প্রধানমন্ত্রীর নাম করে জাতীয় শিক্ষানীতি রূপায়ণে উপাচার্যদের চাপ দিচ্ছে ইউজিসি?
জাতীয় শিক্ষানীতির কেন্দ্রীয় ফতোয়ার বিরুদ্ধে রাজ্য সরকার আগেই সরব হয়েছে। সম্প্রতি বিধানসভার প্রশ্নোত্তর পর্বে শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু ‘অন রেকর্ড’ জানিয়েছিলেন, জাতীয় শিক্ষানীতির সবকিছু রাজ্য সরকার মানবে না। তিনি এও অভিযোগ করেন, এই নীতি কার্যকর করা নিয়ে কেন্দ্র রীতিমতো ফতোয়া দিচ্ছে। এবার প্রধানমন্ত্রীর নাম করে জাতীয় শিক্ষানীতি রূপায়ণে বিশ্ববিদ্যালয়গুলিকে চাপ দেওয়ার অভিযোগে ইউজিসির বিরুদ্ধে সরব হল শিক্ষামহল।
সম্প্রতি বিশ্ববিদ্যালয়গুলির উপাচার্যদের কাছে চিঠি পাঠিয়ে জাতীয় শিক্ষানীতির বিভিন্ন শর্তাবলি পালনের নির্দেশ দিয়েছেন ইউজিসির চেয়ারম্যান ডি পি সিং। তাতে বলা হয়েছে, প্রধানমন্ত্রী নিজে শিক্ষামন্ত্রীর উপস্থিতিতে যে বিষয়গুলি ঘোষণা করেছিলেন, তা দ্রুত কার্যকর করার ব্যবস্থা করুন। এর জন্য প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয়কে বিশেষ সেল (এনইপি সেল) গঠন করার কথাও বলা হয়েছে। যে-কোনও পাঠক্রম যখন খুশি শুরু করা বা যখন খুশি তা ছেড়ে বেরিয়ে যাওয়ার স্বাধীনতা, অ্যাকাডেমিক ক্রেডিট ব্যাঙ্ক গঠন বা উচ্চশিক্ষার বিশ্বায়নের মতো বিষয়গুলি প্রধানমন্ত্রী উল্লেখ করেছিলেন। আর ইউজিসি চাইছে, সেই ব্যাপারগুলিতে জোর দিন উপাচার্যরা। বিষয়টি সামনে আসায় শোরগোল পড়েছে শিক্ষামহলে।
রাজ্যের একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য বলেন, এ বিষয়ে রাজ্য সরকার যা বলবে, সেই অনুযায়ীই চলব। ইউজিসি বেশি চাপ দিলে সেটাও রাজ্য সরকারকে জানাব। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় ইস্যুটিকে সিন্ডিকেট বৈঠকে আলোচনার জন্য তুলবে। তবে, অনেকে এ বিষয়টাকে খুব একটা পাত্তাও দিচ্ছেন না। পশ্চিমবঙ্গ রাষ্ট্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য মহুয়া দাস বলেন, ইউজিসি কী পাঠিয়েছে, তা এখনও দেখা হয়ে ওঠেনি। তাই কিছু বলতে পারব না। তবে এ ব্যাপারে সরব হয়েছে সারা বাংলা সেভ এডুকেশন কমিটি। সংগঠনের সম্পাদক অধ্যাপক তরুণকান্তি নস্কর বলেন, বিজেপি অভিযোগ তুলে থাকে, ইউজিসি আগে কংগ্রেসের অঙ্গুলিহেলনে চলত। এখন সেই ইউজিসি উপাচার্যদের চিঠি পাঠানোর সময় প্রধানমন্ত্রীর প্রসঙ্গ টানছে। এটা ন্যক্কারজনক। যেসব বিষয়ের কথা বলা হয়েছে, সেগুলি জাতীয় শিক্ষা নীতিতে অন্তর্ভুক্ত হয়েছে মার্কিনি উচ্চশিক্ষা ব্যবস্থাকে হুবহু টুকে। ‘স্বয়ম’-এর মতো পোর্টালের মাধ্যমে উচ্চশিক্ষায় এনরোলমেন্ট বাড়ানোই হোক বা যখন খুশি যে-কোনও কোর্সে প্রবেশ বা ছেড়ে দেওয়া, সবই সেখান থেকে এসেছে। জাতীয় শিক্ষানীতি একাধারে হঠকারী এবং শিক্ষার বেসরকারিকরণের অনুকূল। সেই কারণেই এর বিরোধিতা করছেন দেশের শিক্ষাবিদরা।