২ বছর পর আবার শুরু দীক্ষাদান জয়রামবাটিতে
প্রায় দু’বছর পর জয়রামবাটিতে পুনরায় ভক্তদের দীক্ষাদান শুরু হয়েছে। মাতৃমন্দির সূত্রে জানা গিয়েছে, করোনা পরিস্থিতির জন্য এতদিন দীক্ষাদান বন্ধ ছিল। বহু ভক্ত মঠের শিষ্যত্ব গ্রহণের জন্য অপেক্ষা করছিলেন। তাঁদের কথা ভেবে পুনরায় দীক্ষাদান পর্ব শুরু করা হয়েছে। শুধু জয়রামবাটি নয়, কামারপুকুর, কাশীপুর, বাগবাজার সহ বেলুড় মঠের বিভিন্ন শাখায় দীক্ষাদান শুরু হয়েছে। চেন্নাই সহ দেশের বিভিন্ন মঠ, এমনকী বিদেশের মঠেও দীক্ষাদান পর্ব শুরু হয়েছে। বেলুড় মঠের ভাইস প্রেসিডেন্ট শ্রীমৎ স্বামী গৌতমানন্দজি মহারাজের কাছ থেকে বুধবার ও বৃহস্পতিবার জয়রামবাটিতে অনেকই দীক্ষা নিয়েছেন। দীর্ঘদিন পর দীক্ষা নেওয়ার সুযোগ পাওয়ায় ভক্তরা ভীষণ খুশি। জয়রামবাটি মাতৃমন্দিরের অ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি স্বামী যুগেশ্বরান্দজি মহারাজ বলেন, করোনার জন্য প্রায় দু’বছর দীক্ষাদান বন্ধ ছিল। বর্তমানে পরিস্থিতি অনেকটাই স্বাভাবিক হয়েছে। ইতিমধ্যে বহু জায়গা থেকে ভক্তদের অনুরোধ এসেছে। সেই মতো দীক্ষাদান শুরু করা হয়েছে। বেলঘরিয়ায় প্রথম শুরু হয়। তারপর মঠের অন্যান্য শাখাতেও তা শুরু হয়েছে। বেলুড় মঠের ভাইস প্রেসিডেন্ট বর্তমানে জয়রামবাটিতে আছেন। তিনি বুধবার ও বৃহস্পতিবার ভক্তদের দীক্ষাদান করেছেন। চলতি মাসের ১৬ এবং ১৭তারিখ মাতৃমন্দিরে পুনরায় দীক্ষাদান হবে। দীক্ষাগ্রহণের জন্য কোভিডের দু’টি ডোজ নেওয়া বাধ্যতামূলক। অথবা দীক্ষা নেওয়ার ৭২ঘণ্টা আগে করোনা টেস্টের রিপোর্ট নেগেটিভ হওয়া দরকার।
মাতৃমন্দির সূত্রে জানা গিয়েছে, রামকৃষ্ণ মঠের লক্ষ লক্ষ ভক্ত দেশ ও বিদেশে ছড়িয়ে রয়েছে। প্রতিবছর বিভিন্ন সময়ে নির্দিষ্ট দিনে ভক্তরা মঠে এসে দীক্ষা নেন। তার জন্য ইচ্ছুক ভক্তরা মঠের বিভিন্ন শাখায় আগে থেকে যোগাযোগ করেন। রামকৃষ্ণ মঠের প্রধান কেন্দ্র বেলুড় সহ কাশীপুর, জয়রামবাটি, কামারপুকুর প্রভৃতি জায়গায় নিয়মিত দীক্ষাদান হয়। এছাড়াও অন্যান্য শাখা কেন্দ্রেও বছরে এক থেকে দু’বার তা হয়। বিদেশের ক্ষেত্রে কোনও কোনও সময় বিশেষ প্রতিনিধি মারফত দীক্ষাদান করা হয়। দীক্ষা গ্রহণের জন্য ভক্তরা মঠের ইমেলে অথবা চিঠি পাঠিয়ে আবেদন করতে পারেন।
মঠের যে কোনও মহারাজ দীক্ষাদান করতে পারেন না। বেলুড় মঠের প্রেসিডেন্ট এবং পাঁচজন ভাইস প্রেসিডেন্ট রয়েছেন। কেবলমাত্র তাঁরাই দীক্ষাদান করতে পারেন। তাঁরা বিভিন্ন শাখা কেন্দ্র পরিদর্শন করেন। তখন দীক্ষাদানের ব্যবস্থা করা হয়।
মাতৃমন্দিরের মহারাজরা বলেন, জাতি-ধর্ম নির্বিশেষে যে কেউ ঠাকুরের আদর্শ মেনে দীক্ষাগ্রহণ করতে পারেন। যাঁরা ঠাকুর রামকৃষ্ণ, মা সারদা ও স্বামী বিবেকানন্দের আদর্শ মেনে জীবন গড়ে তুলতে চান, তাঁরা স্বতঃস্ফূর্তভাবে দীক্ষাদানের ইচ্ছাপ্রকাশ করেন। আবেদন করার পর মঠের পক্ষ থেকে ভক্তদের প্রাথমিক কাউন্সেলিং করা হয়। সবার আগে ঠাকুর, সারদা মা ও স্বামীজির জীবনকাহিনি পড়েছেন কি না, তা জিজ্ঞাসা করা হয়। দীক্ষা নেওয়ার আগ্রহ হল কেন, তাও জানতে চাওয়া হয়। তাছাড়া দীক্ষা নেওয়ার পর আবেদনকারী মঠের বিভিন্ন নিয়ম রক্ষা করতে পারবেন কি না, সেটাও বোঝার চেষ্টা করা হয়। সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে তাঁদের কিছু বইপত্র পড়ার উপদেশ দেওয়া হয়। তারপর নির্দিষ্ট দিনে মঠে আসার জন্য বলা হয়।