বাড়ি বাড়ি পানীয় জলের সংযোগে নভেম্বরেও শীর্ষে বাংলা
রাজ্যের গ্রামাঞ্চলের ছোট ছোট বসতি এলাকায় বাড়ি বাড়ি পানীয় জল সংযোগকে এবার ‘পাখির চোখ’ করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। উত্তরবঙ্গের পাহাড়, তরাই-ডুয়ার্স, দক্ষিণবঙ্গের জঙ্গলমহল এবং সুন্দরবনের দুর্গম এবং বিছিন্ন গ্রামগুলিকেই এক্ষেত্রে অগ্রাধিকার তালিকায় রেখেছেন তিনি। তাঁর সেই নির্দেশকে কার্যকর করতে জনস্বাস্থ্য কারিগরি দপ্তর (পিএইচই) গোটা রাজ্যে বাছাই করেছে এমন গ্রাম, যেখানে ১ থেকে ১০০টি পরিবার বসবাস করে। রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা এহেন গ্রামের বাড়িগুলিতে পরিস্রুত পানীয় জল সরবরাহ করার নির্দিষ্ট সময়সীমা ধার্য হয়েছে আগামী মার্চ মাস। একরম গ্রামগুলিতে স্থানীয় ভূগর্ভস্থ উৎস থেকেই জল সংগ্রহ করে পাইপলাইনের মাধ্যমে তা বাড়িতে পৌঁছে দেওয়া হবে। পিএইচই মন্ত্রী পুলক রায় জানিয়েছেন, মুখ্যমন্ত্রীর সাধের ‘জলস্বপ্ন’ প্রকল্পকে সম্পূর্ণ বাস্তবায়িত করার ক্ষেত্রে এহেন গ্রামগুলিতে পানীয় জল পৌঁছে দেওয়াটাই এখন প্রধান কাজ। এরই মধ্যে বাড়ি বাড়ি পানীয় জল সংযোগ পৌঁছে দেওয়ার ‘জলস্বপ্ন’ প্রকল্পে নভেম্বর মাসেও দেশের মধ্যে শীর্ষ স্থানে পৌঁছল বাংলা। কেন্দ্র সরকারের হিসেবে অনুযায়ী, নভেম্বর মাসে মোট ২ লক্ষ ৪০,৯৪৩টি বাড়িতে পানীয় জলের সংযোগ পৌছে দিয়ে দেশের মধ্যে শীর্ষস্থানে রয়েছে বাংলা। বাংলার পরেই রয়েছে তামিলনাড়ু (১,৯৫,০০৭), কর্ণাটক (১,৭৪,৬০১) এবং অসম (১,৫২,৯৫১)। বাড়ি বাড়ি পানীয় জল সংযোগের এই পর্বে গত আগস্ট মাসে ২,৩৮ হাজারের কিছু বেশি বাড়িতে তা পৌঁছে দেওয়া হয়েছিল। নিজের তৈরি সেই রেকর্ডও এবার ভেঙেছে বাংলা।
পিএইচই সূত্রে জানা গিয়েছে, মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশের পরই বিভাগীয় মন্ত্রী পুলক রায়ের তত্ত্বাবধানে রাজ্যের বিভিন্ন বিচ্ছিন্ন গ্রামগুলিতে পরিস্রুত পানীয় জল পৌঁছে দেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা ধার্য করা হয়। কলকাতা বাদে রাজ্যের ২২টি জেলায় এরকম ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা বসতিগুলি চিহ্নিতকরণের কাজ শুরু করা হয়। সমীক্ষা করে দেখা যায়, রাজ্যের ওই ২২টি জেলায় ১ থেকে ১০০টি পরিবারের বসত রয়েছে, এমন গ্রামের সংখ্যা ১০,৭২৯। এই গ্রামগুলির মোট বাড়ির সংখ্যা ৫,৭৭, ৬০৮ জন। এর মধ্যেএরমধ্যে সবচেয়ে কম গ্রামের হদিশ মেলে আলিপুরদুয়ার জেলায়। সেখানে ১০টি গ্রাম রয়েছে যার মোট বাড়ির সংখ্যা ৪১৩। এরপর রয়েছে হাওড়া জেলা, যেখানে এরকম ১৬টি গ্রামের মোট বাড়ি সংখ্যা ৯৫০। জলপাইগুড়ি জেলায় রয়েছে ১৯টি এমন গ্রাম, যাতে মোট বাড়ির সংখ্যা ৭২২। পিএইচই’র ওই সূত্রটি জানিয়েছে, ১ থেকে ১০০টি পরিবারের বসবাস, রাজ্যের মধ্যে এরকম গ্রাম সবচেয়ে বেশি রয়েছে পশ্চিম মেদিনীপুর জেলায়। সেখানে এরকম ২১৯১টি গ্রামে মোট বাড়ির সংখ্যা ১,১৩,০৯৫। এরপরেই রয়েছে মালদহ জেলা, সেখানে ২০১৫টি গ্রামে মোট বাড়ির সংখ্যা ১,২৮,৪৭৮। ঝাড়গ্রাম জেলায় এরকম গ্রামের সংখ্যা ১৫৮৩। সেখানে মোট বাড়ির সংখ্যা ৭৪,৯৯২।
এরকম বিচ্ছিন্ন গ্রামে কীভাবে পৌঁছে দেওয়া হবে পরিস্রুত পানীয় জল? মন্ত্রী জানিয়েছেন, মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশ, চিহ্নিত গ্রামগুলিতেই খুঁজে বের করতে হবে ভূগর্ভস্থ পানীয় জলের উৎস। তারপর সেই জল তুলে পরিশোধন করে ওভারহেড ট্যাঙ্কে রাখা হবে। এরপর পাইপ লাইনের মাধ্যমে সরবরাহ করা হবে বাড়িগুলিতে। এতে খরচ যেমন কমবে, তেমনই ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা বসত এলাকায় পরিস্রুত পানীয় জলও সরবরাহ করা যাবে। পিএইচই সূত্রে জানা গিয়েছে, গত নভেম্বর মাসে পানীয় জলসংযোগের ক্ষেত্রে বাংলা যেমন দেশের মধ্যে প্রথম হয়েছে, তেমনই রাজ্যের মগধ্যে শীর্ষ রয়েছে মুর্শিদাবাদ জেলা। দ্বিতীয়, তৃতীয় ও চতুর্থ স্থানে রয়েছে যথাক্রমে নদীয়া, পূর্ব বর্ধমান ও বাঁকুড়া।