ত্রিপুরার হিংসা: রাষ্ট্রদ্রোহের মামলায় সাংবাদিক, আইনজীবীদের রক্ষাকবচ সুপ্রিম কোর্টের
রাষ্ট্রদ্রোহের আইন সাধারণ নাগরিকের বিরুদ্ধে সরকারের অস্ত্র হতে পারে না। এই সারসত্যটিই ফের রাষ্ট্রকে বুঝিয়ে দিল সুপ্রিম কোর্ট। ত্রিপুরার বিজেপি সরকারকে প্রবল ধাক্কা দিয়ে শীর্ষ আদালত জানাল, পরবর্তী নির্দেশ জারি না হওয়া পর্যন্ত তিন সাংবাদিক ও সমাজকর্মীর বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে পারবে না প্রশাসন।
তিনটি শব্দ লিখেছিলেন সাংবাদিক শ্যাম মীরা সিং—‘ত্রিপুরা ইজ বার্নিং’। ত্রিপুরা জ্বলছে। শুধু এই কারণেই তাঁর বিরুদ্ধে ইউএপিএ ধারায় মামলা দায়ের করেছে ত্রিপুরা সরকার। ওই রাজ্যের হিংসাত্মক পরিস্থিতি নিয়ে সরব হওয়ায় দুই আইনজীবী তথা সমাজকর্মী আনসার ইন্দোরি ও মুকেশের বিরুদ্ধেও কঠোর আইনি ব্যবস্থা নিয়েছে বিপ্লব দেব সরকার। এই অভিযোগকে চ্যালেঞ্জ করেই সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হন তাঁরা। তারই ভিত্তিতে এদিন সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি এন ভি রামনার নেতৃত্বাধীন বিচারপতি বি এস বোপান্না ও হিমা কোহলির বেঞ্চ পরিষ্কার জানিয়েছে, পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত মীরা সিং ও দুই সমাজকর্মীর বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহ মামলায় গ্রেপ্তারি বা কোনওরকম বলপূর্বক ব্যবস্থা নিতে পারবে না ত্রিপুরা পুলিস। এব্যাপারে নোটিসও পাঠিয়েছে বেঞ্চ।
গত মাসে বাংলাদেশে দুর্গাপুজোর সময় মন্দিরে ভাঙচুর ও সংখ্যালঘুদের উপর অত্যাচার চালানোর অভিযোগ ওঠে। সেই ঘটনার আঁচ পড়ে ত্রিপুরাতেও। তখন সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়া বেশ কিছু পোস্ট ও ‘ভুয়ো খবর’-এর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয় পুলিস। তারই শিকার শ্যাম মীরা সিং। শুধু তাই নয়, সুপ্রিম কোর্টের দুই আইনজীবী আনসারি ইন্দোরি ও মুকেশের বিরুদ্ধেও ইউএপিএ ধারা প্রয়োগ করে পুলিস। ওই দুই আইনজীবী হিংসা পরবর্তী সময়ে একটি সত্যানুসন্ধানী দলের সদস্য হিসেবে ত্রিপুরায় গিয়েছিলেন। তাঁদের বিরুদ্ধেও ‘ভুয়ো খবর’ ছড়ানোর অভিযোগে এফআইআর দায়ের করে পুলিস। গত ১১ নভেম্বর শীর্ষ আদালতে তাঁদের বিরুদ্ধে ইউএপিএ ধারা বাতিলের আবেদন জানান বিশিষ্ট আইনজীবী প্রশান্ত ভূষণ। সুপ্রিম কোর্ট তাঁদের আবেদন শুনতে রাজি হয়। মুকেশ তাঁর আবেদনে জানান, ‘ত্রিপুরায় হিংসার ঘটনা নিয়ে যে রিপোর্ট তৈরি করেছি, তার জন্য আমাদের বিরুদ্ধে এফআইআর দায়ের হয়েছে। শীর্ষ আদালতের রায় আমাদের স্বস্তি দিলেও, আমরা চাইছি এফআইআর তুলে নেওয়া হোক। সংখ্যালঘুদের বিরুদ্ধে হিংসার ঘটনা নিয়ে আমাদের অনুসন্ধানের তথ্য ছিল সম্পূর্ণ বাস্তবসম্মত। রিপোর্টে আপত্তিকর কিছু ছিল না। শীর্ষ আদালতে আমরা ন্যায় বিচার পাব বলে আশা করছি। আজ আমাদের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। আগামী দিনে অন্য কারও বিরুদ্ধেও হতে পারে। সত্যিটাকে আড়াল করতে ইউএপিএ’র অপব্যবহার করা হচ্ছে।’ গোটা ঘটনার তদন্ত যেন আদালতের তত্ত্বাবধানে চলে, তারও আবেদন করেন তিনি। আবেদনে জানানো হয়েছে, রাজ্য যেভাবে ইউএপিএকে ব্যবহার করে তথ্য অনুসন্ধানকারী দলকে অপরাধী বলে প্রমাণ করার চেষ্টা করছে, তাতে বাক স্বাধীনতার উপর ‘হাড় হিম করা প্রভাব’ পড়বে। এমনটা হলে কেবল সরকার যে তথ্যগুলি চাইবে, সেগুলিই প্রকাশ্যে আসবে বলে জানান মুকেশ। সাংবাদিক শ্যাম মীরা সিংয়ের যুক্তি ছিল, ‘ত্রিপুরা জ্বলছে, টুইটটি ছিল তথ্যভিত্তিক প্রতিবেদন।’
ত্রিপুরায় হিংসার ঘটনা নিয়ে এর আগেও একবার আদালতের ভর্ৎসনার মুখে পড়েছিল বিপ্লব দেবের পুলিস। সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট ঘিরে সমৃদ্ধি সাকুনিয়া ও স্বর্ণ ঝা নামে দুই মহিলা সাংবাদিককে সোমবার গ্রেপ্তার করেছিল পুলিস। ওইদিনই দুই সাংবাদিকের জামিন মঞ্জুর করে গোমতী জেলার আদালত।