দেশ বিভাগে ফিরে যান

আন্দোলনের মঞ্চে এসে বিল বাতিলের ঘোষনা করুন, মোদীকে চ্যালেঞ্জ কৃষকদের

November 20, 2021 | 2 min read

আপাত-অশক্ত শরীরে বাসা বেঁধেছে একাধিক বার্ধক্যজনিত রোগ। কিন্তু ৮৭ বছর বয়স হলেও মনে থাবা বসাতে পারেনি জরা। বসার ভঙ্গিমায় সবসময় শিরদাঁড়া টানটান। দৃষ্টি স্বচ্ছ। কথা বলেন সরাসরি চোখের দিকে তাকিয়ে। ক্লিন শেভড মুখ থেকে উঁকি দিচ্ছে আত্মবিশ্বাস। তাই সরাসরি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকেই চ্যালেঞ্জ ছুড়তে পিছপা হচ্ছেন না বিহারের মধুবনীর বাসিন্দা অবধেশকুমার ঝা। গত ফেব্রুয়ারি মাস থেকে একটানা পড়ে আছেন দিল্লি-উত্তরপ্রদেশের গাজিপুর সীমানায়। কৃষক আন্দোলন মঞ্চ আঁকড়ে। বললেন, ‘ভোট চাইতে ঘরে ঘরে যেতে পারেন নরেন্দ্র মোদি। একটিবার কিষান আন্দোলনের মঞ্চে আসতে পারছেন না? টিভিতে দেখলাম, কৃষকদের প্রতি অনেক সহানুভূতিপূর্ণ কথা বলে তিনটি কৃষি আইন প্রত্যাহার করার সিদ্ধান্ত ঘোষণা করেছেন তিনি। কেমন সেই সহানুভূতি! যদি ধর্না মঞ্চে কৃষকদের পাশে এসেই না বসলেন! আসবেন?’ সরাসরি প্রশ্ন ছুড়লেন অবধেশকুমার। আর এই এক প্রশ্নেই আন্দোলনের পরবর্তী গতিপ্রকৃতির সুর বেঁধে নিলেন কৃষকরা। স্পষ্ট বুঝিয়ে দিলেন, আপাতত রেহাই নেই কেন্দ্রের মোদি সরকারের।

একটা ঘর। বেড়ার চাল। ঝড়ে যাতে উড়ে না যায়, তাই লোহার পাত দিয়ে আটকানো। খানচারেক খাটিয়া। কুলার, একটি আয়না, দড়িতে ঝোলানো কম্বল, গামছা, অন্যান্য আনুষঙ্গিক জিনিসপত্র। মোটের উপর এটিই গাজিপুর সীমানায় কৃষকদের অস্থায়ী তাঁবুর অন্দরমহলের ছবি। আর এই সীমানার আনাচে কানাচে শুক্রবার ঘুরে বেড়িয়েছে স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বিরুদ্ধে বুক ঠুকে দাঁড়িয়ে যাওয়ার প্রত্যয়।—‘আসুন, একবার এসে দেখে যান, গত এক বছর ধরে কী অবস্থায় রয়েছি আমরা।’ উত্তরপ্রদেশের বাগপত জেলার বাসিন্দা বছর ষাটের সত্যপ্রকাশ চৌধুরী। ভারতীয় কিষান ইউনিয়নের (বিকেইউ) সর্বভারতীয় নেতা রাকেশ টিকায়েতের সম্পর্কিত বোনের সঙ্গে সত্যপ্রকাশের দাদার বিয়ে হয়েছে। বলছিলেন, ‘কৃষকরা কি বোকা? উত্তরপ্রদেশ, পাঞ্জাব নির্বাচনের আগে কেন কৃষি আইন প্রত্যাহার করে নেওয়া হল… তা কি কৃষকরা বুঝতে পারছেন না? শহিদ কৃষক পরিবারগুলোর জন্য কী করেছেন নরেন্দ্র মোদি? ক্ষতিপূরণ মেলেনি, চাকরিও না। কৃষকদের পাশে আছি, এটা শুধু মুখে বললেই হয় না। কাজে করে দেখাতে হয়। একবার আসুন… যে কোনও সীমানায়। কৃষকরা কি খেয়ে ফেলবেন মোদিকে? এত ভয় কেন?’ 

মোদিকে চ্যালেঞ্জের মধ্যে অবশ্য উছ্বাসেও খামতি রাখেননি আন্দোলনকারীরা। তিন কৃষি আইন প্রত্যাহারের পর কৃষকদের বাঁধনছেঁড়া উল্লাসের ছবিটা গাজিপুর, সিংঘু, তিক্রি—সব সীমানাতেই কমবেশি এক। রাস্তায় যাঁকে সামনে পেয়েছেন, দাঁড় করিয়ে খাইয়েছেন মিষ্টি। ফেটেছে দেদার বাজি। মুহুর্মুহু স্লোগান উঠেছে ‘জয় কিষান’, কিংবা ‘কিষান একতা জিন্দাবাদ’। সীমানা জুড়ে প্রবল আওয়াজ তুলে চক্কর কেটেছে সবুজ রঙের মোটর সাইকেল। ফসলের রং সবুজ। তাই মোটরসাইকেলও সবুজ। গাজিপুর সীমানায় আচমকাই বিক্রি বেড়ে গিয়েছে রাকেশ টিকায়েতের ছবি দেওয়া টি-শার্টের। ট্রাক্টরে বসে ইঞ্জিন চালু করে শুধু অ্যাক্সিলেটরে চাপ দিয়ে গিয়েছেন কৃষক। ক্রমশ তীব্র হয়েছে ইঞ্জিনের গরগর আওয়াজ। যেন মোদি সরকারের বিরুদ্ধে গর্জন। রাকেশ টিকায়েত নিজে অবশ্য এদিন দিনভর গাজিপুর সীমানায় ছিলেন না। মহারাষ্ট্রের পালঘরে উপস্থিত ছিলেন তিনি। জটলার মধ্যে থেকে উড়ে এল আন্দোলনকারী কৃষকদের ইঙ্গিতপূর্ণ মন্তব্য… ‘তিনি ফিরলে গর্জনের তীব্রতা আরও বাড়বে। কারণ সবেমাত্র একটি পর্ব মিটেছে। এবার দ্বিতীয় পর্ব বাকি।’ নরেন্দ্র মোদির সরকারের জন্য অস্বস্তি কিন্তু থেকেই যাচ্ছে। 

TwitterFacebookWhatsAppEmailShare

#farmers, #Farm Bills, #Narendra Modi

আরো দেখুন