ভাঙড়ে জমি হারাচ্ছে আইএসএফ, নতুন করে ভিত শক্ত হচ্ছে তৃণমূলের
গত কয়েকদিনে শিরোনামে ভাঙড়। আইএসএফ (ISF) -তৃণমূলের (TMC) সংঘর্ষ, হামলা-পাল্টা হামলা, পুলিশি ধরপাকড়, বোমা-গুলিতে ত্র্যস্ত এলাকা। তবে গত কয়েকদিনের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে প্রতীয়মান ভাঙড়ের (Bhangar) ভাঙাগোড়ার খেলা। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, ভাঙাগড়ার খেলায় ভাঙড়ে জমি হারাচ্ছে আইএসএফ। আর নতুন করে ভিত শক্ত করছে তৃণমূল।
ধীরে ধীরে গড় ছোট হচ্ছে সংযুক্ত মোর্চার। আইএসএফ যে ভাঙড়কে ঘিরে গোটা রাজ্যে আধিপত্য বিস্তারের চেষ্ঠা করেছিল ভাঙড়ের সেই গড় তাসের ঘরের মত ভেঙে পড়ছে। ভাঙড় বিধানসভা এলাকার পোলেরহাট ভোগালি সানপুকুর প্রাণগঞ্জ নারায়ণপুর-সহ একাধিক অঞ্চলে আইএসএফ ছেড়ে তৃণমূল কংগ্রেসে যোগ দিচ্ছে কর্মী সমর্থকরা।
তাঁদের মনবল ফেরাতে আব্বাস সিদ্দিকি কি ভাঙড়ে সভা করা চেষ্টা করছে? উঠছে প্রশ্ন। দীর্ঘদিন ভাঙড় বিধানসভা কেন্দ্রের আইএসএফ বিধায়ক নওশাদ সিদ্দিকি বিধানসভা এলাকায় ঢুকতেই পারেনি। ভাঙড়ের মাঝেরহাটে নাম মাত্র একটি ঘর ভাড়া নিলেও সেখানে তাঁকে পাওয়া যায়না। বিধায়ককে না পেয়ে দল ছাড়ছে কর্মী সমর্থকরা? না কি এর পিছনে আছে অন্য কারণ! খোঁজ নিয়েছে টিভি ৯ বাংলা।
২০২১ বিধানসভা ভোটে ভাঙড় বিধানসভা কেন্দ্র থেকে নিকটতম তৃণমূল কংগ্রেস প্রার্থী রেজাউল করিমের থেকে ২৬ হাজার ২১৩টি ভোট বেশি পেয়ে জয় পেয়েছিলেন সংযুক্ত মোর্চার আইএসএফ প্রার্থী নওশাদ সিদ্দিকি। দক্ষিণ ২৪ পরগণার ৩১টি বিধানসভা কেন্দ্রের মধ্যে তৃণমূলের হাত ছাড়া হয়েছিল ভাঙড়। সারা রাজ্যে সংযুক্ত মোর্চা এই ভাঙড় বিধানসভাই শুধু মুখ রক্ষা করতে পেরেছে।
স্বাভাবিক ভাবে ভাঙড়কে ঘিরে আইএসএফের উন্মাদনা ছিল প্রথম থেকেই। কিন্তু পদে পদে বাঁধা। ইয়াসের পর ভাঙড় থানায় বিধায়ক বৈঠক করতে আসলে বয়কট করেন প্রশাসন। থানার বাইরে নওসাদকে ঘিরে বিক্ষোভ দেখান তৃণমূল কর্মী সমর্থকরা। দু-এক জায়গায় বিধায়ক সাধারণ মানুষের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করে তাঁদের অভাব অভিযোগ শুনলেও বাস্তবায়ন করতে পারেনি কিছুই।
বিধায়ক হিসাবে ভাঙড় এলাকায় কিছুই করতে পারেনি নওশাদ, এমনটি অভিযোগ বিরোধীদের। অন্য দিকে সরকারি পরিষেবা না দেওয়ার ভয় দেখিয়ে তৃণমূল কংগ্রেসে যোগদান করাচ্ছে তৃণমূলের নেতারা, অভিযোগ আইএসেফের। রাজনৈতিক এই পেক্ষাপটে আব্বাস সিদ্দিকি রবিবার ভাঙড়ের পদ্মপুকুরে সভা করতে আসার পথে পুলিশ ও আব্বাস অনুগামীদের মধ্যে খণ্ডযুদ্ধ বাঁধে। সোমবার ভাঙড়ের জয়পুরে সভা বাতিল করেন আব্বাস অনুগামীরা।
