কোভিডকালে স্পেশাল ট্রেনে সুবিধা শুল্ক, বেশি ভাড়া নিয়ে আয় বাড়িয়েছে বিজেপির সরকার
কেন্দ্রে প্রথমবার ক্ষমতায় এসেই ট্রেনের অনলাইন টিকিট (ই-টিকিট) বুকিংয়ের সুবিধা-শুল্ক (কনভেনিয়েন্স ফি অথবা সার্ভিস চার্জ) প্রায় দ্বিগুণ বৃদ্ধি করেছিল মোদী সরকার। পরবর্তী ক্ষেত্রে তিন বছর এই কনভেনিয়েন্স ফি সংগ্রহ বন্ধ রাখা হলেও এর পরিমাণ কিছুটা কমিয়ে ফের তা চালু করেছে কেন্দ্র। এমনকী করোনা পরিস্থিতিতেও স্পেশাল ট্রেনের যাত্রীদের ই-টিকিট বুকিংয়ের ক্ষেত্রে আলাদা করে দিতে হয়েছে এই ‘সুবিধা শুল্ক’। কেন্দ্র অবশ্য সাফ জানিয়ে দিচ্ছে যে, এই কনভেনিয়েন্স ফি’র পরিমাণ ফের কমানো কিংবা বন্ধ করার কোনও প্রস্তাব আপাতত রেল বোর্ডের কাছে নেই। স্বাভাবিকভাবেই গোটা প্রক্রিয়াটিকে কেন্দ্র করে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। ট্রেনযাত্রীদের একটি বড় অংশের বক্তব্য, করোনা পরিস্থিতিতে শুধুমাত্র স্পেশাল ট্রেনে বেশি ভাড়া আদায় করেই ভাঁড়ার ভরেনি রেল। সুবিধা শুল্ক আদায় বাবদও আয়ের একটি বড় অঙ্ক জমা পড়েছে আইআরসিটিসির কোষাগারে।
রেলমন্ত্রকের অধীনস্থ আইআরসিটিসির (ইন্ডিয়ান রেলওয়ে কেটারিং অ্যান্ড ট্যুরিজম কর্পোরেশন) ওয়েবসাইট থেকে টিকিট বুকিং করলেই (ই-টিকিট) এই সার্ভিস চার্জ দিতে হয় যাত্রীদের। তবে যদি কোনও যাত্রী স্টেশনের পিআরএস কাউন্টার থেকে টিকিট (অর্থাৎ যা ই-টিকিট নয়) কাটেন, সেক্ষেত্রে ই-টিকিটের উল্লিখিত সুবিধা শুল্ক প্রযোজ্য হয় না। আইআরসিটিসি সূত্রে জানা যাচ্ছে, ২০১৪-১৫ সালে ট্রেনের নন-এসি ক্লাসের প্রতি ই-টিকিট পিছু সার্ভিস চার্জ ধার্য করা হতো ১০ টাকা। এবং এসি ক্লাসের ক্ষেত্রে এর পরিমাণ ছিল ই-টিকিট পিছু ২০ টাকা। ২০১৫-১৬ আর্থিক বছরে নন-এসি ক্লাসের জন্য প্রতি ই-টিকিটে সুবিধা শুল্ক ১০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ধার্য করা হয় ২০ টাকা। এবং এসি ক্লাসের জন্য ২০ টাকা থেকে বেড়ে প্রতি ই-টিকিটে সুবিধা শুল্ক কার্যকর হয় ৪০ টাকা। এর সঙ্গে অতিরিক্ত সার্ভিস ট্যাক্সও যোগ করে দেওয়া হয়। স্বাভাবিকভাবেই এর ফলে শুধু সার্ভিস চার্জ আদায় করেই রাজস্বের পরিমাণ একধাক্কায় অনেকটাই বাড়িয়ে নেয় রেল।
২০১৪-১৫ অর্থবর্ষে সার্ভিস চার্জ বাবদ যে আয়ের পরিমাণ ছিল ২৫৬ কোটি ৩৪ লক্ষ টাকা, ২০১৫-১৬ আর্থিক বছরেই তার পরিমাণ বৃদ্ধি পেয়ে হয় ৫৫১ কোটি ৪৯ লক্ষ টাকা। রেল সূত্রে জানানো হয়েছে, ২০১৬ সালের ২৩ নভেম্বর থেকে ২০১৯ সালের ৩১ আগস্ট পর্যন্ত কেন্দ্রীয় সরকারি নির্দেশে আইআরসিটিসি আর ই-টিকিট বুকিংয়ে সার্ভিস চার্জ আদায় করেনি। অর্থাৎ, নোট বাতিলের পরেই সাময়িকভাবে অনলাইন টিকিটের ক্ষেত্রে সুবিধা শুল্ক নেওয়া বন্ধ করে মোদী সরকার। ২০১৯ সালের ১ সেপ্টেম্বর থেকে ফের ট্রেনের ই-টিকিট বুকিংয়ে সুবিধা শুল্ক নেওয়া শুরু করে আইআরসিটিসি। নন-এসি ক্লাসের জন্য ই-টিকিট পিছু এই কনভেনিয়েন্স ফি ধার্য করা হয় ১৫ টাকা। এসি ক্লাসের জন্য ই-টিকিট পিছু ৩০ টাকা। জিএসটি অতিরিক্ত। বর্তমানে এসি ক্লাসের জন্য অনলাইনে টিকিট কাটলে একজন যাত্রীকে জিএসটি সহ সুবিধা শুল্ক দিতে হচ্ছে প্রতি টিকিটে ৩৫ টাকার কিছু বেশি। নন-এসির ক্ষেত্রে জিএসটি সহ এর পরিমাণ প্রায় ১৭ টাকা। তবে ভীম অ্যাপ কিংবা ইউপিআই থেকে টিকিট বুক করলে সুবিধা শুল্কর পরিমাণ ১০ টাকা (নন-এসি) এবং ২০ টাকাই (এসি) রাখা হয়েছে। আইআরসিটিসির গ্রুপ জেনারেল ম্যানেজার (জিজিএম) সন্দীপ ত্রিবেদী বলেন, ‘বর্তমানে যে হারে সুবিধা শুল্ক নেওয়া হচ্ছে, তা অনেকদিন ধরেই কার্যকর আছে। আপাতত এর পরিমাণ কমানোর কোনও প্রস্তাব নেই।’ উল্লেখ্য, ২০২০-২১ অর্থবর্ষে, অর্থাৎ করোনা পরিস্থিতিতে সার্ভিস চার্জ বাবদ আইআরসিটিসির আয় হয়েছে ২৯৯ কোটি টাকা। এবং ২০২১-২২ অর্থবর্ষের আগস্ট পর্যন্ত এই আয়ের পরিমাণ ২২৪ কোটি টাকা। ২০১৯-২০ অর্থবর্ষ থেকেই সুবিধা শুল্ক বাবদ আদায়কৃত অর্থের শেয়ার রেলকে দিচ্ছে না আইআরসিটিসি।