বয়স্কদের চিকিৎসার জন্য প্রথম বিভাগ খুলল কলকাতা মেডিক্যাল কলেজে
ছেলেমেয়ে বিদেশে থাকে। বড় কোম্পানিতে চাকরি করে, এটুকুই সান্ত্বনা। বাবা বাজার করতে গিয়ে হোঁচট খেয়ে পড়ে যান প্রায়ই। মা সেই কবে থেকে ভুগছেন অস্টিওআর্থ্রাইটিসে। ডাক্তার দেখাতে যাবেন কী করে? বাড়ির পরিচারক ট্যাক্সি ধরে এনে নিয়ে গেলেন হাসপাতালে। কিন্তু মেডিসিন বিভাগের আউটডোরের ভিড় দেখে ওই বৃদ্ধ দম্পতির হৃদস্পন্দন বেড়ে গেল।
এই চিত্র রাজ্যের সর্বত্রই। সরকারি-বেসরকারি মিলিয়ে ষাটোর্ধ্বদের জন্য পৃথক আউটডোরের দেখা মেলে না কোথাও। ফলে দীর্ঘক্ষণ লাইনে দাঁড়াতে হয় তাঁদের। মেডিসিন বিভাগ হলে তো কথাই নেই। ওই ভিড়ের মধ্যে কখন যে ডাক পড়বে, কেউ জানে না। ষাটোর্ধ্ব এই মানুষজনের নির্দিষ্ট কিছু সমস্যা রয়েছে। প্রয়োজন হয় বিশেষ নজরের। তাই এখন আর শুধু আলাদা আউটডোর নয়, এই প্রবীণ মানুষদের চিকিৎসার জন্য রাজ্যে প্রথম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চালু হল স্বতন্ত্র বিভাগ। ফলে এ বিষয়ে এইমস, সিএমসি ভেলোর, মাদ্রাজ মেডিক্যাল কলেজ, বিএইচইউ’র মতো নামকরা প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে একাসনে জায়গা করে নিল শতাব্দীপ্রাচীন কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ।
গ্রিন বাড়িতে নতুন বোর্ড লেগেছে এই বিভাগের। চার এবং পাঁচতলায় বয়স্ক পুরুষ ও মহিলা রোগীদের জন্য ১৫টি করে মোট ৩০টি অস্থায়ী শয্যার ব্যবস্থা করা হয়েছে। করোনার ছোঁয়াচ আর একটু কমলেই সুপার স্পেশালিটি বাড়ির চারতলায় পাকাপাকি জায়গা হবে এই বিভাগের। আউটডোর বাড়ির একতলায় আলাদা ঘরের ব্যবস্থা করা হয়েছে। ষাঠোর্ধ্বদের জন্য বুধবার জেরিয়াট্রিক আউটডোর ও বৃহস্পতিবার ডিমেনশিয়া বা স্মৃতিভ্রমের সমস্যার আউটডোর শুরু হয়েছে। এই বিভাগের সঙ্গেই রোগী দেখছেন নিউরোলজি’র ডাক্তাররাও। জানা গিয়েছে, শীঘ্রই সাইকিয়াট্রি আউটডোর হবে। অধ্যাপক ডাঃ অরুণালোক চট্টোপাধ্যায় বলেন, রাজ্যের বয়স্কদের জন্য এই প্রথম পৃথক জেরিয়াট্রিক বিভাগ চালু হয়েছে। কর্তৃপক্ষ সর্বতোভাবে সাহায্য করছে।
হাসপাতাল সূত্রের খবর, সেপ্টেম্বর মাসে শুরু হয়েছে এই স্বতন্ত্র জেরিয়াট্রিক বিভাগ। এমডি পঠনপাঠন শুরু করার জন্য স্বাস্থ্যশিক্ষার সর্বোচ্চ নিয়ন্ত্রক সংস্থা ন্যাশনাল মেডিক্যাল কমিশনের (এনএমসি) কাছে চারটি আসনের অনুমোদন চেয়েছে তারা। এক চিকিৎসকের কথায়, দু’জন অধ্যাপক, একজন সহকারী অধ্যাপক ও আরএমও এবং দু’জন সিনিয়র রেসিডেন্ট— আপাতত ছ’জন চিকিৎসককে নিয়ে বিভাগটি চালু হয়েছে। অনুমোদন মিললে তিন বছর পর ১২ জন চিকিৎসক বয়স্কদের চিকিৎসায় বিশেষজ্ঞ হয়ে উঠবেন।
প্রসঙ্গত, দেশে মোট জনসংখ্যার আট শতাংশ মানুষ জেরিয়াট্রিক বা ষাঠোর্ধ্ব বয়সসীমার মধ্যে পড়েন। শহরাঞ্চলে এই হার ১২ শতাংশ। সুগার-প্রেশার-হার্টের অসুখ ছাড়াও বয়স্কদের কিছু সাধারণ সমস্যা রয়েছে। যেমন হঠাৎ পড়ে যাওয়া, ডিমেনশিয়া বা স্মৃতিভ্রম, ডিপ্রেশন বা অবসাদ ইত্যাদি। অবসর, ছেলেমেয়েদের সঙ্গে অশান্তি, অবহেলা বা চাকরি সূত্রে দূরে থাকা কিংবা কর্মক্ষমতা কমে যাওয়া ইত্যাদি নানা কারণে এমন সমস্যা দেখা দিতে পারে। এমনকী, দুর্বল হয়ে যাওয়া এবং ওজন কমে যাওয়ার সমস্যাও থাকে তাঁদের। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া শাখা এ বিষয়ে চিকিৎসকদের প্রশিক্ষিত করতে ১০ জন ‘মেন্টর চিকিৎসক’ স্থির করেছে। তাঁরাই প্রশিক্ষণ দিচ্ছেন দেশের বাছাই করা ১০০ জন ডাক্তারকে।