মিথ্যা প্রতিশ্রুতি? বাংলার ৬ লক্ষ কৃষকের নাম বাদ বিজেপির পিএম কিষাণ সন্মান নিধি প্রকল্পে
কেন্দ্রীয় সরকারের পিএম কিষান সম্মান নিধি প্রকল্পে অন্তর্ভুক্তির জন্য আবেদন করলেও রাজ্যের প্রায় ৬ লক্ষ কৃষকের নাম বাদ দেওয়া হয়েছে। সরকারি সূত্রে জানা গিয়েছে, প্রায় ৪২ লক্ষ রাজ্যের কৃষক এই প্রকল্পের সুবিধা পাওয়ার জন্য আবেদন করেছিলেন। সেখানে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে প্রায় ৩৬ লক্ষ কৃষককে। তবে এই ৩৬ লক্ষ কৃষকের মধ্যে ২৪ লক্ষ পিএম কিষান প্রকল্পে আর্থিক অনুদান পেয়েছেন। গত আগস্ট মাসে দ্বিতীয় কিস্তির আর্থিক অনুদান দেওয়ার সময় নাম নথিভুক্ত থাকলেও রাজ্যের প্রায় ১২ লক্ষ কৃষক টাকা পায়নি। আগামী ডিসেম্বর মাসে তৃতীয় কিস্তির টাকা দেওয়ার সময় এই ১২ লক্ষ কৃষক যাতে বকেয়া সহ অনুদান পান তার জন্য উদ্যোগী হয়েছে রাজ্য সরকার। কেন্দ্রীয় সরকারকে এব্যাপারে চিঠি পাঠানো হয়েছে।
কিন্তু যে প্রায় ৬ লক্ষ কৃষক আবেদন করলেও নাম অন্তর্ভুক্ত হয়নি তাঁদের আর্থিক অনুদান পাওয়ার সুযোগ যে নেই তা মেনে নিচ্ছেন কৃষিদপ্তরের কর্তারা। রাজ্য কৃষিদপ্তরের বক্তব্য, কেন্দ্রীয় সরকার তাদের নির্ধারিত মাপকাঠি অনুযায়ী আবেদনগুলি যাচাই করে তালিকা তৈরি করেছে। রাজ্য সরকার কৃষকবন্ধু প্রকল্পে যে আর্থিক অনুদান দেয় তার সঙ্গে কেন্দ্রীয় প্রকল্পের অনেক পার্থক্য আছে। কেন্দ্রীয় প্রকল্পে শুধু জমির মালিক কৃষকরাই অনুদান পাওয়ার যোগ্য। যেখানে রাজ্যের প্রকল্পের সুবিধা জমির মালিক কৃষকরা ছাড়াও ভাগচাষিরাও পান। শুধু তাই নয়, বেশ কিছু ক্ষেত্রে জমির মালিক হলেও পিএম কিষান প্রকল্পে অনুদান মেলে না। চতুর্থ শ্রেণি ছাড়া অন্য শ্রেণির সরকারি কর্মী বা আধিকারিক, মাসে ১০ হাজার টাকা বা তার বেশি পেনশন প্রাপক, আয়করদাতা, ডাক্তার, আইনজীবী, ইঞ্জিনিয়ারের মতো পেশাগত ব্যক্তি, এমপি, এমএলএ, মন্ত্রী এবং বিভিন্ন সাংবিধানিক পদে থাকা ব্যক্তি কৃষিজমির মালিক হলেও কেন্দ্রীয় প্রকল্পের অনুদান পান না। রাজ্যের প্রকল্পে এরকম কোনও ব্যাপার নেই।
জমির মালিক কৃষকদের একটা অংশকে প্রকল্পের আওতার বাইরে রাখার এই ব্যবস্থা থাকার জন্য এই প্রকল্পটি রাজ্যে শুরু হতে দেরি হয়েছে বলে রাজ্য সরকারের কর্তাদের দাবি। রাজ্যের সরকারের কৃষি উপদেষ্টা প্রদীপ মজুমদার জানিয়েছেন, কোনও কৃষক কেন্দ্রীয় প্রকল্পের অনুদান পাওয়ার যোগ্য নয় সেটা যাচাই করা রাজ্যের পক্ষে সম্ভব নয় বলে জানানো হয়েছিল। কেন্দ্রীয় সরকারের পক্ষ থেকে আবেদনকারী কৃষকদের কাছ থেকে ঘোষণাপত্র নেওয়ার কথা বলা হয়। ঘোষণাপত্রের মাধ্যমে আবেদনকারীদের জানাতে হয়, তাঁরা কেন্দ্রীয় সরকারের ঘোষণা অনুযায়ী অনুদানের সুবিধা না-পাওয়া শ্রেণিগুলির মধ্যে পড়ছেন না। পিএম কিষান প্রকল্পে রাজ্যের আবেদনকারীদের কাছ থেকে এই ঘোষণাপত্র নিয়ে পোর্টালে তাঁদের নাম ওঠানো হয়েছে বলে কৃষিদপ্তর সূত্রে জানা গিয়েছে। কেন্দ্রীয় সরকারে পোর্টালে অনলাইনে রাজ্যের যে কৃষকরা আবেদন করেছেন তাঁদেরও রাজ্য সরকারের কাছে জমির মালিকানার নথি-সহ ঘোষণাপত্র জমা দিতে হয়েছে।
কেন্দ্রীয় সরকার যে শ্রেণিগুলিকে সুবিধা পাওয়া থেকে বাদ রেখেছে তার আওতায় পড়ার জন্য রাজ্যের প্রায় ৬ লক্ষ আবেদনকারী বাদ গিয়েছে সেটা রাজ্য সরকারকে জানানো হয়নি। তবে কৃষিদপ্তরেতর আধিকারিকদের বক্তব্য, আবেদনপত্র পাওয়ার পর কেন্দ্রীয় সরকার তা যাচাই করে। ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট নম্বর, আধার নম্বর, আয়কর দাতা কি না প্রভৃতি তথ্য যাচাই করেই অনুদান প্রাপকদের চূড়ান্ত তালিকা পিএফএমএস পোর্টালে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। চূড়ান্ত তালিকা তৈরির পর অনেক সময় তথ্য যাচাই করার জন্য রাজ্য সরকারের কাছে পাঠানো হয়। পুরো প্রক্রিয়াটি চলে অনলাইনে।