এলাকার তৃণমূল নেতা আরাবুল ইসলাম দাবি করছেন, “একটা ধর্মীয় আবেগ নিয়ে আইএসএফ সাধারণ মানুষের বিশ্বাস অর্জন করেছিল হয়তো, কিন্তু বর্তমান যা পরিস্থিতি, তাতে আইএসএফ কোনও প্রতিশ্রুতিই পূরণ করতে পারেনি।”
পরিসংখ্যান বলছেন, গত নির্বাচনে ২৬ হাজারের বেশি ভোট নিয়ে ক্ষমতায় এসেছিল আইএসএফ। আর ১৫ শতাংশ ভোট কমেছিল তৃণমূলের। তাহলে কি সত্যিই পুরোটাই আবেগে? কিন্তু এখন এর প্রেক্ষিতে তৃণমূল নেতা কোহিনুর মজুমদার বলেন, “আইএসএফ নির্বাচনমুখী দল। যে দলটা সারা বছর মানুষের কাছে থাকে। আইএসএফের নীতি আদর্শ কিছুই নেই। মানুষ আবেগের বশে ভোট দিয়েছে। তবে মানুষের দুর্যোগে আইএসএফ পাশে নেই। পঞ্চায়েত নির্বাচনের আগে আইএসএফ বলে যে কোনও দল ছিল, সেটাই আর থাকবে না।”
এলাকারই এক আইএসএফ কর্মী বলেছেন, “আমাদের ভয় দেখানো হয়। কিন্তু আমরা মনেপ্রাণে আইএসএফ করি, ওটাই করব।” তৃণমূলের যোগ দিয়ে আরেক আইএসএফ কর্মীর বিস্ফোরক উক্তি, “আইএসএফ করতাম একসময়ে। কিন্তু তখন আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা কেস দিয়েছে। আমার বাড়িতে হামলা চালিয়েছে। এখনও সরকারি কোনও সুযোগ সুবিধাই পাইনা।”
এদিকে, আবার আরাবুল ইসলাম বলছেন, “ভাঙড়ের অনেক অঞ্চল থেকে শয়ে শয়ে আইএসএফ কর্মীরা তৃণমূলে যোগ দিয়েছেন। তাঁদের ভয় দেখাতেও হয়নি, মারতেও হয়নি। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উন্নয়ন পরিষেবা দেখেই তৃণমূলে যোগ দিয়েছে। তাঁরা বুঝতে পারছেন ভুল করেছে আইএসএফ করে। তাই ফিরছেন।”
কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে ভোট ধরে রাখা কতটা চ্যালেঞ্জের আইএসএফের? এই নিয়ে এক আইএসএফ নেতা বিশ্বজিত্ মাইতি বলেন, “বাংলার ২৯৪ জন এমএলএ, এক জন বিধায়ককে ভয় পাচ্ছেন। ভাঙড়ে যখন ওরা পেরে উঠছে না, তখন পুলিশকে সঙ্গে নিয়েই সন্ত্রাস হচ্ছে। ভাঙড়ে তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব সবাই জানে। আরাবুল কিংবা কাইজার কখনই নিজেদের কথা বলেনি। বলতেও পারেনি। আমরা ধর্ম নিরপেক্ষতার কথা বলছি। আমরা পরিবর্তনের কথা বলছি। দলের স্ট্র্যাটেজি আমরা সবাইকে বলব না। তবে বিধায়ক এলাকায় যাচ্ছেন।”
এদিকে, ভাঙড়ে রাজনৈতিক উত্তাপের মধ্যেই নতুন করে ঘি ঢালল তৃণমূল যুবনেতার বিতর্কিত মন্তব্য। দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলার তৃণমূল যুব কংগ্রেসের সভাপতির বক্তব্য, রাজ্যের পুলিশ-প্রশাসন থেকে কাশীপুর, কেএলসি থানার আইসি – সবই তাঁদের হাতে। যে মাঠ ঘিরে রবিবার ভাঙড়ের ভোজেরহাটে আব্বাস সিদ্দিকী অনুগামী ও পুলিশের খণ্ডযুদ্ধের ঘটনা ঘটেছিল, সেই মাঠে ফুটবল খেলার উদ্বোধনে এসে এমন বক্তব্য করেন অভীক মজুমদার। সেই বক্তব্য এখন ভাইরাল।