কেন্দ্রের কৃষি আইন প্রত্যাহারে রাজ্যের আয় বৃদ্ধির সম্ভাবনা
কেন্দ্রীয় সরকারের কৃষি আইন প্রত্যাহার করার জেরে রাজ্য সরকারের আয় বৃদ্ধির পথ মসৃণ হল বলে মনে করা হচ্ছে। কৃষি বিপণন ক্ষেত্রে আয় বৃদ্ধি করার ক্ষেত্রে রাজ্য সরকার ইতিমধ্যে সক্রিয় হয়েছে। কিন্তু এক্ষেত্রে প্রধান প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করেছিল কেন্দ্রীয় কৃষি আইন। তিনটি আইনের মধ্যে অন্যতম ফারমার্স প্রোডিউস ট্রেড অ্যান্ড কমার্স (প্রোমোশন অ্যান্ড ফেসিলিটেশন) আইনটি পশ্চিমবঙ্গ সহ অন্য রাজ্যগুলির এগ্রিকালচার প্রোডিউস মার্কেটি কমিটি (এপিএমসি) আইনটিকে কার্যত অকেজো করে দিয়েছিল। তাই ওই কৃষি আইনটিকে ‘এপিএমসি বাইপাস’ হিসেবে বলা হচ্ছিল এপিএমসি আইন প্রয়োগ করে কৃষি বিপণনে রাজস্ব আদায় করে রাজ্যগুলি। পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য কৃষি বিপণন পর্ষদ এই আইনের মাধ্যমে চারশো কোটি টাকার মতো করত।
সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে নতুন কৃষি আইন কার্যকর হওয়া স্থগিত থাকলেও বিপণন পর্ষদের আয় আগের তুলনায় প্রায় ২৫ শতাংশে নেমে আসে বলে জানা গিয়েছ। অন্যান্য রাজ্যে এপিএমসি কর নেওয়া হচ্ছে না এই কারণ দেখিয়ে অনেক কৃষি পণ্যের ব্যবসায়ী কর দিচ্ছিলেন না বলে পর্ষদ সূত্রে জানা গিয়েছে। রাজ্যের কৃষি বিপণন মন্ত্রী বিপ্লব মিত্র আয় কমে যাওয়ার ব্যাপারটি স্বীকার জানিয়েছেন। কেন্দ্রীয় আইনটি প্রত্যাহার করে নিলে এই খাতে আয় বৃদ্ধি পাবে বলে আশা করছেন মন্ত্রী। তিনি জানিয়েছেন, কৃষি বিপণন কর থেকে প্রাপ্ত অর্থ প্রাপ্ত কৃষি পরিকাঠামো উন্নয়নের কাজে ব্যবহার করা হয়। ফলে এতে উপকৃত হবেন রাজ্যের কৃষকরা।
এপিএমসি আইন প্রয়োগ করে আয় আরও নানাভাবে বৃদ্ধি করার জন্য ইতিমধ্যে উদ্যোগী হয়েছে দপ্তর। কৃষি পণ্যের ব্যবসা করতে লাইসেন্স নেওয়ার ব্যবস্থা চালু করা হয়েছে। লাইসেন্স নেওয়া ও তার নবীকরণ করার জন্য নির্দিষ্ট হারে ফি দিতে হবে। গত বছরেই এর জন্য বিধি সংশোধনের বিজ্ঞপ্তি জারি করা হয়। সংশোধিত বিধি অনুযায়ী লাইসেন্স করার জন্য ব্যবস্থা গ্রহণও ইতিমধ্যে শুরু হয়েছে। সাধারণ মানুষ ও কৃষকদের বোঝা না এপিএমসি আইনে এভাবে আয় আরও বৃদ্ধি করার সুযোগ রয়েছে বলে দপ্তরের আধিকারিকরা মনে করছেন।
কেন্দ্রীয় কৃষি আইনটি কার্যকর হলে এপিএমসি আইন প্রয়োগ করে কৃষি পণ্যের উপর রাজ্য সরকারের কর আদায়ের কোনও সুযোগ ছিল না। রাজ্য কৃষি বিপণন পর্ষদের নিয়ন্ত্রণাধীন জেলা নিয়ন্ত্রিত বাজার কমিটিগুলির (আরএমসি) নোটিফায়েড এলাকার মধ্যে অবস্থিত বাজারগুলিতে কৃষি পণ্যের উপর কর বসানো যেত না। কৃষকরা নোটিফায়েড এলাকার বাইরে যে কোনও জায়গায় কৃষি পণ্য বিক্রি করতে পারতেন। সাধারণ মানুষের স্বার্থে রাজ্যে সব ধরনের সব্জি ও ফলের উপর কৃষি বিপণন কর তৃণমূল কংগ্রেস সরকার উঠিয়ে দিয়েছে। কিন্তু বিভিন্ন কৃষি ও প্রাণিজাত পণ্যের উপর ০.৫ শতাংশ হারে কর আছে। এর মধ্যে ধান, চাল, গম, ডাল, তৈলবীজ, মশলা, পান, তামাক, সুপারি, পাট, আখ, রসুন-সহ বেশ কিছু কৃষি পণ্য আছে। বছর দেড়েক আগে পর্যন্ত আরএমসি কর্তৃপক্ষ রাস্তায় চেকপোস্ট বসিয়ে কর আদায় করত। কিন্তু ২০২০ সালের গোড়ায় হয়রানি কমানোর উদ্দেশ্যে চেকপোস্ট তুলে দিয়ে অনলাইনে কর আদায় চালু করা হয়। এর জন্য পরিকাঠামো তৈরি করা হয়েছ। কর ফাঁকি আটকাতে রাস্তায় চেকিং কিছুটা শুরু হয়েছে। ফলে কর থেকে আয় কিছুটা বেড়েছে। সেটাই আরও বাড়বে বলে আশা করছে দপ্তর।