বাংলায় ছয়টি রুটে ছুটবে ৫০টি বেসরকারি ইলেকট্রিক বাস
নতুন বছরেই রাজারহাটকে কেন্দ্র করে ছ’টি রুটে সরকারি ভর্তুকি নিয়ে ছুটবে বেসরকারি ইলেকট্রিক বাস। টেন্ডারের শর্ত মতো ৫০টি বাস নামানোর কথা বেসরকারি সংস্থা ফোটন মোটর ইন্ডিয়া (পিএমআই) ইলেকট্রো মোবিলিটি সলিউশন্স প্রাইভেট লিমিটেডর। রুটগুলি হলো: ১) সাপুরজি-হাওড়া, ২) সাপুরজি-ইডেন সিটি, ৩) নিউ টাউন-পার্ক সার্কাস, ৪) ইকোস্পেস-সাঁতরাগাছি, ৫) সাপুরজি-এয়ারপোর্ট এবং ৬) ইকোস্পেস-বাঙুর। প্রশাসনের কর্তাদের বক্তব্য, এই উদ্যোগ কেন্দ্রীয় ভারী শিল্প মন্ত্রকের দ্বিতীয় দফার ফাস্টার অ্যাডপশান অফ ম্যানুফ্যাকচারিং (হাইব্রিড) অফ ইলেকট্রিক ভেহিকেল্স বা ফেম কর্মসূচিতে পরিবহণ ক্ষেত্রে সরকারি ভর্তুকি দেওয়ার এক নতুন প্রক্রিয়া চালু করবে। ফেম-এর এই নয়া মডেলকে সামনে রেখেই আমেদাবাদ ও পুনেতে ইলেকট্রিক বাস চালাচ্ছে হরিয়ানার ওই বেসরকারি বাস নির্মাতা সংস্থা।
দ্বিতীয় দফার ফেম প্রকল্পে দূষণ নিয়ন্ত্রণে ইলেকট্রিক বাসে ভর্তুকি দেওয়ার কথা বলা হয়। ভর্তুকি শুধু কেন্দ্রীয় সরকার নয়, রাজ্য সরকারকেও দিতে হবে। এ ক্ষেত্রে কার্যকারিতা বাড়াতে বদলে দেওয়া হয়েছে ভর্তুকির মডেল। কেন্দ্রীয় সরকার ইলেকট্রিক বাস কেনার জন্য ৪০ শতাংশ অর্থিক সাহায্য দেবে। শর্ত হলো, রাজ্য সরকারের নির্ধারণ করা ভাড়ায় নির্দিষ্ট রুটে কমপক্ষে ১০ বছর সেই বাস চালাতে হবে। কিন্তু সেই ভাড়ায় বাস চালাতে গিয়ে বেসরকারি সংস্থা যাতে লোকসানের শিকার না-হয় তার নিশ্চয়তা দেবে রাজ্য।
কী পদ্ধতিতে রাজ্য ভর্তুকি দেবে?
বাসের চালক ও পরিকাঠামো বেসরকারি সংস্থার হাতে থাকলেও কন্ডাক্টর দেবে রাজ্য সরকার। অর্থাৎ, পশ্চিমবঙ্গ পরিবহণ নিগম কন্ডাক্টর নিয়োগ করবে। বাসের টিকিট বিক্রির টাকা কন্ডাক্টর বেসরকারি সংস্থার বদলে সরাসরি নিগমকে জমা দেবে। গড়ে প্রত্যেক মাসে প্রতিটি বাস ন্যূন্যতম পাঁচ হাজার কিলোমিটার চালাতে হবে। বিশেষজ্ঞ কমিটি দিয়ে বাসের প্রতি কিলোমিটার চলার খরচ নির্ধারণ করা হয়েছে- ৮৬ টাকা। এই হিসেবে প্রত্যেক মাসের ১ তারিখ বেসরকারি সংস্থাকে ভাড়া মিটিয়ে দেবে রাজ্য সরকার। বাস পিছু পশ্চিমবঙ্গ পরিবহণ নিগমকে মাসে নূন্যতম ৪ লক্ষ ৩০ হাজার টাকা মেটাতে হবে। টিকিট বিক্রির টাকা থেকে সেই খরচ উঠলে ভালো। না-উঠলে নিগম নিজের ঘর থেকে বেসরকারি সংস্থাকে টাকা মেটাবে। এটাই রাজ্য সরকারের ভর্তুকি দেওয়ার পদ্ধতি। এই মডেলে রাজারহাটকে কেন্দ্র করে ৫০টি বাস বরাদ্দ করা হয়েছে দ্বিতীয় দফার ফেম প্রকল্পে। যা এখনও চালু হয়নি। একই সঙ্গে শিল্পাঞ্চল আসানসোল-দুর্গাপুরের জন্য ২৫টি ও শিলিগুড়ির জন্য আরও ২৫টি ইলেকট্রিক বাস বরাদ্দ হয়েছে দ্বিতীয় দফার ফেম প্রকল্পে।
রাজারহাটকে ঘিরে ছ’টি রুটে ৫০টি ইলেকট্রিক বাস চালানোর জন্য ২০১৯ সালেই তিন দফায় টেন্ডার ডেকে বেসরকারি সংস্থা নির্বাচন ও চুক্তি হয়ে গিয়েছিল। নির্বাচিত হয়েছিল পিএমআই ইলেকট্রো মোবিলিটি সলিউশন্স প্রাইভেট লিমিটেড। ২০২০ সালের ১৫ জুলাই থেকে ২০২১ সালের ১৫ জানুয়ারির মধ্যে তাদের ৫০টি ইলেকট্রিক বাস নির্ধারিত ছ’টি রুটে নামানোর কথা ছিল। কিন্তু অতিমারী পরিস্থিতি সব বানচাল করে দেয়। অবশেষে এই বছর সেপ্টেম্বর মাসে তারা পরীক্ষামূলক ভাবে একটি বাস চালিয়েছে। বাসের গুমটি করার জন্য জমি এবং নিজস্ব ইলেট্রিক চার্জিং স্টেশন তৈরির জন্য বিদ্যুৎ সংযোগ চেয়েছে সংস্থাটি। পরিবহণ দপ্তরের কর্তারা মনে করছেন, আগামী ফেব্রুয়ারির মধ্যেই ছ’টি রুটে নয়া ভর্তুকি মডেল নিয়ে বেসরকারি ইলেকট্রিক বাস পথে নামবে। কিন্তু এই মডেলে আসানসোল-দুর্গাপুর ও শিলিগুড়িতে ইলেকট্রিক বাস চালানো নিয়ে টেন্ডার হলেও আগ্রহী সংস্থা মিলছে না।