গ্রামীণ এলাকায় উন্নয়নে কাজ করা ডিআরডিএ বন্ধ করছে মোদী সরকার
রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা বিক্রির তালিকা দীর্ঘতর হচ্ছে। এর মধ্যেই সরকারি প্রকল্প বন্ধ করে গ্রামীণ উন্নয়নে কোপ মারতে উদ্যোগী হল নরেন্দ্র মোদী সরকার। গ্রামীণ এলাকায় উন্নয়নে কাজ করা ডিস্ট্রিক্ট রুরাল ডেভেলপমেন্ট এজেন্সি (ডিআরডিএ) অ্যাডমিনিস্ট্রেশন স্কিম বন্ধের ফরমান জারি করেছে গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রক। ২০২২ সালের ১ এপ্রিলের মধ্যেই বন্ধ করে দেওয়া হবে ডিআরডিএ। গ্রামীণ অর্থনীতির হাল ফেরাতে মহিলা স্বনির্ভর দল গঠন, তাদের প্রশিক্ষণের ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা এই প্রকল্পের। কেন্দ্র ডিআরডিএ বন্ধ করে দিলে থমকে যাবে গ্রামীণ উন্নয়নের গতি। এই ফরমানে অস্থায়ী কর্মীদের কাজ হারানো এবং স্থায়ী কর্মীদের বদলির আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। মন্ত্রকের আন্ডার সেক্রেটারি সঞ্জয় কুমারের সই করা নির্দেশনামা ইতিমধ্যেই পৌঁছে গিয়েছে পঞ্চায়েত দপ্তরে।
পঞ্চায়েতমন্ত্রী পুলক রায় বলেন, ‘রাজ্যের সঙ্গে আলোচনা না করেই কেন্দ্র ডিআরডিএ তুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এর ফলে দেশের গ্রামীণ অর্থনীতি ক্ষতিগ্রস্ত হবে। অবিলম্বে সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনার দাবি জানাচ্ছি।’
ডিআরডিএর মূল লক্ষ্য ছিল, দারিদ্র দূরীকরণে সরকারি প্রকল্পগুলিকে আরও বেশি করে শক্তিশালী করা। পাশাপাশি জেলা প্রশাসনের সব বিভাগের সঙ্গে পঞ্চায়েতের সামগ্রিক সমন্বয় সাধনের মাধ্যমে গ্রামীণ মানুষকে আর্থিকভাবে স্বনির্ভর করে তোলাও ডিআরডিএর কাজ। তবে রাজ্য ভেদে বিভিন্ন জায়গায় এই প্রকল্পের নাম ও কর্মপ্রণালী আলাদা। বাংলার ক্ষেত্রে ডিস্ট্রিক্ট রুরাল ডেভেলপমেন্ট সেল (ডিআরডিসি) এই প্রকল্পে কাজ করে থাকে। স্বনির্ভর দল গঠন করা, তাদের আর্থিকভাবে শক্তিশালী করার জন্য ব্যাঙ্ক লোন পাইয়ে দেওয়া, স্কুলের পোশাক তৈরি, মাস্ক তৈরির মতো নানা সরকারি কাজের বরাত দেওয়ায় ভূমিকা নেয় ডিআরডিসি। এছাড়া মেলার আয়োজন করে গ্রামের মহিলাদের হাতে তৈরি সামগ্রী বাজারজাত করা, আর্থিকভাবে স্বনির্ভর করার জন্য প্রশিক্ষণের ব্যবস্থাও করে। যখন গ্রামীণ অর্থনীতির বিকাশের রূপায়ণ ও নজরদারিতে অন্যতম ভূমিকা নিচ্ছে ডিআরডিএ, তখন কেন্দ্রের এই স্কিম বন্ধের সিদ্ধান্তে অনেকেই হতবাক।
গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রক যে নির্দেশিকা জারি করেছে, তাতে স্কিম বন্ধের পাশাপাশি পরামর্শ হিসেবে রাজ্যগুলিকে জানানো হয়েছে, জেলা পরিষদ বা পঞ্চায়েতগুলির সঙ্গে এটিকে সংযুক্ত করে দিতে। এমনকী প্রকল্পে কাজ করা কর্মী, আধিকারিকদের ভবিষ্যৎ নিয়েও যথেষ্ট ‘উদাসীন’ মন্তব্য রয়েছে ওই নির্দেশিকায়। যাঁরা এই প্রকল্পে ডেপুটেশনে কাজ করছেন, তাঁদের নিজের ডিপার্টমেন্টে ফেরত যাওয়ার কথা বলা হয়েছে। তবে সার্পোট স্টাফদের কী হবে, তা নিয়েও কোনও স্পষ্ট নির্দেশ নেই। আর এতেই কর্মী মহলে তীব্র উৎকণ্ঠা তৈরি হয়েছে। সবচেয়ে বিপাকে পড়তে পারেন এই প্রকল্পে কাজ করা প্রশিক্ষকরা। আর্থিক স্বনির্ভরতার প্রশিক্ষণের তিনটি স্তর ছিল ব্লক, জেলা ও রাজ্য। তিন স্তরের প্রশিক্ষকরাই কাজ হারানোর আশঙ্কা করছেন। তবে দপ্তর সূত্রে খবর, দীর্ঘদিন ধরেই এই প্রকল্পে কেন্দ্রের টাকা আসছে না। কাজও হচ্ছে না। এমনকী ডিআরডিএর সঙ্গে যুক্ত কর্মীদের বেতনও এনআরএলএম প্রকল্প থেকে দেওয়া হচ্ছে।
পাকাপাকিভাবে বন্ধ হতে বসা এই স্কিমের যাবতীয় কাজ রাজ্যের আনন্দধারা প্রকল্পের মাধ্যমেই চালাচ্ছে দপ্তর। ফলে ডিআরডিএর সঙ্গে যুক্ত কর্মীদের এনআরএলএম বা আনন্দধারা প্রকল্পে নিযুক্ত করার আশ্বাস মিলেছে দপ্তরের পক্ষ থেকে।