যত বিদেশি ভারতের নাগরিকত্ব চেয়েছেন,তার থেকে বেশি ভারতীয় দেশের নাগরিকত্ব ছাড়ছেন!
সিএএ, এনআরসি নিয়ে বিতর্কের মাঝে নাগরিকত্ব নিয়ে চমকপ্রদ তথ্য উঠে এল সংসদে। এক প্রশ্নের জবাবে কেন্দ্রীয় সরকার জানিয়েছে, যত বিদেশি নাগরিক ভারতের নাগরিকত্ব চেয়ে দরখাস্ত করেছেন, তার থেকে বেশি ভারতীয় দেশের নাগরিকত্ব ছাড়ছেন। কেন্দ্রীয় সরকারের প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, প্রায় ১ কোটি ৩৪ লাখ জন্ম সূত্রে ভারতীয় পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে পাকাপাকিভাবে বসবাস করছেন। পাশাপাশি তাৎপর্যপূর্ণ তথ্য হলো ২০১৭ থেকে চলতি বছর পর্যন্ত ৬ লক্ষ ৮ হাজার ১৬২ জন ভারতের নাগরিকত্ব ছেড়ে দিয়েছেন।
ওই একই সময় কালের মধ্যে আবেদনের ভিত্তিতে ভারতের নাগরিকত্ব পেয়েছেন ৪ হাজার ১৭৭ জন বিদেশি। পররাষ্ট্র মন্ত্রকের পরিসংখ্যানের ভিত্তিতে মঙ্গলবার অমিত শাহের মন্ত্রক এই তথ্য জানিয়েছে। লোকসভার এক প্রশ্নের জবাবে স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী নিত্যানন্দ রাই আরও জানিয়েছেন, নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন বা সিএএ-র বিধি বা রুল তৈরির কাজ শেষ হয়নি। ফলে ওই আইনের ভিত্তিতে এখনই কাউকে নাগরিকত্ব দেওয়া হয়নি। মন্ত্রী আরও জানিয়েছেন, সারাদেশে এনআরসি বা জাতীয় নাগরিক পঞ্জি তৈরিরও কোনও ভাবনা নেই কেন্দ্রের।
২০১৯ সাল থেকে সিএএ নিয়ে দেশব্যাপী বিতর্ক ও তাকে ঘিরে বিক্ষোভ আন্দোলন গতবছর পর্যন্ত গড়ায়। নাগরিকত্ব সংশোধনী আইনের ফলে ভারত পাকিস্তান, আফগানিস্তান ও বাংলাদেশের নির্যাতিত হিন্দু, শিখ, বৌদ্ধ, জৈন, খ্রিস্টান ধর্মালম্বীদের আবেদনের ভিত্তিতে ভারতের নাগরিকত্ব দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। কেন্দ্রীয় সরকারের বক্তব্য, এই পাঁচটি ধর্মীয় সম্প্রদায় ওই তিন দেশে সংখ্যালঘু নাগরিক। তারা সেখানে ধর্মীয় কারণে নির্যাতিত।
এই পাঁচ সম্প্রদায়ের নির্যাতিত মানুষদের মধ্যে যারা ২০১৪-র ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে ভারতে আশ্রয় নিয়েছেন, সিএএ-র বলে তাদের এদেশের নাগরিকত্ব দেওয়ার কথা।
গত পাঁচ বছরে কেন্দ্রের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, ভারতের নাগরিকত্ব চেয়ে আবেদন করেছেন ৭,৭৮২ জন পাকিস্তানি। তবে এই পাকিস্তানীদের ধর্মীয় পরিচয় পররাষ্ট্র ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক জানায়নি। গত পাঁচ বছরে মোট ১০ হাজার ৬৪৫ জন বিদেশি নাগরিক ভারতের নাগরিকত্ব চেয়ে আবেদন করেছেন।
আশ্চর্যের হল, তাঁদের মধ্যে বাংলাদেশিরা সংখ্যায় মাত্র ১৮৪ জন। এই আবেদনকারীদেরও ধর্ম পরিচয় জানায়নি কেন্দ্র। তবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ এবং বঙ্গ বিজেপি।যেভাবে বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের উপর নিপীড়নের কথা বলে থাকেন, ভারতের নাগরিকত্ব চেয়ে আবেদনের সংখ্যায় তার প্রতিফলন নেই। জানা গিয়েছে, আফগানিস্তান থেকে আবেদন জমা পড়েছে ৭৯৫টি। এদেরও ধর্ম পরিচয় জানা যায়নি।
সবচেয়ে তাৎপর্যপূর্ণ হল, এই তালিকায় ভারতে নাগরিকত্ব চেয়ে আবেদনকারীদের মধ্যে তৃতীয় স্থানে আছেন রাষ্ট্রহীন মানুষেরা। এমন মানুষের আবেদনের সংখ্যা ৪৫২। আবার দেখা যাচ্ছে, বাংলাদেশের তুলনায় ভারতের নাগরিকত্ব চেয়ে ব্রিটেনের আবেদনের সংখ্যা বেশি। বাইডেনের দেশ থেকে আবেদন করেছেন ২২৭ জন। এই মানুষেরা আবেদন করেছেন বিগত পাঁচ বছরে।
গত পাঁচ বছরে ৪ হাজার ১৭৭ জন ভারতের নাগরিকত্ব পেয়েছেন তার মধ্যে সবচেয়ে বেশি আবেদন মঞ্জুর হয়েছে ২০১৬ সালে। সংখ্যাটা ১,১০৬ জন। অন্যদিকে, সবচেয়ে বেশি ভারতীয় নাগরিকত্ব ছেড়ে ভিনদেশের নাগরিকত্ব নিয়েছেন ২০১৯-এ, সংখ্যাটা ১ লক্ষ ১৭ হাজার ১৭ জন। ঘটনাচক্রে, সেই বছরেই সিএএ নিয়ে দেশ উত্তাল। ওই বছরেরই সংসদে বিরোধীদের আপত্তি সত্ত্বেও বিলটি পাস হয়। কেন্দ্রীয় সরকারের তরফে জানানো হয়েছে, ১ কোটি ৩৩ লক্ষ ৮২ হাজার ৭১৮ জন জন্মসূত্রে ভারতীয় বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বসবাস করেন।