নির্বাচনের প্রাক্কালে বিজেপির আইন প্রত্যাহারের রাজনীতি এই প্রথম না
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী শুক্রবার ঘোষণা করেছেন যে গত বছর পাশ করা তিনটি বিতর্কিত কৃষি আইন বাতিল করা হবে। দেশজুড়ে কৃষকদের বছরব্যাপী বিক্ষোভের পর এই ঘোষণা আসে।
এই নিয়ে দ্বিতীয়বার মোদী সরকার বিধানসভা নির্বাচনের আগে কোন বিল প্রত্যাহার করল।
এর আগে প্রথমবার ক্ষমতায় থাকাকালীন, প্রধানমন্ত্রী ঘোষণা করেছিলেন যে পূর্ববর্তী ইউপিএ সরকারের আনা জমি অধিগ্রহণ আইনে সংশোধনী আনার জন্য একটি অধ্যাদেশ প্রত্যাহার করা হবে। সেই সিদ্ধান্ত থেকেও সরকারকে সরে দাঁড়াতে হয়েছিল।
২০১৫ সালে বিহার নির্বাচনের দু মাস আগে মোদী সরকার ভূমি অধিগ্রহণ অধ্যাদেশটি বাতিল করার অনুমতি দিয়েছিল। উত্তরপ্রদেশ, পাঞ্জাব, গোয়া, উত্তরাখণ্ড এবং মণিপুর – পাঁচটি রাজ্যে ২০২২ সালের বিধানসভা নির্বাচনের আগে কৃষি আইন বাতিল করা ফের সেই ঘটনাই স্মরণ করাল। কৃষি আইন পাঞ্জাব উত্তর প্রদেশে একটি প্রধান নির্বাচনী ইস্যু হবে বলে আশা করা হয়েছিল।
আগস্ট ২০১৫-তে, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী তাঁর রেডিও ভাষণ ‘মন কি বাত’-এর সময় জমি অধিগ্রহণ অধ্যাদেশ বাতিল করার সরকারের সিদ্ধান্ত ঘোষণা করেছিলেন। সরকার এই আইনের সংশোধনের জন্য আর চাপ দেবে না বলে উল্লেখ করার সময়, প্রধানমন্ত্রী বলেছিলেন বিরোধী দল এবং রাজ্য সরকারগুলি কৃষকদের মধ্যে ভয় তৈরি করার চেষ্টা করেছিল।
সেই সময়ে, বিরোধী দলগুলি সংশোধনী আইনগুলির কঠোর সমালোচনা করেছিল এবং আইনগুলিকে ‘গরীব-বিরোধী’ বলে অভিহিত করেছিল।
২০১৩ সালে পাশ হওয়া ন্যায্য ক্ষতিপূরণ এবং স্বচ্ছতার অধিকারের জমি অধিগ্রহণ ও পুনর্বাসন আইন -এ সংশোধন করার জন্য যে অধ্যাদেশটি চালু করা হয়েছিল, তার ফলে কেন্দ্রীয় সরকার নির্দিষ্ট ধরণের সরকারি প্রকল্পের জন্যে জমি অধিগ্রহণের সময় সামাজিক প্রভাব এবং জনবিরোধ উপেক্ষা করার ক্ষমতা পায়।
কিন্তু এই আইন বিরোধীদের দ্বারা সমালোচিত হয়েছিল।
এই সময় কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী দলের সহ-সভাপতি ছিলেন। মোদী সরকারের বিরুদ্ধে তাঁর “স্যুট-বুট কি সরকার” মন্তব্যটি জনপ্রিয় হয়েছিল।
এই ক্ষেত্রেও বিরোধীরা নিজেদের দাবিতে অনড় থাকলেও মোদী দাবি করেছেন, যে কৃষি আইন বাতিল করার সিদ্ধান্তটি বিরোধীদের চাপে পড়ে নয় বরং কৃষক এবং সরকারের মধ্যে ঐক্যমতের অভাবের কারণে নেওয়া হয়েছে।
বিক্ষোভ শুরু হওয়ার পর থেকে, কৃষক দলগুলি এবং মোদী সরকারের একাধিকবার আলোচনা হলেও তা ফলপ্রসূ হয়নি।
অনেক বিজেপি নেতা এও বলেছেন যে কৃষক বিক্ষোভের আড়ালে খালিস্তানি এজেন্ডা প্রচার করা হচ্ছে।
এর ফলে, বিজেপি পাঞ্জাবে তার দীর্ঘ দিনের শরিক আকালি দল কেও হারিয়েছে। তারাও এই আইন সমর্থন করতে অস্বীকার করেছিল।
সম্প্রতি লখিমপুর খেরিতে ঘটা একটি ঘটনা বিজেপিকে আরও কোনঠাসা করে দেয়। সেখানে প্রতিবাদস্থলে বিক্ষোভকারী চার কৃষক এবং একজন সাংবাদিক সহ আটজনকে গাড়ির একটি কনভয় ধাক্কা মারে। আর এই ঘটনায় অভিযুক্ত বিজেপির কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর ছেলে।
বিরোধী দলগুলি যারা কৃষকদের আন্দোলন শুরু থেকে সমর্থন করে আসছে, তারা প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণার পরে কেন্দ্রীয় সরকারের এই সিদ্ধান্তকে নৈতিক জয় হিসেবে দাবি করে। কিন্তু সিদ্ধান্তটি গ্রহণের সময় নিয়েও প্রশ্ন তুলেছে রাজনৈতিকমহল। তাঁদের প্রশ্ন, বিক্ষোভ চলাকালীন ৭০০- রও বেশি কৃষকের মৃত্যুর জন্য দায়ী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে কি না।