মোদীর পিছু হটার পর ‘ভক্ত’দের টিপ্পনীতে বিঁধছে সামাজিক মাধ্যম
মেজাজটা খানিক তেমনই। এত প্রাণপাত করে ট্রোলিং, অমুকদের খলিস্তানি বলে মুণ্ডপাত, ‘আমি ক্ষুদ্র কৃষক পরিবারের সন্তান’ বলে সাফাই বা ‘অ্যামিকেবল’ নিষ্পত্তির ধুয়ো তোলার পরে কপালে এই ছিল গো! আক্ষেপ, অভিমান সব আজ হাহাকারে মিশে যাওয়ার দিন। কঙ্গনা রানাওয়তের ইনস্টাগ্রাম স্টোরির মর্মকথা থেকে নেটরাজ্যের ভক্তবৃন্দের হাহুতাশ সবই কার্যত পরস্পরের প্রতিধ্বনি। ‘এ তো দেখি জিহাদি রাষ্ট্রের অনাছিষ্টি’ বলে যেন অশ্রুমোচন করেছেন কঙ্গনা। এবং মোদীজির পিছু হটার সৌজন্যে প্রত্যাশিত ভাবেই নেটরাজ্যের টিপ্পনী অন্ধ ভক্তদের বিঁধছে। ভক্তের সঙ্কট, গত কালও কৃষি বিলকে মোক্ষম চাল বলে আজ থেকে বিল রদের সিদ্ধান্ত মোক্ষম চাল বল গে! ‘আভি তো হমেঁ অউর জলিল হোনা হ্যায়’, বলে কঙ্গনাকে ঠাট্টা করে পুরনো সব মিমে ফের ঘুরপাক খাচ্ছে জনপ্রিয় ফিল্মি সংলাপও। রসিকতা চলছে, কঙ্গনা বুঝি ‘খলিস্তানি চাষি’দের প্রতি পক্ষপাতিত্বের প্রতিবাদে তাঁর পদ্মশ্রীই ফিরিয়ে দিলেন!
সমাজমাধ্যমের ট্রেন্ডিংয়ে শীর্ষেই কৃষিবিল রদের খবর। ‘গোবরখেকোদের হারিয়ে আনাজপ্রেমীদের জয়’! ‘মোদী যা করেন ভালর জন্যই করেন’! #মোদীজিনেকিয়াহ্যায়তোঠিকহিকিয়া ইত্যাকার লব্জ উঠে এসেছে হাসির মেজাজে। ভক্তেরা সর্বোচ্চ স্তরের ক্ষমা চাওয়ার মাহাত্ম্য প্রচার করলে তাঁদের স্মরণ করানো হচ্ছে, ভোটের গুঁতোয় সবই হয়! মোদী-শিবিরের ‘পেটোয়া’ মিডিয়াকেও জ্বালাপোড়ার মলম পাঠানো চলছে। পঞ্জাবের প্রতিবাদী চাষিদের খলিস্তানি তকমার মধুর প্রতিশোধ হিসেবেই তির্যক ব্যঙ্গ বা শ্লেষের সুরে ফিরে এসেছে খলিস্তানি হ্যাশট্যাগটি। কেউ বলছেন মোদীজি খলিস্তানিদের কথা শুনছেন মানে কি তিনি নিজেও খলিস্তানি!
কারও খোঁচা, দু’পা পিছোন মোদী কিন্তু গুলি খাওয়া বাঘের মতোই ভয়ঙ্কর। সমাজমাধ্যমে বীরোচিত মর্যাদায় রাহুল গাঁধীর তেমন খ্যাতি নেই, তবে এ যাত্রা ভাইরাল রাহুলের পুরনো একটি ভিডিয়ো। তিনি তাতে বলেছিলেন, ‘আমার কথাগুলো লিখে রেখে দিন, এই কৃষি বিল সরকার একদিন আলবত রদ করবে।’ ঠিক যেমন এই জয়ের দিনে নতুন করে ভাইরাল লাঠির মুখে বুক চিতিয়ে দাঁড়ানো সৌম্য প্রবীণ সর্দারের সেই বহুচর্চিত ছবি।
ভক্তদের কাছে ভারত-বিরোধী আখ্যা পাওয়া টুইটারের বিকল্প হিসেবে উঠে এসেছিল দেশি মঞ্চ ‘কু’। সেখানে এ দিন হতাশার ছবি। ৫৬ ইঞ্চি ছাতি কুঁকড়ে প্রধানমন্ত্রীর ‘মেরুদণ্ডহীন সিদ্ধান্ত’ নিয়ে অনেকেই বিমর্ষ। এর আগেও তো তফসিলি জাতি-জনজাতি বিল বা জমি অধিগ্রহণ বিলেও মোদী পিছু হটেন! মোদী সরকারের চাপের মুখে ভেঙে পড়া নিয়ে নানা কথা উঠে আসছে। কারও সান্ত্বনা, এ বার অন্তত অশান্তির রাজনীতি থামবে। আশঙ্কাও, ‘অ্যান্টিন্যাশনাল’ প্রতিবাদীরা সরল সরকারকে নতুন করে কোনও ব্ল্যাকমেল না শুরু করে!
তবে সার্বিক ভাবে সমাজমাধ্যম জুড়ে আজকের ঘটনা ঘৃণার সামনে দেশের জয় বা ধৈর্য, সাহস, কঠোর শ্রমের জয় বলেই আখ্যা পেয়েছে। গুরু নানকের জন্মদিনে মোদীর
এই সিদ্ধান্তে কেউ কেউ রাজনীতির চালও দেখছেন।
তবে বাঙালির কাছে এই দিনটি আর একটি কারণে মাত্রা পাচ্ছে। ১৯ নভেম্বর মানে সলিল চৌধুরীরও জন্মদিন। কৃষক আন্দোলনের এই জয় উসকে দিচ্ছে তেভাগার ইতিহাস! নেট-রাজ্যের আনাচকানাচে ‘হেই সামালো ধান গো’র সুরটাও অনেকের বুকের গভীরে স্পন্দিত হচ্ছে।