হাওড়ার কটন মিল বাঁচাতে কেন্দ্রীয় বস্ত্রমন্ত্রীকে চিঠি তৃণমূলের, দেখাদেখি চিঠি অধীরেরও
এমনিতে রাজ্যের শাসকদল তৃণমূলের সঙ্গে কংগ্রেসের সম্পর্ক বেশ ‘মধুর’। সংসদের শীতকালীন অধিবেশনের আগে সেই সম্পর্কে যেন আরও শৈত্য দেখা গিয়েছে। জাতীয় রাজনীতির ক্ষেত্রেও কয়েকটি রাজ্যে কংগ্রেস ভাঙানোর অভিযোগ উঠেছে তৃণমূলের বিরুদ্ধে। কয়েক দিন আগে দিল্লি সফরে গিয়ে অন্যান্য বারের মতো সনিয়া গাঁধীর সঙ্গে দেখা করেননি তৃণমূলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেই আবহেই তৃণমূল এবং কংগ্রেসের দুই সাংসদ একযোগে চিঠি দিলেন কেন্দ্রীয় বস্ত্রমন্ত্রীকে। দু’দলের সাম্প্রতিক সম্পর্কের প্রেক্ষিতে এই ‘একসুর’ নিয়ে কৌতূহল তৈরি হয়েছে।
হাওড়ার দাশনগরের আরতি কটন মিলকে বাঁচাতে কেন্দ্রীয় বস্ত্রমন্ত্রী পীযূষ গয়ালকে চিঠি দিয়েছেন লোকসভায় কংগ্রেসের নেতা তথা প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি ও বহরমপুরের অধীর চৌধুরী। আবার ওই একই কারণে কেন্দ্রীয় বস্ত্রমন্ত্রীর কাছে আবেদন জানিয়েছেন হাওড়া সদরের তৃণমূল সাংসদ প্রসূন বন্দ্যোপাধ্যায়। প্রথম জন চিঠিটি পাঠিয়েছেন গত ২৭ নভেম্বর। আর দ্বিতীয় জন পাঠিয়েছেন ৩০ নভেম্বর অর্থাৎ মঙ্গলবার। দুই সাংসদই ‘প্রাচ্যের শেফিল্ড’ নামে পরিচিত হাওড়ার ওই কারখানাটির সোনালি অতীতের কথা তুলে ধরেছেন চিঠিতে।
প্রসঙ্গত, ন্যাশনাল টেক্সটাইল কর্পোরেশন লিমিটেডের আওতায় দেশ জুড়ে ২৩টি কটন মিল আছে। তার মধ্যে মহারাষ্ট্র, কর্নাটক, তামিলনাড়ু এবং পশ্চিমবঙ্গের ২২টি কটন মিল দীর্ঘ দিন ধরে বন্ধ। দাশনগরের আরতি কটন মিল পুরোপুরি বন্ধ না হলেও তা এখন ধুঁকছে। সেই কারখানার ইতিহাস স্মরণ করিয়ে দিয়ে মিল বাঁচানোর জন্য আর্জি জানিয়েছেন অধীর এবং প্রসূন দু’জনেই।
বর্তমানে ওই কারখানাটিতে ৪৪৮ জন শ্রমিক কাজ করছেন। হাতেগোনা কিছু শ্রমিক স্থায়ী কর্মী হলেও বাকিরা ঠিকাদারের অধীনস্থ। দীর্ঘ দিন বন্ধ থাকার পর ২০২০ সালের মাঝামাঝি সময়ে তৎকালীন কেন্দ্রীয় বস্ত্রমন্ত্রী স্মৃতি ইরানির হস্তক্ষেপে আরতি কটন মিল খোলে। ওই মিলটিতে আংশিক উৎপাদনও শুরু হয়। বর্তমানে শ্রমিকরা মাসে ১৫ দিন কাজ পান। ফলে তাঁদের বেতনও অর্ধেক।
কারখানা পুরোপুরি খোলার দাবিতে বাম এবং ডানপন্থী শ্রমিক ইউনিয়নগুলি একযোগে আন্দোলন শুরু করেছে। আইএনটিইউসি-র হাওড়া জেলার সভানেত্রী শ্রাবন্তী সিংহের দাবি, ‘‘অবিলম্বে ওই কারখানায় পুরোপুরি উৎপাদন শুরু করতে হবে। শ্রমিকদের পুরো মাসের বেতনও দিতে হবে।’’ কারখানা পুরোপুরি খোলার দাবি নিয়ে ওই শ্রমিক ইউনিয়নের তরফে একটি প্রতিনিধি দল আগামী পাঁচ ডিসেম্বর দিল্লিতে রওনা দেবে। হাওড়া সদরের আইএনটিটিইউসি-র সভাপতি প্রাণকৃষ্ণ মজুমদার বলেন, ‘‘আমাদের সাংসদ প্রসূন বন্দ্যোপাধ্যায় আরতি কটন মিল বাঁচাতে উদ্যোগ নিয়েছেন। কেন্দ্রীয় বস্ত্রমন্ত্রীকে তিনি চিঠি দিয়েছেন। মিলকে পুনরুজ্জীবিত করাই একমাত্র লক্ষ্য।’’
প্রসূন এই মুহূর্তে দিল্লিতে রয়েছেন। তিনি জানিয়েছেন, বস্ত্রমন্ত্রীর সঙ্গে তাঁর কথা হয়েছে। আগামী সপ্তাহে আরতি কটন মিল নিয়ে আলোচনা হবে দু’জনের। আলোচনার মাধ্যমে সুষ্ঠ সমাধানের রাস্তা না বার হলে বৃহত্তর আন্দোলনের পথে যাওয়ার কথাও বলেছেন তিনি। অন্য দিকে, কংগ্রেসের শ্রমিক সংগঠন আইএনটিইউসি-র পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, লোকসভায় শীতকালীন অধিবেশন চলাকালীন এই ইস্যু তোলার পাশাপাশি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে এ ব্যাপারে কথা বলবেন অধীর।