খড়গপুরে প্রকাশ্যে বিজেপির গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব, হাতাহাতিতে জড়ালেন হিরণ-দিলীপের অনুগামীরা
বিধানসভা নির্বাচনের পর থেকে ঠান্ডা লড়াই চলছিল। বৃহস্পতিবার যেন ঘটল তারই বহিঃপ্রকাশ। খড়গপুরে প্রকাশ্যে বিজেপির (BJP) গোষ্ঠীকোন্দল। বচসা, হাতাহাতিতে জড়ালেন হিরণ চট্টোপাধ্যায় এবং দিলীপ ঘোষের অনুগামীরা।
ঠিক কী হয়েছিল? বৃহস্পতিবার বিকেলে খড়গপুরের ১৯ নম্বর ওয়ার্ডের সুভাষপল্লি গেটে হিরণের (Hiran Chatterjee) কম্বল বিতরণ কর্মসূচি ছিল। সে কারণে সকাল থেকেই প্রস্তুতিতে ব্যস্ত ছিলেন তাঁর অনুগামীরা। সব কাজ ঠিকঠাক হচ্ছে কিনা, সে বিষয়ে নজর রাখছিলেন তৃষা চাকলাদার নামে এক বিজেপি নেত্রী। আচমকাই সকালে তাঁর কাছে একটি ফোন আসে। বিজেপি নেত্রীর দাবি, খড়গপুর শহর বিজেপির উত্তর মণ্ডল সভাপতি দীপসোনা ঘোষ তাঁকে ফোন করেন। অভিযোগ, কম্বল বিতরণ কর্মসূচিতে বাধা দেন দীপসোনা। অনুষ্ঠান করা যাবে না বলেই জানান তিনি। জোর করে অনুষ্ঠান করলে ফল ভাল হবে না বলেও বিজেপি নেতা হুমকি দেন বলেই অভিযোগ তৃষার। তবে বাধানিষেধে কান দেননি কেউই। এদিন বিকেলে কম্বল বিতরণ কর্মসূচি হয়। তাতে উপস্থিত ছিলেন হিরণ চট্টোপাধ্যায়।
এতক্ষণ সব ঠিকঠাকই ছিল। তবে হিরণ বেরিয়ে যাওয়ার পরই যত গণ্ডগোল। অভিযোগ, দীপসোনা, কুণাল সরকার নামে বেশ কয়েকজন স্থানীয় তৃণমূল নেতা সেখানে যায়। বিজেপি নেত্রী তৃষা, তাঁর দাদা কুন্তল চাকলাদার, অঙ্কিত শর্মা, অভিজিৎ ভুঁইয়ার উপর হামলা চালানো হয়। দীপসোনা রীতিমতো চপার হাতে হামলা চালায় বলেই অভিযোগ। দু’পক্ষের কথা কাটাকাটি হয়। তবে কিছুক্ষণের মধ্যে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে। এদিকে রাতে পুলিশের দ্বারস্থ হন তৃষা। দীপসোনা, কুণাল-সহ বেশ কয়েকজন বিজেপি নেতার বিরুদ্ধে খড়গপুর টাউন থানায় অভিযোগ দায়ের করেন তিনি। বিজেপি নেত্রীর দাবি, দীপসোনা বেশ কয়েকবার কুপ্রস্তাব দিয়েছেন তাঁকে। তবে তাতে রাজি না হওয়ায় তৃষার উপর ক্ষুব্ধ দীপসোনা। সে কারণেই বৃহস্পতিবার হামলা চালিয়েছেন তিনি।
যদিও দীপসোনা অভিযোগ খারিজ করেছেন। তাঁর দাবি,”সুভাষপল্লিতে বৃহস্পতিবার বিজেপির কোনও দলীয় অনুষ্ঠান ছিল না তা ঠিক। তবে বিধায়ক চাইলে অনুষ্ঠান করতেই পারেন। এ বিষয়ে আমার বলার কিছুই নেই। তৃষা সম্পূর্ণ মিথ্যে কথা বলছেন।” বিধায়ক হিরণ যদিও স্পষ্ট করে হামলাকারী হিসাবে কাউকে চিহ্নিত করেননি। তাঁর দাবি, “দুষ্কৃতীরাই হামলা চালিয়েছে। যারা বিজেপি কর্মীদের উপর আক্রমণ করে তারা মোদি কিংবা বিজেপি কর্মী হতে পারে না। পুলিশকে বলব প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করতে।”
উল্লেখ্য, হিরণ নির্বাচনে জেতার পর থেকেই খড়গপুরে (Kharagpur) বিজেপির গোষ্ঠীকোন্দল চরমে পৌঁছেছে। দিলীপ ঘোষ এবং হিরণের সম্পর্ক যে মোটেও মধুর নয়, সে বিষয়টি জানেন প্রায় সকলেই। কোনও দলীয় অনুষ্ঠানেই দেথা যায় না তারকা বিধায়ককে। শুধু তাই নয় দিলীপ ঘোষের (Dilip Ghosh) উপস্থিতিতে নিজের বিধানসভা এলাকাতেও দেখা যায় না হিরণকে। তবে বিজেপির সর্বভারতীয় সহ সভাপতি এলাকা থেকে চলে যাওয়ার পর ফের খড়গপুরে দেখা যায় হিরণকে। নিজে নানা কর্মসূচি করেন তারকা বিধায়ক। তবে তাতেও দিলীপ ঘোষকে অংশ নিতে দেখা যায় না। সেই গোষ্ঠীদ্বন্দ্বেরই বহিঃপ্রকাশ বৃহস্পতিবার রাতে ঘটেছে বলেই মনে করছে ওয়াকিবহাল মহল।