স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর আশ্বাসই সার, তৃণমূল প্রার্থীকে গুলি বিজেপি নেতার
কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের আশ্বাসই সার। ত্রিপুরায় পুরভোট ঘিরে বিজেপির সন্ত্রাস অব্যাহত। এবার স্বয়ং তৃণমূল কংগ্রেস প্রার্থীকে লক্ষ্য করে গুলি চালানোর অভিযোগ মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব দেবের দলের নেতার বিরুদ্ধে। পরপর দু’রাউন্ড গুলি। অল্পের জন্য রক্ষা পেয়েছেন আগরতলা পুরসভার ১ নম্বর ওয়ার্ডের তৃণমূল প্রার্থী গৌরী মজুমদার। সোমবার বিকেলে অমিত শাহ তৃণমূল সাংসদদের আশ্বস্ত করেছিলেন, ত্রিপুরায় আর অশান্তি হবে না। তার কয়েক ঘণ্টা পরেই মধ্যরাতে আগরতলায় এই ঘটনা। অভিযুক্ত বিজেপি নেতা রঞ্জিত মজুমদার পলাতক। গেরুয়া শিবিরের পক্ষ থেকেও যাবতীয় অভিযোগ অস্বীকার করা হয়েছে। রাত পেরলেই পুরভোট। মঙ্গলবারই ছিল প্রচারের শেষ দিন। তার মধ্যেই এমন ঘটনায় অগ্নিগর্ভ হয়ে উঠেছে ত্রিপুরার রাজধানী। পুরভোটে বিরোধীদের নিরাপত্তা নিয়ে উঠতে শুরু করেছে প্রশ্ন। প্রতিবাদে সরব হয়েছেন তৃণমূল সাংসদ সুস্মিতা দেব। তাঁর কথায়, এর আগে পুলিসের সামনে তৃণমূল কর্মীদের উপর হামলা হয়েছে। এবার ভোটে জিততে বিজেপি গুলি পর্যন্ত চালাল। ফলে এটা স্পষ্ট যে, আগরতলা কার্যত দুষ্কৃতীদের হাতে চলে গিয়েছে। পুলিসের কোনও ভূমিকা সেখান নেই।
আগরতলা শহরের পশ্চিম দিকে পুরসভার সীমানা ঘেঁষা এলাকাটি ১ নম্বর ওয়ার্ড। সেখানেই বাড়ি তৃণমূল প্রার্থী গৌরীদেবীর। সোমবার মধ্যরাতে হইচই শুনে তিনি বাড়ির বাইরে বেরিয়ে আসেন। তৃণমূল প্রার্থীর অভিযোগ, তাঁকে দেখতে পেয়েই গুলি চালাতে শুরু করেন এলাকায় বিজেপি নেতা হিসেবে পরিচিত রঞ্জিত। দু’রাউন্ড গুলি চলে। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে এসে পৌঁছয় পুলিস। ততক্ষণে অভিযুক্ত সহ অন্য দুষ্কৃতীরা পালিয়ে গিয়েছে। গোটা ঘটনায় তীব্র আতঙ্ক ছড়িয়েছে ভোটারদের মধ্যে। যদিও স্থানীয় বিজেপি বিধায়ক ডাঃ দিলীপ দাসের দাবি, এমন কোনও ঘটনা তাঁর এলাকায় ঘটেনি।
উত্তর-পূর্ব ভারতে বাঙালির দ্বিতীয় ‘হোমল্যান্ড’-এ পুরভোটকে কেন্দ্র করে বেশ কয়েকদিন ধরেই উত্তেজনা চরমে। নির্বাচন পর্ব শান্তিতে মেটানোর জন্য রাজ্য প্রশাসনকে কড়া নির্দেশ দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট, হাইকোর্ট। তারপরও বন্ধ হয়নি বিরোধী দলের উপর সন্ত্রাস। থানায় হামলা, তৃণমূল নেতা-কর্মীদের মার, বাংলার যুব তৃণমূলনেত্রীর গ্রেপ্তারি, আর এবার প্রার্থীকে গুলি—সব মিলিয়ে প্রশ্ন উঠে গিয়েছে বিজেপি শাসিত রাজ্যের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে। মঙ্গলবার এই ইস্যুতে রাজ্যের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী তথা মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব দেবকে একহাত নিয়েছেন ত্রিপুরার বিজেপি বিধায়ক সুদীপ রায় বর্মণ। রাজনৈতিক সন্ত্রাসের তীব্র নিন্দা করে তিনি বলেন, এভাবে দল এবং প্রধানমন্ত্রীর ভাবমূর্তি নষ্ট করছে এখানকার শাসক দলের নেতারা। তৃণমূল নেতা সুবল ভৌমিকের অভিযোগ, ‘এর আগেও গৌরী মজুমদারকে লক্ষ্য করে গুলি চালানো হয়। প্রতিটি জায়গায় অস্ত্র উঁচিয়ে প্রার্থী ও কর্মী-সমর্থকদের ভয় দেখানো হচ্ছে। মারধর করা হচ্ছে। কিন্তু আমরা লড়াই থেকে এক পা পিছব না।’ তৃণমূল সাংসদ সুস্মিতা দেবের উপর হামলারও এখনও দোষীদের গ্রেপ্তার করা হয়নি। তাই এই ঘটনাতেও পুলিস কতটা উদ্যোগ দেখাবে, তা নিয়ে সন্দিহান সুবলবাবু। তাঁর কটাক্ষ, বিপ্লব দেব প্রকাশ্যে বলেন যে, ‘রাজ্যের পুলিশ প্রশাসন ওঁর হাতে। সেখানে এই সব ক্ষেত্রে কিছুই আশা করা যায় না।’