মোদীর ঘোষণা সত্ত্বেও ন্যূনতম পেনশন থেকে বঞ্চিত রাজ্যের লক্ষাধিক মানুষ
পিএফ গ্রাহকদের ন্যূনতম পেনশন এক হাজার টাকা করেছে কেন্দ্রীয় সরকার। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী দাবি করেন, এই পরিষেবা তাঁরই কৃতিত্ব। কিন্তু কেন্দ্রের এই দাবি যে ডাহা মিথ্যা, তা বলছেন পেনশনভোগীরাই। তাঁদের বক্তব্য, এদেশের প্রায় ২৩ লক্ষ অবসরপ্রাপ্ত কর্মচারী পেনশন পান এক হাজার টাকারও কম। এই হিসেব খোদ শ্রমমন্ত্রকের। আসল সংখ্যাটা কিন্তু ৩৫ লক্ষের বেশি। বাংলারই লক্ষাধিক পেনশনভোগী হাজার টাকার ন্যূনতম পেনশন এখনও অ্যাকাউন্টে পান না। তাঁদের বেশিরভাগের মাসিক পেনশন ঘোরাফেরা করে ৩০০ থেকে ৪০০ টাকার মধ্যে।
ন্যূনতম পেনশন এক হাজার থেকে বাড়িয়ে অন্তত সাড়ে সাত হাজার টাকা করার দাবিতে দীর্ঘদিন আন্দোলন করছেন পেনশনভোগীরা। পিএফ গ্রাহকদের দাবিদাওয়া আদায় করতে দেশজুড়ে গঠন করা হয়েছিল ইপিএস-৯৫ ন্যাশনাল অ্যাজিটেশন কমিটি। তারাই এই আন্দোলনকে সব রাজ্যে ছড়িয়ে দিয়েছে। কমিটির পশ্চিমবঙ্গ শাখার সভাপতি তপন দত্ত বলেন, ‘তথ্য জানার অধিকার আইনে শ্রমমন্ত্রকের তথ্যেই দেখা যাচ্ছে, দেশে ২৩ লক্ষ মানুষ এখনও ন্যূনতম এক হাজার টাকা পেনশন পান না। আমাদের নিজস্ব হিসেব, সেই সংখ্যা কোনওভাবেই ৩৫ লক্ষের কম নয়। ২০১৪ সালে তৎকালীন কেন্দ্রীয় শ্রমমন্ত্রী প্রকাশ জাভরেকর ঘোষণা করেছিলেন, পিএফের আওতায় থাকা প্রত্যেকে অন্তত এক হাজার টাকা পেনশন পাবেন। কিন্তু কার্যক্ষেত্রে দেখা যায়, বহু মানুষ তা থেকে বঞ্চিত।’
কেন এই বঞ্চনা? তপনবাবু বলেন, ‘কেন্দ্র যে কারণগুলি খাড়া করে, তার মধ্যে অন্যতম হল কর্মচারীর চাকরির মেয়াদ। কেন্দ্রের যুক্তি, যাঁরা ৫৮ বছর পর্যন্ত চাকরি করেননি, তাঁরা ন্যূনতম পেনশন পাবেন না। অন্তত ২০ বছর চাকরি না করলেও মিলবে না ন্যূনতম পেনশন। কিন্তু বাস্তব কথা হল, যাঁরা এই শর্ত দু’টি পূরণ করতে পারেননি বা পারছেন না, তাঁদের অন্তত ৯০ শতাংশের সংস্থার ঝাঁপ বন্ধ হয়ে গিয়েছে। যদি কোম্পানিই না থাকে, তাহলে তার দায় কেন কর্মচারীর উপর বর্তাবে? কেউ কর্মরত অবস্থায় মারা গেলে তিনিও কিন্তু মেয়াদ শেষ করতে পারবেন না। আর এক্ষেত্রেও ফ্যামিলি পেনশন এক হাজার টাকা দেয় না কেন্দ্র।’ তপনবাবুদের প্রশ্ন, সরকার যদি এই ধরনের যুক্তি খাড়া করে প্রায় অর্ধেক পেনশনভোগীকেই বঞ্চিত রাখে, তাহলে ঘটা করে ন্যূনতম পেনশন ঘোষণার কারণ কী?
মোদী সরকার বারবার সামাজিক সুরক্ষার কথা বলে। কিন্তু মাসের শেষে যে পরিমাণ টাকা পিএফের পেনশন বাবদ হাতে আসে, তা কি আদৌ গ্রহণযোগ্য? এই প্রশ্ন বারবার তুলছেন পেনশনভোগীরা। বিষয়টি নিয়ে অ্যাজিটেশন কমিটির পশ্চিমবঙ্গ শাখার সচিব (অর্থ) অমিয়কুমার দাস বলেন, মহারাষ্ট্রের বুলদানা শহরে পেনশনভোগীরা টানা ১ হাজার দিনের বেশি ‘শৃঙ্খলা আন্দোলন’ চালাচ্ছেন। কিন্তু সে সবের তোয়াক্কা করছে না সরকার। বিজেপি সাংসদ হেমা মালিনী ব্যক্তিগত উদ্যোগ নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর কাছে দরবার করেছেন। তাতেও চিঁড়ে ভেজেনি।
সামনেই বেশ কয়েকটি রাজ্যে বিধানসভা ভোট। পশ্চিমবঙ্গে বিজেপির ভরাডুবির পর হঠাৎ জনমোহিনী হওয়ার চেষ্টায় আছে কেন্দ্র। পেনশন না বাড়লেও বাস্তব পরিস্থিতি খতিয়ে দেখতে কমিটি গড়া হচ্ছে। তিন মাসের মধ্যে রিপোর্ট পেশ করার কথা সেই কমিটির। তাই ফের আশায় বুক বাঁধছেন পেনশনভোগীরা। উত্তরপ্রদেশে বিধানসভা ভোটের আগেই লখনউতে দাবি আদায়ে একজোট হতে চলেছেন তাঁরা। ভোটের জ্বালায় যদি ইতিবাচক কোনও সিদ্ধান্ত হয়!