বিধানসভা নির্বাচনে প্রার্থী করার প্রতিশ্রুতি দিয়ে ২৩ লক্ষ টাকার জালিয়াতি বিজেপি নেত্রীর
বিধানসভা ভোটে প্রার্থী করে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে বিজেপির এক রাজ্য নেত্রীর বিরুদ্ধে ২৩ লক্ষ টাকা হাতানোর অভিযোগ আনলেন পটাশপুরের প্রাক্তন মণ্ডল সভাপতি। প্রতিশ্রুতি ভঙ্গের পর টাকা না পেয়ে আত্মহত্যার হুমকি দিয়ে দিলীপ ঘোষকে চিঠি দিলেন মানসরঞ্জন সামাই নামে ওই বিজেপি নেতা। তাঁর মৃত্যুর জন্য ওই নেত্রী দায়ী থাকবেন বলেও চিঠিতে স্পষ্ট করে দিয়েছেন মানসবাবু। এই ঘটনায় বিজেপির অন্দরে শোরগোল পড়ে গিয়েছে। অভিযুক্ত রাজ্য বিজেপির সংখ্যালঘু মোর্চার সহ সভানেত্রী মুক্তারুন বিবি টাকা নেওয়ার কথা অস্বীকার করেছেন। তবে, দিলীপবাবু এব্যাপারে তাঁর কাছ থেকে কৈফিয়ৎ চেয়েছেন বলে তিনি স্বীকার করেছেন। টিকিটের জন্য গেরুয়া শিবিরে মোটা টাকা লেনদেনের যে অভিযোগ তথাগত রায় জানিয়েছিলেন, এই ঘটনা তাতেই সিলমোহর দিল বলে রাজনৈতিক মহল মনে করছে।
পেশায় গ্রামীণ চিকিৎসক মানসরঞ্জন সামাই পটাশপুরের পালপাড়া গ্রামের বাসিন্দা। ২০১৫-’১৬ সাল থেকেই বিজেপির সঙ্গে সক্রিয়ভাবে যুক্ত। লোকসভা নির্বাচনের সময় তিনি পটাশপুর-১ ব্লক উত্তর মণ্ডলের সভাপতি ছিলেন। পরে সাংগঠনিক রদবদলের সময় তাঁকে ওই পদ থেকে সরে যেতে হয়। বিধানসভা নির্বাচনের আগে দলেরই এক নেতার মাধ্যমে মুক্তারুন বিবির সঙ্গে প্রার্থী হওয়ার বিষয়ে টাকা পয়সা নিয়ে আলোচনা হয়। মুক্তারুনের বাড়ি এই জেলারই খেজুরির বারাতলা পঞ্চায়েত এলাকায়। গত জানুয়ারি মাস থেকে পাঁচ দফায় মানসবাবু ওই নেত্রীকে ২৩ লক্ষ টাকা দিয়েছেন বলে দাবি করেছেন। এবার পটাশপুর কেন্দ্র থেকে বিজেপি প্রার্থী হয়েছিলেন অম্বুজাক্ষ মহান্তি। ভোটে হেরেছেন।
প্রার্থী তালিকায় জায়গা না পাওয়ায় হতাশ মানসবাবু টাকা ফেরত চেয়ে মুক্তারুন বিবির সঙ্গে যোগাযোগ করেন। কিন্তু, নেত্রী টাকা নেওয়ার কথা অস্বীকার করার পাশাপাশি মানসবাবুকে এড়িয়ে যেতে থাকেন। ধারাবাহিকভাবে ওই ঘটনায় মানসিকভাবে বিপর্যস্ত প্রাক্তন মণ্ডল সভাপতি। তিনি সুবিচারের আশায় দিলীপ ঘোষকে চিঠি দিয়েছেন। টাকা ফেরত না পেলে আত্মহত্যা করতে হবে বলে তিনি জানিয়েছেন। আর এজন্য এই রাজ্য নেত্রী দায়ী থাকবেন বলেও স্পষ্ট উল্লেখ করেছেন।
মানসবাবু বলেন, পার্টির সঙ্গে সক্রিয়ভাবে যুক্ত থাকার সুবাদে আমার কাছে প্রার্থী হওয়ার প্রস্তাব এসেছিল। তারপর আমি অন্যদের কাছ থেকে চেয়েচিন্তে ওই টাকা জোগাড় করি। মোট পাঁচ দফায় মুক্তারুন বিবির হাতে তুলে দিয়েছি। কাঁথি সাংগঠনিক জেলার এক নেতা গোটা বিষয়টিতে হস্তক্ষেপ করেছিলেন। মানুষের জন্য কাজ করার বাসনা থেকে প্রার্থী হওয়ার ইচ্ছা ছিল। কিন্তু, প্রার্থী তালিকায় নাম না থাকার পর আমি সেই টাকা ফেরত চেয়েছি। এখন সেই টাকা দিতে উনি অস্বীকার করছেন। আমি দিলীপ ঘোষের কাছে লিখিত অভিযোগ জানিয়েছি। তারপর রাজ্য সাধারণ সম্পাদক অমিতাভ চক্রবর্তী আমার সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ করেন। তিনি এনিয়ে সুবিচারের আশ্বাস দিয়েছেন। এপ্রসঙ্গে অভিযুক্ত মুক্তারুন বিবি বলেন, দলের নির্বাচন কমিটি প্রার্থী ঠিক করে। এক্ষেত্রে আমার কোনও হাত নেই। তাই আমি টাকা নিতে যাব কেন? মানসবাবু আমার বিরুদ্ধে ঊর্ধ্বতন নেতৃত্বের কাছে অভিযোগ করেছেন। দিলীপবাবু আমার কাছ থেকে এনিয়ে বক্তব্য জানতে চেয়েছিলেন। আমি আমার বক্তব্য জানিয়েছি।