“জনবিরোধী বিজেপির শেষের এটাই শুরু” লিখলেন মমতা
“ওঁরা পেরেছেন। তিন কালা কানুন বাতিলের ঘোষণা হয়েছে। আর এর সম্পূর্ণ কৃতিত্ব দেশের চাষিভাইদের। লড়াইয়ের ময়দান থেকে এক মুহূর্তের জন্য সরে যাননি তাঁরা। কেন্দ্রে বিজেপির সরকারের সামনে বুক চিতিয়ে চ্যালেঞ্জ ছুড়েছেন। বারবার। আর তাই ‘অন্নদাতা’দের প্রতিবাদের মুখে ভেঙে পড়েছে জনবিরোধী শাসকের ঔদ্ধত্য, অহঙ্কার। কৃষকদের স্বার্থবিরোধী আইনের জন্য ক্ষমা চাইতে হয়েছে প্রধানমন্ত্রীকে,” সংবাদ মাধ্যমে এরকম ভাবেই নিজেকে ব্যক্ত করলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
তাঁর ভাষায়, “আজ ইতিহাসের পাতায় জায়গা করে নিয়েছেন দিল্লি সীমানার সংগ্রামী কৃষক ভাইবোনেরা। তাঁরা বুঝিয়ে দিয়েছেন, সংসদে সংখ্যাগরিষ্ঠতার নামে শোষণ চলতে পারে না। বিভাজনের কারিগর বিজেপির শেষের শুরু করে দিয়েছেন দেশের কৃষকভাইয়েরা।”
“কী না করেছে বিজেপি! মিথ্যা মামলা থেকে জেল, গাড়ি চাপা দিয়ে পিষে মারা—সবের সঙ্গে লড়তে হয়েছে বিদ্রোহী কৃষকদের,” ব্যক্ত করেন মমতা, “খবরটা পেয়ে বুক থেকে যেন পাথর নেমে গিয়েছিল। স্বয়ং প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণার পরই যেন নন্দীগ্রাম-সিঙ্গুরের ঐতিহাসিক কৃষক আন্দোলনের সঙ্গে একাত্ম হয়ে যায় সিংঘু-টিকরির সংগ্রাম। কিন্তু সেই ৭০০ কৃষক-প্রাণ! বিজেপির দমনশক্তির যারা শিকার হয়েছেন? কিংবা লখিমপুর…। তাঁরাই তো প্রাণ দিয়ে বাঁচিয়ে রেখেছেন আন্দোলনকে। সেই প্রাণগুলো আর ফিরবে না। রাষ্ট্র সেই দায় নেবে তো?” প্রশ্ন তোলে তিনি।
মমতা জানান, “কৃষি প্রধান দেশ আমাদের। কৃষি অর্থনীতির উপর অনেকটাই নির্ভরশীল দেশের অগ্রগতি। সেই কৃষকদের তিল তিল করে শেষ করার চক্রান্ত করেছিল তিন কালা কানুন চাপিয়ে। পেটোয়া কয়েকজন পুঁজিপতির হাতে কৃষকদের… কৃষি সম্পদকে তুলে দিতে চেয়েছিল বিজেপি।” তিনি বলেন, “গর্জে উঠেছিলাম আমরা। ডেরেক ও’ব্রায়েনকে ৪ ডিসেম্বর সিংঘুতে পাঠিয়েছিলাম। ডেরেক সেখান থেকেই মোবাইলে কথা বলিয়েছিল কৃষক নেতাদের সঙ্গে। তখনই জানতে পারি, প্রতিবাদী বাংলার উপর ওঁদের কতটা ভরসা। আস্থা রাখেন তাঁরা নন্দীগ্রাম-সিঙ্গুর আন্দোলনে জয়ী হওয়া বাংলার কৃষকদের উপর।”
মমতা বলেন, “২৮ জানুয়ারি বিধানসভায় ওই তিন কালা কানুন প্রত্যাহারের দাবিতে প্রস্তাব আনি আমরা… প্রথম রাজ্য হিসেবে। আমাদের বিরোধী রাজনীতির সঙ্গে কৃষকদের অরাজনৈতিক মঞ্চ মিলেমিশে এক যায় স্লোগানে—বিজেপিকে একটিও ভোট নয়। বিধানসভা ভোটের মুখে দাঁত-নখ বের করে থাকা গেরুয়া শিবিরের বিরুদ্ধে জোটবদ্ধ হয়ে বাংলায় এসে প্রচার করেছেন রাকেশ টিকায়েত, মেধা পাটকররা। জুন মাসে কিষান ইউনিয়নের নেতা রাকেশ নবান্নে আমার সঙ্গে দেখা করতে এসেছিলেন। সেদিনও জানিয়ে ছিলাম, আপনাদের পাশে আছি… শেষ দেখা পর্যন্ত। আজ তাঁদের জয়ের দিনে বাংলাও মেতেছে উচ্ছ্বাসে। কিন্তু এরপরও আন্দোলন চলবে। ন্যূনতম সহায়ক মূল্য আইন না আসা পর্যন্ত। বেঁচে থাক কৃষক আন্দোলন।”