বড়বাজারের ‘ডন’-এর স্ত্রী বিজেপি প্রার্থী! তীব্র চাঞ্চল্য রাজনৈতিক মহলে
বড়বাজারের ‘ডন’ গোপাল তেওয়ারির স্ত্রী কামিনী তেওয়ারিকে এবার পুরভোটে প্রার্থী করেছে বিজেপি। স্বাভাবিকভাবে এই ঘটনায় তীব্র চাঞ্চল্য তৈরি হয়েছে রাজনীতির আঙিনায়। কামিনীদেবীর বিরুদ্ধে সরাসরি পুলিসের খাতায় কোনও অভিযোগ নেই, এ কথা সত্যি। কিন্তু তাঁর স্বামী গোপাল তেওয়ারির বিরুদ্ধে বড়বাজারে তোলাবাজি, খুনের চেষ্টার মতো একাধিক গুরুতর অভিযোগ রয়েছে। ২০১৫ সালে পুরভোটের দিন গিরিশ পার্কে পুলিস অফিসার জগন্নাথ মণ্ডলকে গুলি করার অভিযোগে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল তাঁকে। যদিও পরে ২০১৯ সালে তিনি এই মামলায় বেকসুর খালাস পেয়েছেন।
‘রাজনীতিতে দুর্বৃত্তায়ন’ নিয়ে অনেকেই উদ্বেগ প্রকাশ করেন। এক্ষেত্রেও কামিনীদেবীর মনোনয়নকে কেন্দ্র করে সেই প্রসঙ্গ সামনে এসে পড়েছে। যদিও বিজেপির বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ এই প্রথম নয়। ২০১৬ সালে বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপি হাওড়ার উদয়নারায়ণপুর কেন্দ্রে প্রার্থী করেছিল ভোলা সাঁপুইকে। কাগজেকলমে নাম ভোলা সাঁপুই হলেও শিয়ালদহ সহ মধ্য কলকাতার অপরাধ জগতে তিনি ‘কেলে ভোলা’ নামেই পরিচিত। গত বিধানসভা ভোটে উদয়নারায়ণপুর থেকে টিকিট না পেয়ে হেস্টিংসে দলের কার্যালয়ে দলবল নিয়ে বিক্ষোভ দেখায় তাঁর লোকজন।
পুরভোটে বিজেপি কামিনী তেওয়ারিকে ২৪ নম্বর ওয়ার্ডে প্রার্থী করেছে। বুধবার তিনি নেতাজি ইন্ডোর স্টেডিয়ামে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। এ প্রসঙ্গে গোপাল তেওয়ারির সঙ্গে মোবাইলে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, গত দশ বছর ধরে কামিনী সমাজসেবা করছে। তবে ২০১৪ সাল থেকে আমার স্ত্রী বিজেপি করে। শুধুমাত্র এই কারণেই ২০১৫ সালের পুরভোটে আমাকে মিথ্যে মামলায় ফাঁসানো হয়েছিল। তাঁর কথায়, এর জন্য আমি কাউকে দোষারোপ করতে চাই না। যা আমার নসিবে ছিল, তাই হয়েছে। তাঁর অতীত জীবন স্ত্রীর ভোট বাক্সে প্রভাব ফেলবে না বলেই তাঁর বিশ্বাস।
বিষয়টি নিয়ে বিজেপির প্রতিক্রিয়া জানতে দলের মুখপাত্র শমীক ভট্টাচার্যকে ফোনে ধরা হলে তিনি বলেন, বিভিন্ন সময় গোপাল তেওয়ারির বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ নিয়ে আইনি বিতর্কের অবকাশ রয়েছে। কিন্তু তাঁর অপরাধের সঙ্গে কামিনীর মনোনয়নকে এক করে ফেলা উচিত নয়। কারণ, এতে একজন স্বাধীনচেতা নারীর অধিকার, ব্যক্তিসত্ত্বা লঙ্ঘিত হয়। রাজ্যের শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেসের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায় অবশ্য বিজেপিকে কটাক্ষ করতে ছাড়েননি। তাঁর কথায়, বিজেপির মতো দলের খাতায় ক্রিমিনালের নাম তো থাকবেই। ওরা গোপাল তেওয়ারির স্ত্রীকে প্রার্থী করেছে, এ আর নতুন কী!
কলকাতার অপরাধ জগতের হাঁড়ির খবর রাখা এক গোয়েন্দার কথায়, গিরিশ পার্ক গুলি-কাণ্ডের পর গোপালের বিরুদ্ধে তেমন কোনও অভিযোগ নেই। তিনি এখন মধ্য কলকাতার একটা বড় অংশে প্রোমোটারির কারবার করছেন। তবে লালবাজার সূত্রে খবর, গিরিশ পার্ক গুলি-কাণ্ডে গোপালের বেকসুর খালাসের সিদ্ধান্তকে চ্যালেঞ্জ করে কলকাতা পুলিস ইতিমধ্যে কলকাতা হাইকোর্টে আবেদন করেছে। এছাড়া ২০০৫ সালে বড়বাজারের ফুটপাতে এক চা বিক্রেতাকে গুলি করে খুনের চেষ্টার মামলায় সাজা হয়েছিল তাঁর। সেই মামলায় সুপ্রিম কোর্ট থেকে জামিনে ছাড়া পেয়েছেন তিনি।