নারদকাণ্ডে সিবিআই-ইডির ভূমিকায় সদনের সম্মানহানি, ক্ষোভ অধ্যক্ষের
দুই কেন্দ্রীয় তদন্তকারী এজেন্সি সিবিআই এবং ইডি’র বিরুদ্ধে এবার বিধানসভার অধিবেশনেই ক্ষোভে ফেটে পড়লেন অধ্যক্ষ বিমান বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর অভিযোগ, এই পবিত্র সদন এবং তাঁর সাংবিধানিক পদকে এই দুই এজেন্সি চরম অসম্মান করেছে তাদের পাঠানো চিঠির ভাষা এবং কাজের মাধ্যমে। মঙ্গলবার অধ্যক্ষ বিস্ফোরক ভাষায় এই ক্ষোভ ব্যক্ত করতে গিয়ে চার পাতার লিখিত বিবৃতি পাঠ করেন সদনে। শাসক তৃণমূল ও বিরোধী বিজেপি’র বিধায়কদের কাছে তিনি সবিস্তারে ব্যাখ্যা করেন তাঁর এই ক্ষোভের অবস্থান। রাজ্য বিধানসভার ইতিহাসে কোনও কেন্দ্রীয় তদন্তকারী এজেন্সি সম্পর্কে অধ্যক্ষের এহেন বিবৃতি নজিরবিহীন বলেই জানাচ্ছেন পরিষদীয় রীতিনীতি সম্পর্কে ওয়াকিবহাল লোকজন। তবে অধ্যক্ষের এহেন কড়া বিবৃতি নিয়ে দুই এজেন্সির তরফে সরকারিভাবে কিছু বলা হয়নি। যদিও একান্তে তাদের আধিকারিকরা এখনও অনড় অবস্থান নিয়েই চলার ইঙ্গিত দিয়েছে।
নারদকাণ্ডে বর্তমান পরিবহণমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম ও বিধায়ক মদন মিত্র এবং প্রয়াত পঞ্চায়েতমন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে সিবিআই-ইডি তাঁর অনুমোদন ছাড়াই আদালতে চার্জশিট দেওয়ায় মাস আড়াই আগেই প্রবল আপত্তি তুলেছিলেন অধ্যক্ষ। এই ইস্যুতে দুই এজেন্সির সঙ্গে তাঁর দ্বৈরথ হাইকোর্ট পর্যন্ত গড়ায়। উচ্চ আদালতের সর্বশেষ নিদান অনুযায়ী দুই এজেন্সির আধিকারিকদের আপাতত অধ্যক্ষের কাছে হাজিরা দিতে হবে না। এই পরিস্থিতিতে এদিন খানিকটা আচমকাই অধ্যক্ষ অধিবেশনের প্রথমার্ধে তাঁর এই বিস্ফোরক বিবৃতি পাঠ করেন বিধায়কদের জ্ঞাতার্থে।
অধ্যক্ষ এদিন তাঁর বিবৃতিতে ছত্রে ছত্রে দুই এজেন্সির আচরণকে কাঠগড়ায় তুলেছেন। তাঁর বক্তব্য, নারদকাণ্ডে সিবিআই-ইডি অভিযুক্ত তিন বিধানসভা সদস্যের বিরুদ্ধে যেভাবে চার্জশিট দাখিল করেছে তা সংশ্লিষ্ট আইনের পরিপন্থী। এমনকী, অতীতে পিভি নরসিমারাও বনাম কেন্দ্রীয় সরকারের এই সংক্রান্ত একটি মামলায় সুপ্রিমকোর্টের দেওয়া রায়কেও তোয়াক্কা করা হয়নি এক্ষেত্রে। আইন এবং শীর্ষ আদালতের রায় মোতাবেক বিধানসভার সদস্যদের বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলায় চার্জশিট দেওয়ার আগে অধ্যক্ষের অনুমোদন নেওয়া আবশ্যিক। কিন্তু এক্ষেত্রে দুই এজেন্সি তার ধার ধারেনি। অথচ একই ধরনের অপর মামলায় হাইকোর্টে অতিরিক্ত সলিসিটর জেনারেল অভিযুক্ত সাংসদদের বিরুদ্ধে চার্জশিটের জন্য লোকসভা এবং রাজ্যের মন্ত্রী-বিধায়কদের ক্ষেত্রে বিধানসভার অধ্যক্ষের কাছে অনুমোদনের জন্য আবেদন করার কথা সওয়ালে উল্লেখ করেছেন। ফলে সিবিআই-ইডি’র দ্বিচারিতা এখানে দিনের আলোর মতো স্পষ্ট হয়েছে বলে তিনি জানান।
বিমানবাবু বিবৃতিতে বলেছেন, তাঁর তলবি-চিঠির জবাবে কেন্দ্রীয় এজেন্সিগুলি যে ভাষায় আক্রমণ করেছে তা কার্যত এই পবিত্র সদন এবং তাঁর সাংবিধানিক চেয়ারকে সরাসরি অবমাননার শামিল। পাশাপাশি তারা অধ্যক্ষের পদের কর্তৃত্ব নিয়েই প্রশ্ন তুলে দিয়েছে। দুই এজেন্সি তাদের কাজের মাধ্যমে সদনের সদস্যদেরই শুধু নয়, গোটা বাংলার মানুষকে ইচ্ছাকৃতভাবে অসম্মান করেছে। গত আড়াই মাসে কৃতকর্ম ব্যাখ্যা করার জন্য তাদের চারবার তলব করা হয়েছিল। কিন্তু তারা সে পথে না গিয়ে নিজেদের অবস্থানে অনড় থেকে অধ্যক্ষের পদকেই কার্যত চ্যালেঞ্জ জানিয়েছে। এই উপলক্ষে আমি স্পষ্ট জানাতে চাই, এজেন্সিগুলির তদন্তে হস্তক্ষেপ করার কোনও অভিপ্রায় আমার নেই। একইভাবে কোনও আদালতের এক্তিয়ারে হস্তক্ষেপ করার মনোভাব নিয়েও আমি সদনের সামনে এই বিবৃতি রাখছি না।