কানপুরে আজ শুরু ভারত বনাম নিউজিল্যান্ডের প্রথম টেস্ট ম্যাচ
নামেই গ্রিন পার্ক! বাইশ গজে সবুজের আভাটুকুও চোখে পড়ছে না! ব্রিটিশ আমলে মিস গ্রিন এই মাঠে ঘোড়ায় চড়তেন। সেই থেকে গ্রিন পার্ক। আউটফিল্ড ঘাসে ভরা। নামকরণের সার্থকতা বজায় রেখে গ্যালারিতেও পাতা সবুজ চেয়ার। গাছপালায় ঘেরা মাঠের আবহও সবুজাভ। এমনকি তিন দিক খোলা প্রেসবক্সের কাঠামো কিংবা গালিচাতেও রংয়ের সাযুজ্য রয়েছে। কিন্তু, যেখানে ব্যাট-বলের লড়াই মঞ্চস্থ হবে, সেই পিচটাই তো ন্যাড়া। ভারত-নিউজিল্যান্ড প্রথম টেস্ট পঞ্চমদিনের সকাল পর্যন্ত গড়ালে হয়!
উত্তরপ্রদেশের গঙ্গা তীরের এই মাঠ বরাবারই স্পিনারদের সাহায্য করেছে। অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে ভারত প্রথমবার টেস্ট জয় কানপুরে। ১৯৫৯ সালের সেই ডিসেম্বরে জেসু প্যাটেলের অফস্পিনে অসহায় দেখিয়েছিল অজিদের। ম্যাচে ১৪ উইকেট নেন জেসু। এমনকী, পাঁচ বছর আগে এখানে অনুষ্ঠিত শেষ টেস্টেও বিধ্বংসী ছিলেন স্পিনাররা। রবিচন্দ্রন অশ্বিন নেন দশ উইকেট। রবীন্দ্র জাদেজার শিকার সংখ্যা ছয়। প্রতিপক্ষ ছিল কেন উইলিয়ামসনের নিউজিল্যান্ড! পুরনো ফর্মূলা মেনে ভারতীয় দল দুই ‘রবি’কে নামিয়ে দিতেই পারত সিরিজের প্রথম টেস্টে। কিন্তু, উইকেট দেখার পর পাল্লা ঝুঁকছে তিন স্পিনারের দিকে। টেস্টে রাহুল দ্রাবিড় জমানা সম্ভবত শুরু হচ্ছে স্পিন-মন্ত্রে বাজিমাতের স্ট্র্যাটেজি দিয়েই। অশ্বিন-জাদেজা জুটির সঙ্গে তাই দেখা যেতে পারে অক্ষর প্যাটেল বা জয়ন্ত যাদবকে। তবে জাদেজা ও অক্ষরের বোলিং অনেকটাই একধরনের। তাই সুযোগ পেতে পারেন জয়ন্ত। মজার ব্যাপার হল, কিউয়ি শিবিরেও রয়েছে তিন স্পিনার খেলানোর মৃদু আভাস। অতএব সারমর্ম একটাই, স্পিন অস্ত্রেই বাজিমাতের ভাবনায় রয়েছে দুই শিবির।
শহর জুড়ে শীতের আমেজ ক্রমশ বাড়ছে। ভোরবেলায় কানপুর সেন্ট্রাল স্টেশন চত্বরে কনকনে ঠাণ্ডা। রাজপথেও সোয়েটার, মাফলার, টুপি, জ্যাকেটের ঘনঘটা। এই আবহে সকালের দেড় ঘণ্টা পেসারদের জন্যও সাহায্য মজুত থাকবে বলে মনে করছেন কিউরেটর শিব কুমার। গঙ্গার সংলগ্ন হওয়ায় আর্দ্রতার সুবিধা পেতে পারেন সিমাররা। সেক্ষেত্রে টিম সাউদি, ওয়্যাগনাররা ভয়ঙ্কর হয়ে উঠতেই পারেন। জ্বলে ওঠার বাড়তি তাগিদ থাকবে ইশান্তের মধ্যেও।
রোহিত শর্মা, বিরাট কোহলির মতো মহারথী নেই। চোটের জন্য নেই লোকেশ রাহুলও। বিশ্রামে ঋষভ পন্থ। কার্যত দ্বিতীয় সারির ব্যাটিং নিয়ে অজিঙ্কা রাহানের নেতৃত্বে নামছে ভারত। বাঁহাতি নেট বোলারকে আমন্ত্রণ জানিয়ে ওয়াগনারকে সামলানোর প্রস্তুতি সারা হল নেটে। আপাতত যা ইঙ্গিত, তাতে ওপেনিংয়ে শুভমান গিলের সঙ্গী হচ্ছেন মায়াঙ্ক আগরওয়াল। মিডল অর্ডারে অভিষেক ঘটছে শ্রেয়স আয়ারের। ৫২ বছর আগে এই মাঠেই অভিষেক হয়েছিল এক গ্রেট ব্যাটসম্যানের। প্রথম ইনিংসের ব্যর্থতা ঢেকে দ্বিতীয় ইনিংসে শতরানকারী সেই ক্রিকেটারের নাম গুন্ডাপ্পা বিশ্বনাথ। শ্রেয়স কি পারবেন সেই পথে হাঁটতে?
অশ্বিনের কাছে এই ম্যাচ আবার পুনর্জন্মেরই মতো। ইংল্যান্ডে টানা চার টেস্টে ড্রেসিরুম ছিল তাঁর ঠিকানা। সেই কারাগার থেকে পাঁচদিনের ফরম্যাটে মুক্তি মিলছে কানপুরে। ন্যাড়া উইকেট অবশ্যই উদ্দীপ্ত করছে তাঁকে।
বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের তাজ মাথায় পরে নামছে নিউজিল্যান্ড। অন্যদিকে, ফাইনালে পরাজয়ের জ্বালা ঘরের মাঠে সুদে-আসলে মিটিয়ে নেওয়াই ভারতের তাগিদ। সদ্য সমাপ্ত টি-২০ সিরিজে কিউয়িদের হোয়াইটওয়াশ করলেও, আসল যন্ত্রণার প্রতিশোধ নেওয়া যে এখনও বাকি! ম্যাচ শুরু সকাল ৯-৩০ মিনিটে। সরাসরি সম্প্রচার স্টার স্পোর্টসে।