রাজ্যে স্কুল খোলার প্রথম দিনেই হাজিরা ৭২ শতাংশ
চ্যালেঞ্জ স্বাভাবিকতায় ফেরার। সেই চ্যালেঞ্জটাই নিলেন অভিভাবকরা। করোনা-ভীতিকে পিছনের সারিতে ঠেলে সন্তানদের হাত ধরে, বাইকের পিছনে বসিয়ে তাঁরা পৌঁছে দিলেন স্কুলে, কলেজে। আর তাই স্কুলে ফেরার দিনেই হাজিরা ছাড়িয়ে গেল ৭২ শতাংশ। বিকাশ ভবনের হিসেব বলছে, কলেজের ক্ষেত্রে উপস্থিতির হার মঙ্গলবার ছিল ৭৮ শতাংশ, আর বিশ্ববিদ্যালয়ে ৮৫ শতাংশ। সামগ্রিক হিসেব আসার আগেই শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু বিকাশ ভবনে এ প্রসঙ্গে জানিয়েছেন, ক্যাম্পাস খোলার প্রথম দিনের হাজিরার নিরিখে এটাকে সাফল্য বলা না গেলেও এই হার অবশ্যই আশাব্যঞ্জক। তিনি আশাপ্রকাশ করেছেন, আগামী দিনে আরও বেশি সংখ্যক ছাত্রছাত্রী উদ্বুদ্ধ হয়ে ক্যাম্পাসে আসবেন।
তবে যেমন ইঙ্গিত মিলেছিল, স্কুল খোলার সময়সূচি মানার ক্ষেত্রে বাস্তবে হয়েছে সেটাই। শহরের অধিকাংশ স্কুলই এদিন পর্ষদ এবং সংসদের বেঁধে দেওয়া সময়সীমা মানতে পারেনি। হেয়ার স্কুলে সকাল ১১টা থেকে সাড়ে ১১টার মধ্যে নবম থেকে দশম শ্রেণির ক্লাস চালু করা গিয়েছে। আর হিন্দু স্কুলে ক্লাস শুরু হয়েছে ১২টা থেকে। হেয়ার স্কুলের প্রধান শিক্ষক জয়ন্ত ভট্টাচার্য বলেন, ‘ছাত্রছাত্রীরা অনেকেই দূর-দূরান্ত থেকে আসে। অনেকে উঁচু ক্লাসের ছাত্রছাত্রীদের সঙ্গে একই পুলকার ব্যবহার করে। অত সকালে অনেকে আসতে পারবে না বলে জানিয়েছিল। তাই সোমবার অভিভাবকদের সঙ্গে কথা বলে স্কুল চালুর সময়সীমা পিছনো হয়েছে। তবে, কোভিড বিধি মেনেই আলাদা সময়ে তাদের প্রবেশ করানো হয়।’ শহর এবং জেলার বহু স্কুলই মানতে পারেনি সকাল ১০টা এবং সকাল সাড়ে ১১টা থেকে ভাগে ভাগে স্কুল চালুর নির্দেশিকা। লোকবলের অভাবে বিকেল সাড়ে ৪টে পর্যন্ত ক্লাস করানো যাবে কি না, সে ব্যাপারেও অনিশ্চিত বহু প্রধান শিক্ষক। অনেক স্কুলে প্রথম দিনেই বিকেল সাড়ে ৪টে পর্যন্ত ক্লাস করানো যায়নি। কারণ, সেকশন ভাগ করে ক্লাস নেওয়ার মতো পর্যাপ্ত শিক্ষক তাদের হাতে ছিল না। উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা সংসদের চেয়ারম্যান চিরঞ্জীব ভট্টাচার্য বালিগঞ্জ শিক্ষা সদনে ঘুরে আসেন। অধিকাংশ স্কুলেই পড়ুয়াদের হাতে পেন বা ফুল তুলে দেওয়া হয়েছে। ছাত্রছাত্রীরা ফিরেছে স্কুলে… কেউ মেইন গেটে মাথা ঠেকিয়ে ভিতরে ঢুকেছে, কেউ ক্লাসে যাওয়ার মুখে থমকে দাঁড়িয়ে প্রণাম ঠুকেছে চৌকাঠে।
