আইন করে দেশবাসীর ব্যক্তিগত তথ্য হাতানোর চেষ্টায় মোদী সরকার, ক্ষুব্ধ বিরোধীরা
পেগাসাস সফ্টওয়্যারের মাধ্যমে আবডালে নজরদারি নয়। রীতিমতো আইন করেই দেশের নাগরিকদের ব্যক্তিগত তথ্যভাণ্ডার হাতানোর রাস্তা পরিষ্কার করছে কেন্দ্র। পার্সোনাল ডেটা প্রোটেকশন বিল। খসড়া চূড়ান্ত। আর তা নিয়েই শুরু হয়েছে নয়া বিতর্ক। কারণ, প্রস্তাবিত এই আইনে দেশের নাগরিকরা আদৌ ব্যক্তিগত তথ্যের সুরক্ষা পাবেন না! কারণ দেখা যাচ্ছে, খোদ সরকার থাকছে সেই সুরক্ষা বলয়ের মাথায়। অর্থাৎ কেন্দ্রীয় সরকারের এজেন্সিগুলির কাছে অবাধে চলে যাবে দেশবাসীর ব্যক্তিগত, গোপন তথ্য। আইনি অস্ত্রেই তখন নাগরিকের সব তথ্য হাতানোর ছাড়পত্র পাবে মোদী সরকার। আর কেন্দ্রকে এ ব্যাপারে নিয়ন্ত্রণ করবে কে? কেউ না।
সোশ্যাল মিডিয়া থেকে মোবাইল—সাধারণ মানুষের ব্যক্তিগত তথ্য নিয়ে অসাধু কারবারে উদ্বেগ প্রকাশ করেছিল সুপ্রিম কোর্ট। বলেছিল, যথাযথ পদক্ষেপ নিতে হবে কেন্দ্রকে। ২০১৯ থেকে সেই আইনের খসড়া নিয়ে যৌথ সংসদীয় কমিটিতে আলাপ আলোচনা চলছে। অবশেষে সেই খসড়া জমা পড়বে আসন্ন শীতকালীন অধিবেশনে। কিন্তু বিতর্ক শুরু হয়েছে তাতে যুক্ত ধারা নিয়ে। সরকারের উদ্দেশ্য স্পষ্ট হতেই নড়েচড়ে বসেছে বিরোধীরা। সিএএ, এনআরসি, কৃষি আইন… কেন্দ্রের জনস্বার্থ-বিরোধী সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ ও আন্দোলন চলছেই। সেই তালিকাতেই নবতম সংযোজন ডেটা প্রোটেকশন বিল। কেন্দ্রের কাছে অবশ্য নতুন লড়াই। বিরোধীদের আপত্তি অগ্রাহ্য করার ফল যে খুব সুমধুর নয়, তা একের পর এক আইন বাতিল বা সংশোধনেই হাড়ে হাড়ে বুঝেছে মোদী সরকার। এক্ষেত্রেও যদি খসড়া বিলে বদল না আসে, নতুন চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে হবে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে। ইতিমধ্যেই যৌথ সংসদীয় কমিটির সুপারিশ সহ খসড়া বিল নিয়ে বিরোধিতায় নামার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিরোধীরা।
ঠিক হয়েছে, সংসদে বিল পেশ থেকে আইন পাশ—সরকারকে ফেলা হবে কড়া প্রতিরোধের মুখে। যৌথ সংসদীয় কমিটির বৈঠকের আগে প্রধানত দু’টি দাবিতে লিখিত আপত্তি (ডিসেন্ট নোট) দেওয়া হয়েছে। প্রথমত, দেশবাসীর ব্যক্তিগত তথ্যের গোপনীয়তার রক্ষাকবচ থেকে কেন্দ্রীয় সরকারি সংস্থাকে ছাড় দেওয়া চলবে না। আর দ্বিতীয়ত, ডেটা সুরক্ষা সংক্রান্ত যে নিয়ন্ত্রক পরিষদ গঠিত হবে, সেখানে রাজ্য সরকারের অধিকার খর্ব করা যাবে না। বিরোধীদের অভিযোগ, বিলের ৩৫ নম্বর ধারায় যথেচ্ছ অধিকার তুলে দেওয়া হচ্ছে কেন্দ্রের হাতে। এই ধারা অনুযায়ী, দেশবাসীর উপর নজরদারির অসীম ক্ষমতা ও স্বাধীনতা তুলে দেওয়া হচ্ছে সরকারি এজেন্সিগুলির হাতে। সরকারিভাবে কেন্দ্র অবশ্য বলছে, ডেটা প্রোটেকশন আইনের মাধ্যমে সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মগুলিকে নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা হচ্ছে। এই আইন কার্যকর হলে সোশ্যাল মিডিয়াকেও পাবলিশার হিসেবে দায়বদ্ধ করা হবে। অর্থাৎ কোনও সোশ্যাল মিডিয়ায় কী পোস্ট করা হচ্ছে, শেয়ার করা হচ্ছে, তার দায়ভার ওই সংস্থাকে নিতে হবে। একইভাবে সাধারণ মানুষের ব্যক্তিগত তথ্য বিনা অনুমতিতে ব্যবহৃত হলে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া যাবে। কিন্তু বিরোধীদের আপত্তি এই ইস্যুতে কেন্দ্রের অবাধ ক্ষমতা নিয়েই। তৃণমূলের ডেরেক ও’ব্রায়েন, কংগ্রেসের জয়রাম রমেশরা যেমন এই বিরোধিতায় আছেন, তেমনই আপত্তি জানিয়েছেন মোদী সরকারের বন্ধু হিসেবে পরিচিত বিজু জনতা দলের এমপি অমর পট্টনায়কও। তাঁর প্রশ্ন, ডেটা প্রোটেকশন অথরিটির ব্যবস্থা থাকলেও রাজ্যভিত্তিক কাঠামো নেই কেন?