আজ দেশজুড়ে পালন হবে কৃষক আন্দোলনের বর্ষপূর্তি
তিন কৃষি আইন প্রত্যাহারের ঘোষণা করেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। সংসদের আসন্ন শীতকালীন অধিবেশনে প্রত্যাহার বিল আনার ব্যাপারে অনুমোদনও দিয়েছে কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভা। এতকিছুর পরও কৃষকদের ‘আস্থা’ ফিরে পেলেন না প্রধানমন্ত্রী। এখনও তাঁদের স্লোগান, ‘বিশ্বাস নেই মোদীকে।’ একইসঙ্গে রয়েছে ফসলের ন্যূনতম সহায়ক মূল্য (এমএসপি) সংক্রান্ত আইন এবং আরও দাবিও। ফলে কেন্দ্র-কৃষক সংঘাত অব্যাহত থাকছে। এবং আজ, শুক্রবার কৃষক বিক্ষোভ কর্মসূচির বর্ষপূর্তিতে তীব্রতর হতে চলেছে আন্দোলন। লক্ষ্য একটাই, মোদী সরকারকে আরও কোণঠাসা করা। ঠিক এক বছর আগে এই দিনটিতেই দিল্লির সীমানাগুলিতে অবস্থান শুরু করেছিলেন কৃষকরা। সেই আন্দোলন শুধুমাত্র সিংঘু-তিক্রি সীমানা, অথবা গাজিপুর সীমানাতেই সীমাবদ্ধ থাকেনি। এই এক বছরে উত্তরপ্রদেশ, হরিয়ানা, রাজস্থান এবং বাংলার মতো বহু রাজ্যে বিজেপি বিরোধিতার মুখ হয়ে উঠেছেন তাঁরা।
আর এবার দেশজুড়ে ব্যাপক আকারে সেই বিক্ষোভ কর্মসূচির ছড়িয়ে দেওয়ার প্রস্তুতি নিয়েছেন বিক্ষোভকারী চাষিরা। নজিরবিহীনভাবে দেশের প্রতিটি রাজ্যের রাজধানী শহরে আজ বসছে কিষান মহাপঞ্চায়েত। শুধু কলকাতা নয়, রাজ্যের বিভিন্ন জেলায় একই ধরনের কর্মসূচি পালন করবে মোর্চা। কৃষক নেতৃত্বের ডাকে সাড়া দিয়ে বিজেপি-তৃণমূল বাদে সমস্ত বাম ও ডানপন্থী কেন্দ্রীয় ট্রেড ইউনিয়ন এবং অন্যান্য গণ সংগঠন থাকবে কলকাতার মূল কর্মসূচিতে। ধর্মতলার ওয়াই চ্যানেলে দুপুরে সমাবেশের পর বিকেলে জমায়েতকারীরা মিছিল করবেন শিয়ালদহ পর্যন্ত। তবে এই বিক্ষোভের উৎসস্থল হওয়ার কারণে দিল্লির সীমানাগুলিতে উত্তাপ ও উত্তেজনা দুইই বাড়ছে। সীমানাগুলিতে পাল্লা দিয়ে বাড়ানো হচ্ছে পুলিসি নিরাপত্তাও। বৃহস্পতিবার সংযুক্ত কিষান মোর্চার পক্ষ থেকেও স্পষ্ট জানিয়ে দেওয়া হয়েছে, কৃষক আন্দোলনের বর্ষপূর্তি যাতে বিজেপি তথা গেরুয়া শিবিরের আজীবন মনে থাকে, সেভাবেই চলছে প্রস্তুতি। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে হাজার হাজার কৃষক সিংঘু, তিক্রি, গাজিপুর সীমানার উদ্দেশে রওনা দিয়েছেন বলে দাবি কিষান মোর্চার।
আন্দোলনকারী কৃষকরা জানিয়েছেন, রাজ্যে রাজ্যে কিষান সমাবেশ ছাড়াও বিভিন্ন জায়গায় একাধিক কর্মসূচির পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। যেমন কর্ণাটকের সমস্ত গুরুত্বপূর্ণ হাইওয়ে অবরুদ্ধ করে রাখা হবে বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন কৃষকরা। তামিলনাড়ু, বিহার, মধ্যপ্রদেশে ব্যাপক বিক্ষোভ প্রদর্শনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। রায়পুর এবং রাঁচিতে আজ রয়েছে ট্রাক্টর মিছিলের পরিকল্পনা। বর্ষপূর্তির প্রস্তুতি হিসেবে বৃহস্পতিবার হায়দরাবাদে হয়েছে মহা-ধর্না।একইসঙ্গে মোর্চা জানিয়েছে, ২৮ নভেম্বর, রবিবার মুম্বইয়ের আজাদ ময়দানে মেগা কিষান-মজদুর মহাপঞ্চায়েতের আয়োজন করা হয়েছে। ইতিমধ্যেই ভারতীয় কিষান ইউনিয়নের (বিকেইউ) সর্বভারতীয় নেতা রাকেশ টিকায়েত হুঁশিয়ারি দিয়েছেন, ‘আগামী ২৯ নভেম্বর, সংসদের শীতকালীন অধিবেশন শুরুর দিন দিল্লির সীমানা থেকে ৬০টি ট্রাক্টরের মিছিল সংসদ ভবন অভিযান করবে।’ সংযুক্ত কিষান মোর্চা জানিয়ে দিয়েছে, ২৭ নভেম্বর হবে কৃষক নেতৃত্বের বৈঠক। তারপর স্থির হবে আন্দোলনের পরবর্তী কর্মসূচি। কৃষক নেতৃত্বের মনোভাব স্পষ্ট, রেহাই নেই মোদীর।