ঢোকার সময় করোনাবিধি মানা হলেও অধিকাংশ উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ক্যাম্পাসের ভিতরের ছবিটা উদ্বেগজনকই ছিল। কোভিড ভ্যাকসিনের দু’টি ডোজ নেওয়া থাকায় অনেকেই ডোন্ট কেয়ার মনোভাব দেখিয়েছেন। দীর্ঘদিন পর বন্ধুবান্ধবদের সঙ্গে দেখা হওয়ায় ব্যাকসিটে চলে গিয়েছিল করোনার আতঙ্ক। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রছাত্রীরা মাঠে, ক্যান্টিনে ভিড় করে গল্প জমিয়েছিলেন। মাঠে এনসিসি ক্যাডেটদের মহড়াও চলেছে সমান তালে। একই ছবি ছিল প্রেসিডেন্সি ক্যাম্পাসেও। প্রবেশের সময় কর্তৃপক্ষ যথেষ্টই সজাগ ছিল। তবে ঢুকে যাওয়ার পরে ছাত্রছাত্রীদের উপর তেমন কড়াকড়ি আরোপ করা হয়নি। ফলে তাঁরা ক্যাম্পাসের বিভিন্ন জায়গায় চুটিয়ে আড্ডা মেরেছেন। এদিন প্রেসিডেন্সির গেটে টিএমসিপির হেল্প ডেস্ক করার প্রতিবাদে স্লোগান দেয় পড়ুয়াদের একাংশ। মাস্ক, স্যানিটাইজার নিয়ে হেল্প ডেস্কে উপস্থিত ছিলেন টিএসসিপি রাজ্য সভাপতি তৃণাঙ্কুর ভট্টাচার্য, সহ-সভাপতি প্রান্তিক চক্রবর্তীরা। ডিন অব স্টুডেন্টস অরুণ মাইতির সঙ্গে তাঁদের দফায় দফায় আলোচনার পরে ঝামেলা মেটে। তবে ওই সময় আরও একবার শিকেয় ওঠে করোনাবিধি। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ুয়াদেরও দূরত্ববিধি নিয়ে বিশেষ মাথাব্যথা ছিল না।
বিদ্যাসাগর কলেজ প্রথম দিন ছাত্রছাত্রীদের সেভাবে ডাকেনি। একটি ডোজ নেওয়া ছাত্রছাত্রী তো বটেই, শিক্ষক এবং শিক্ষাকর্মীদেরও আনা হবে না বলে জানিয়েছেন অধ্যক্ষ গৌতম কুণ্ডু। বেথুন কলেজের প্রথম বর্ষের ছাত্রীরা বিদ্যাসাগর ভবনে ঢুকে গাদাগাদি করে দাঁড়িয়েছিলেন। আশুতোষ কলেজেও দেখা গিয়েছে একই ছবি। এর মধ্যে ব্যতিক্রমী চিত্র ছিল স্কটিশ চার্চ কলেজে। সেখানকার পড়ুয়ারা কিন্তু সংযমের পরিচয় দিয়েছেন। প্রধান গেটে দায়িত্বে ছিলেন সদ্য কলেজে যোগ দেওয়া সাইকোলজির এক শিক্ষিকা। তাঁর কাছেও কলেজ একেবারেই আনকোরা। প্রথম দায়িত্ব, ছেলেমেয়েদের সঠিক দিকে পাঠানো। আলাপ হতেই বললেন, মনোবিজ্ঞানের ছাত্রী বলেই জানি, এই ক্যাম্পাসে ফেরা কতটা জরুরি ছিল!