প্রবীণ নাগরিকদের অগ্রিম কাটা টিকিটের কনসেশন ফেরাচ্ছে না রেল
দেশের কোটি কোটি প্রবীণ নাগরিকের জন্য দুঃসংবাদ। স্পেশাল ট্রেনের তকমা ঝেড়ে স্বাভাবিকতায় ফিরলেও, সিনিয়র সিটিজেনদের কনসেশন আর ফেরাচ্ছে না রেল। এমনকী, ষাটোর্ধ্ব নাগরিকদের রেল টিকিটের উপর কনসেশন বা ছাড় পুরোপুরি তুলে দেওয়ার আশঙ্কাই প্রকট হয়েছে। ২০২০ সালের মার্চের তৃতীয় সপ্তাহ থেকে করোনার জন্য দেশজুড়ে ট্রেন চলাচল বন্ধ ছিল। বাড়তি ৩০ শতাংশ ভাড়া চাপিয়ে ‘স্পেশাল’ ট্রেন চালুর পর থেকেই প্রবীণ নাগরিক সহ সব মিলিয়ে ৩৪০ ধরনের কনসেশন উঠে যায়। প্রবল জনমতের চাপে সম্প্রতি রেলমন্ত্রক ফের প্রাক-করোনা ট্রেন পরিষেবা চালুর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। আর তারপরই ঝুলি থেকে বেরিয়ে পড়েছে বেড়াল। দেশজুড়ে এই মুহূর্তে ভারতীয় রেলের ‘কম্পিউটারাইজ সিস্টেম আপডেট’ প্রক্রিয়া চলছে। নয়া ব্যবস্থায় প্রবীণ নাগরিকদের ছাড়ের কোনও সংস্থান রাখা হয়নি। রেল মন্ত্রক সূত্রের দাবি, নয়া সিস্টেমে প্রবীণ নাগরিকেদের জন্য নির্দিষ্ট জায়গায় ‘কোভিড ক্যাপ’ লাগানো রয়েছে। অর্থাৎ বিশেষ এই ব্যবস্থায় টিকিট কাটার সময় স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতিতে কিংবা রেলকর্মীরা চাইলেও প্রবীণ নাগরিকদের ছাড় দিতে পারবেন না। এখানেই শেষ নয়, অগ্রিম প্রায় ৩০ শতাংশ বেশি টাকা দিয়ে টিকিট কেটে ফেলা যাত্রীরা ট্রেন স্বাভাবিক হলেও অতিরিক্ত সেই টাকা তাঁদের আর ফেরত দেবে না কেন্দ্র। সিস্টেমে সেই অপশনও কার্যত বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।
এ প্রসঙ্গে রেল বোর্ডের এক কর্তা বলেন, ২১ নভেম্বরের আগেই দেশজুড়ে ট্রেন পরিষেবা স্বাভাবিক হয়ে যাবে। অর্থাৎ সমস্ত ট্রেন ‘স্পেশাল’ তকমা হারিয়ে পুরনো ভাড়ায় ফিরবে। কিন্তু তা কার্যকর করতে স্বংয়ক্রিয় ব্যবস্থাকে ঢেলে সাজা একান্ত জরুরি হয়ে পড়েছিল। কারণ, করোনা পর্বে এখনও ট্রেনগুলির নম্বরের আগে ‘শূন্য’ বসানো রয়েছে। জুড়েছে বাড়তি ভাড়াও। পরিষেবা স্বাভাবিক করতে সেই ‘শূন্য’ তুলে সমস্ত ট্রেনের নম্বর ‘এক’ দিয়ে শুরু হচ্ছে। পাশাপাশি আগের ভাড়া সিস্টেমে ‘পুট’ করার প্রক্রিয়া চলছে।
কিন্তু নয়া সিস্টেমে টিকিট কাটার সময় ‘সিনিয়র সিটিজেন’ কনশেসন অপশন? তবে কি প্রবীণ নাগরিকদের ছাড় পুরোপুরি তুলে দেওয়া হল? জবাবে ওই প্রভাবশালী রেল কর্তা বলেন, বিষয়টি পুরোপুরি কেন্দ্রীয় সরকারের উপর নির্ভর করছে। সিস্টেমে ‘সিনিয়র সিটিজেন’-এর অপশনে ‘কোভিড ক্যাপ’ বসানোর ব্যাখ্যা দিয়েছে তিনি। বলেছেন, কেন্দ্রীয় সরকার চাইছে, প্রবীণ নাগরিকরা আপতত ট্রেন সফর এড়িয়ে চলুন। দেশের করোনা গ্রাফ নিম্নমুখী হলেও বৃদ্ধ-বৃদ্ধাদের বাড়িতে থাকারই পরামর্শ দিচ্ছে স্বাস্থ্যমন্ত্রক। সংশ্লিষ্ট মন্ত্রকের সঙ্গে আলোচনা করেই এই সিদ্ধান্ত বলেও জানান তিনি। রেলমন্ত্রকের অন্য একটি সূত্র কিন্তু জানাচ্ছে, প্রতি বছর প্রবীণ নাগরিকদের টিকিটের দামের উপর ছাড় দিতেই কয়েকশো কোটি টাকা খরচ হয়। নয়া এই সিদ্ধান্তে সেই টাকা বাঁচবে। পূর্ব রেলে দূরপাল্লার ট্রেন সব মিলিয়ে চলে ২২০টি। বুধবার পর্যন্ত আগের নম্বর ও ভাড়ায় সিস্টেমে আপডেট হয়ে গিয়েছে ১১০টি ট্রেন। দু’-একদিনের মধ্যেই এই জোনের সমস্ত ট্রেন প্রাক-করোনা পরিষেবায় ফিরে যাবে। কিন্তু তারপরও গোটা দেশের মতো প্রবীণরা ছাড় থেকে বঞ্চিত থাকবেন। ৩০ শতাংশ বেশি টাকায় অগ্রিম টিকিট কাটা যাত্রীরা সেই টাকাও ফেরত পাবেন না।