কলকাতা পুরসভার প্রার্থী তালিকা প্রকাশ হতেই বিক্ষোভের ঝড় বিজেপির অন্দরে
বিজেপি কলকাতা পুরভোটের প্রার্থী তালিকা প্রকাশ করার পর দিন তা নিয়ে ক্ষোভ বাড়ল। কলকাতা পুরসভার ৮৬ নম্বর ওয়ার্ডের বিজেপি কাউন্সিলর তিস্তা দাস বিশ্বাসের স্বামী গৌরব বিশ্বাস মঙ্গলবার নির্দল প্রার্থী হিসাবে পুরভোটে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার জন্য মনোনয়ন পত্র জমা দিলেন। তিস্তা কিছু দিন আগে দুর্ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছেন। তাঁর স্বামী গৌরবকে এ বার ওই ওয়ার্ডে প্রার্থী করতে চেয়েছিলেন দক্ষিণ কলকাতা জেলা বিজেপির অনেক নেতা-কর্মীই। গৌরবও সেখানে প্রার্থী হতে চেয়েছিলেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত বিজেপি সেখানে রাজর্ষি লাহিড়ী নামে অন্য এক জনকে প্রার্থী করেছে। ফলে ক্ষুব্ধ গৌরব এ দিন নির্দল হিসাবে মনোনয়ন পত্র জমা দিয়েছেন।
গৌরবের বক্তব্য, তিনি ৮৬ নম্বর ওয়ার্ডে বিজেপি কর্মী হিসাবে জনসেবা করার জন্য কর্পোরেট সংস্থার চাকরি ছেড়েছেন। তিনি এবং তাঁর স্ত্রী তিস্তা সেখানে বিজেপির সংগঠন গড়ে তুলেছিলেন। তিস্তা মানুষকে পরিষেবা দেওয়ার মধ্য দিয়ে জনপ্রিয়তা অর্জন করেছিলেন। তিনি বিজেপির প্রার্থী হলে দলই লাভবান হত। ৮৬ নম্বর ওয়ার্ডে তৃণমূলের প্রার্থী রাজ্যের মন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্যের পুত্র সৌরভ বসু। গৌরবের অভিযোগ, “তৃণমূল প্রার্থী ওই মন্ত্রী-পুত্রকে জেতানোর জন্য আমাদের দলের কেউ কেউ সক্রিয়। তাই আমার বদলে অন্য এক জনকে প্রার্থী করা হয়েছে।”
রাজ্য বিজেপির মুখপাত্র শমীক ভট্টাচার্য অবশ্য বলেন, “গৌরবের পারিবারিক জীবনে বিরাট বিপর্যয় ঘটেছে। দলের সকলেই ওঁর সমব্যথী। উনি হয়তো একটু বেশি অনুভূতিপ্রবণ হয়ে উঠেছেন। তবে ভোট চলাকালীনই সমস্যা মিটে যাবে বলে আমরা আশা করছি।”
বিজেপি সূত্রের খবর, ৮৭ নম্বর ওয়ার্ডের প্রার্থী নিয়েও দলের অন্দরে ক্ষোভ আছে। ওই ওয়ার্ডটি এ বার মহিলাদের জন্য সংরক্ষিত হয়ে যাওয়ায় সেখানকার বিদায়ী বিজেপি কাউন্সিলর সুব্রত ঘোষ টিকিট পাননি। তিনি যাঁকে প্রার্থী করতে চেয়েছিলেন, তাঁকেও দল টিকিট দেয়নি। ফলে সুব্রতর অসন্তোষ আছে। এ ছাড়া, সোমবার বিজেপির প্রার্থী তালিকা প্রকাশের সঙ্গে সঙ্গেই দু’জন টিকিট না পেয়ে এবং এক জন পছন্দের ওয়ার্ড না পেয়ে দলের রাজ্য দফতরে গিয়ে বিক্ষোভ দেখিয়েছিলেন। তাঁদের এক জন চন্দ্রশেখর বাসোটিয়াকে বিজেপি এ দিন দল থেকে বহিষ্কার করেছে। চন্দ্রশেখর ৪১ নম্বর ওয়ার্ডে বিজেপির টিকিট প্রত্যাশী ছিলেন।
প্রার্থী হতে না পারার সামগ্রিক ক্ষোভ নিয়ে বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার এ দিন দিল্লিতে বলেন, “ভোটে প্রার্থী হতে সকলেরই ইচ্ছে করে। যোগ্যতাও অনেকেরই আছে। কিন্তু সকলে তো প্রার্থী হন না। যাঁরা এ বার প্রার্থী হতে পারেননি, তাঁদের দল পরে বড় জায়গা দেবে।”
বিজেপি-র অনেক প্রার্থীই এ দিন মনোনয়ন জমা দিয়েছেন। দলের আইনজীবী সেলের সদস্যরা এ দিন সকাল থেকে রাজ্য দফতরে প্রার্থীদের মনোনয়ন পত্র পূরণে সাহায্য করেছেন।
এ দিকে, কেন্দ্রীয় বাহিনীর নজরদারিতে কলকাতা পুরভোটের দাবিতে আগেই রাজ্য নির্বাচন কমিশনের দ্বারস্থ হয়েছিল বিজেপি। এ দিন দলের রাজ্য সহ সভাপতি রাজু বন্দ্যোপাধ্যায়, বিধায়ক অগ্নিমিত্রা পাল প্রমুখ রাজভবনে গিয়ে রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড়ের কাছেও একই দাবি জানিয়েছেন। আজ, বুধবার ফের তাঁদের নির্বাচন কমিশনে যাওয়ার কথা।