চাপে পড়ে ব্যাঙ্ক বিক্রির অতিসক্রিয়তায় ধাক্কা খেল মোদী সরকার
চাপে পড়ে ব্যাঙ্ক বিক্রির অতি সক্রিয়তায় এবার কি তাহলে স্পিড ব্রেকার? আর্থিক সংস্কারে কোনও বাধাই মেনে নেওয়া হবে না, এই অনড় মনোভাব দেখিয়ে একসঙ্গে তিনটি নতুন কৃষি আইন আনা হয়েছিল। সংসদের অন্দরে এই বিল পেশ হওয়ার আগেই বিরোধীরা তাতে প্রবল আপত্তি জানায়। কিন্তু তা ধোপে টেকেনি। শেষে আইন পাশ হয়ে যায়। কৃষকদের একবছর ধরে চলা আন্দোলনেও প্রথমটায় নরম হয়নি সরকার। কিন্তু আচমকাই ১৮০ ডিগ্রি ঘুরে কেন্দ্র এখন সেই আইনগুলিকেই বাতিল করছে। অতি আগ্রাসনের কী পরিণতি তা দেখাই যাচ্ছে। সেই কারণেই পরবর্তী দু’বছর সতর্কভাবে অগ্রসর হতে চাইছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী।
ঢালাও বেসরকারিকরণ নীতি নিয়ে সরকারি সংস্থা বিক্রির তালিকা তৈরি চলছে দীর্ঘদিন ধরেই। রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা, ব্যাঙ্ক, বিমা, তেল উৎপাদন সংস্থা সবই রয়েছে ওই তালিকায়। আসন্ন শীতকালীন অধিবেশনে আসতে চলেছে ব্যাঙ্কিং আইন সংশোধনী বিল। প্রথম ধাপে দুটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের বেসরকারিকরণের লক্ষ্য নিয়েই এগিয়েছে মোদী সরকার। সেই ব্যাঙ্কিং সংস্কারের পথ প্রশস্ত করতেই এবার আসতে চলেছে আইনের সংশোধন। কিন্তু সরকারের অন্দরে হঠাৎ সতর্কতার সুর শোনা যাচ্ছে। সরকারি সূত্রের খবর, দুটি ব্যাঙ্কের বেসরকারিকরণের প্রক্রিয়া অবশ্যই বাস্তবায়িত হবে। কিন্তু গোটা ব্যাঙ্ক বিক্রি করা হবে না। ২৬ শতাংশ মালিকানা সরকার হাতে রেখে দেওয়ার কথা ভাবছে। যদিও সেটা স্থায়ীভাবে নয়। আপাতত।
সোজা কথায়, ব্যাঙ্ক বেসরকারিকরণের প্রক্রিয়া একবার হয়ে গেলে, দেশবাসী ও সংশ্লিষ্ট মহলের প্রতিক্রিয়া বুঝে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। দেশজুড়ে কোনও বিরূপ প্রতিক্রিয়া দানা বাঁধে কি না, জনগণের মনোভাবটিই বা কী হতে পারে, এসব বিবেচনা করে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। তার আগে পর্যন্ত এই বার্তাই দেওয়া হবে যে, সরকার নিজের অধিকার ছেড়ে দিচ্ছে না। সত্যিই যদি এই সিদ্ধান্তই গ্রহণ করা হয়, তাহলে অবশ্যই সেটা হতে চলেছে আর একটি পিছু হটা। কারণ, এর আগে নীতি আয়োগের পক্ষ থেকে অর্থমন্ত্রককে বারংবার চাপ দেওয়া হয়েছে, দ্রুত বিলগ্নিকরণ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে।
১৯৭০ সালে প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী তাবৎ বেসরকারি ব্যাঙ্কের জাতীয়করণ করেছিলেন। সেই আইনের নাম ব্যাঙ্কিং কোম্পানিজ (অ্যাকুইজিশন অ্যান্ড ট্র্যান্সফার অফ আন্ডারটেকিংস) আইন, ১৯৭০। এই আইন অনুযায়ী সরকারের হাতে থাকতে হবে ব্যাঙ্কের ৫১ শতাংশ শেয়ার। এবার সেই আইনের ঠিক উল্টো সংশোধনী আনা হবে। সেই আইনে সরকার ২৬ শতাংশ পর্যন্ত মালিকানা রাখতে পারবে। পরে অবশ্য তা বিক্রি করা যাবে সুযোগ সুবিধা বুঝে।