যোক্তাদের নিয়ে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে ধরা গলায় একডালিয়া এভারগ্রিন ক্লাবের প্রাণপুরুষ ‘সুব্রতদা’র অভাব অনুভব করার কথা বলেন। 


সুব্রতবাবুর প্রয়াণে এদিন বিধানসভায় একটি বিশেষ প্রস্তাব আনা হয়। পেশ করেন অধ্যক্ষ বিমান বন্দ্যোপাধ্যায়। বিশেষ শোকপ্রস্তাব গ্রহণ ও তার উপর আলোচনার জন্য এদিনের পূর্ব নির্ধারিত কর্মসূচি স্থগিত রাখা হয়। পাশাপাশি সদ্য প্রয়াত প্রাক্তন মন্ত্রী রবিরঞ্জন চট্টোপাধ্যায়ের স্মৃতির প্রতি সম্মান জানিয়েও শোকপ্রস্তাব নেয় সদন। তবে চর্চা হয় সুব্রতবাবুকে নিয়ে আনা বিশেষ প্রস্তাবের উপর। 


শাসক দলের তরফে সুব্রতবাবুর সমবয়সি শোভনদেব চট্টোপাধ্যায়, অনুজ মানস ভুইঞা, পার্থ চট্টোপাধ্যায়, ফিরহাদ হাকিম, চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য প্রমুখ মন্ত্রী আলোচনায় অংশ নেন। অংশ নেন প্রয়াত নেতার সাহচর্য পেয়ে ছাত্র রাজনীতিতে হাত পাকানো সুব্রত সাহা, দেবাশিস কুমার, অশোক দেব প্রমুখ তৃণমূল বিধায়ক। তাঁদের সকলের কথাতেই ছয়ের দশক থেকে প্রিয়রঞ্জন দাশমুন্সির সঙ্গে জুটি বেঁধে সুব্রতবাবুর ছাত্র রাজনীতিতে বাংলাজুড়ে ঝড় তোলার অধ্যায় ফুটে ওঠে। সেই আমলে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে প্রবল শক্তিশালী বাম ছাত্র সংগঠনকে কীভাবে তাঁরা মোকাবিলা করতেন এই ডাকাবুকো নেতার বুদ্ধিতে তার সবিস্তার উল্লেখ করেন। রাজনীতির নিয়মে মাঝে শিবির বদলালেও কখনও ব্যক্তিগত সম্পর্কে ছেদ পড়েনি বলেও বন্ধু হারানোর শোকে মুহ্যমান শোভনদেবের মতো কেউ কেউ। সংখ্যায় কম থাকলেও সেই আমলে ‘ছাত্র পরিষদ জিন্দাবাদ’ বলার সাহস ‘সুব্রতদা’র কাছ থেকেই পেয়েছিলেন বলে উল্লেখ করেন পার্থবাবুরা। ইন্দিরা গান্ধীর সঙ্গে প্রয়াত নেতার ঘনিষ্ঠতার প্রসঙ্গও উঠে আসে তাঁদের অনেকের স্মৃতিচারণায়। ঠাঁই পায় তাঁর রসবোধের কথাও। 


অধ্যক্ষ কিন্তু সৌজন্যের আবহের সুর ‌এ঩দিন গোড়াতে বেঁধে দেন প্রথম বক্তা হিসেবে বিজেপির মুখ্য সচেতক মনোজ টিগ্গাকে বক্তা হিসেবে আমন্ত্রণ জানিয়ে। পরে সদনে উপস্থিত হয়ে সেই সুযোগ পান বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীও। বক্তব্য রাখেন গেরুয়া শিবিরের অপর বিধায়ক মিহির গোস্বামীও। সবচেয়ে তরুণ বিধায়ক আইএসএফের নৌসাদ সিদ্দিকি তাঁকে শ্রদ্ধা জানাতে গিয়ে ‘একজন রাজনৈতিক অভিভাবক’ বলে উল্লেখ করেন। রাজনীতিক ও প্রশাসক সুব্রতবাবুর দক্ষতার স্বীকৃতিতে অকপট ছিলেন সকলেই। সর্বোপরি, পরিষদীয় গণতন্ত্র এবং প্রথা সম্পর্কে অত্যন্ত অভিজ্ঞ প্রয়াত নেতাকে বাংলার রাজনীতির এক উজ্জ্বল জ্যোতিষ্ক বলেই অভিহিত করেন অধ্যক্ষ।

TwitterFacebookWhatsAppEmailShare

#Subrata Mukherjee, #WB Legislative Assembly, #RIP

আরো দেখুন