টিকিটের দাম বেশি নেওয়ার অভিযোগ, রেলকে ফ্লেক্সি ফেয়ার স্কিম খতিয়ে দেখার নির্দেশ
রেলকে এবার ফ্লেক্সি ফেয়ার স্কিম খতিয়ে দেখতে বলল রেলের সংসদীয় স্থায়ী কমিটি। সম্প্রতি ওই কমিটি লোকসভায় এই সংক্রান্ত রিপোর্ট পেশ করেছে। তাতে উল্লেখ করা হয়েছে, রাজধানী, শতাব্দী, দুরন্ত এক্সপ্রেস ট্রেনে যাত্রী ভাড়া এমনিতেই অন্যান্য মেল/এক্সপ্রেস ট্রেনের তুলনায় বেশি। এই পরিস্থিতিতে ফ্লেক্সি ফেয়ার স্কিমের ফলে টিকিটের দাম যদি আরও বেশি হয়, তাহলে সাধারণ যাত্রীদের একটি বড় অংশ যাতায়াতের মাধ্যম হিসেবে অন্য পরিবহণ ব্যবস্থা বেছে নেবেন। এই ইস্যুতে রেলমন্ত্রককে অবিলম্বে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণেরও সুপারিশ করেছে সংসদীয় স্থায়ী কমিটি। ২০১৬ সালে রাজধানী, শতাব্দী এবং দুরন্তের মতো প্রিমিয়াম ট্রেনে ফ্লেক্সি ফেয়ার স্কিম ব্যবস্থা চালু করে কেন্দ্রের মোদী সরকার। যা আদতে ঘুরিয়ে টিকিটের দাম বৃদ্ধিরই একটি বিশেষ বন্দোবস্ত।
এই ফ্লেক্সি ফেয়ার স্কিমের ফলে উল্লিখিত প্রিমিয়াম ট্রেনগুলিতে প্রতি ১০ শতাংশ আসন সংরক্ষিত হয়ে যাওয়া মাত্রই টিকিট মূল্য ১০ শতাংশ করে বৃদ্ধি পেতে থাকবে। তবে সেকেন্ড এসি ক্লাস, স্লিপার, সংরক্ষিত সেকেন্ড সিটিং, এসি চেয়ার কারের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ ১.৫ গুণ পর্যন্ত ভাড়া বৃদ্ধি করা যাবে। এবং এসি থার্ড ক্লাসের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ ১.৪ গুণ পর্যন্ত টিকিট মূল্য বৃদ্ধি করা যাবে। কার্যত এই পদ্ধতি নিয়েই প্রশ্ন তুলেছে রেলের সংসদীয় স্থায়ী কমিটি। রিপোর্টে তারা জানিয়েছে, আরও পর্যালোচনার জন্য রেল ১৫টি ট্রেনে ফ্লেক্সি ফেয়ার ব্যবস্থা বন্ধ করেছে ঠিকই। যে তিন মাস ট্রেনের যাত্রী চাহিদা খুব বেশি থাকে না, সেই ফেব্রুয়ারি, মার্চ এবং আগস্টকে ‘লিন পিরিয়ড’ হিসেবে ঘোষণা করে সেই সময়ে বাছাই করা ৩২টি ট্রেনকেও এই স্কিমের বাইরে রাখা হয়েছে। এমনকী সমস্ত ক্লাসের জন্য ফ্লেক্সি ফেয়ারের হার সর্বোচ্চ ১.৫ থেকে কমিয়ে ১.৪ গুণ করা হয়েছে। দেওয়া হচ্ছে ছাড়ের অফারও। কিন্তু তারপরেও অন্য মেল, এক্সপ্রেস ট্রেনগুলির সঙ্গে তুলনা করলে স্পষ্ট হচ্ছে, ফ্লেক্সি ফেয়ারের ফলে রেল আদতে বৈষম্যমূলক আচরণই করছে। যা বিশেষভাবে প্রভাব ফেলছে আর্থিকভাবে কিছুটা হলেও পিছিয়ে থাকা সাধারণ যাত্রীদের উপর। এ কথা সংশ্লিষ্ট রিপোর্টে স্পষ্ট উল্লেখ করেছে রেলের সংসদীয় স্থায়ী কমিটি।
উল্লেখ্য, বিশেষ করে করোনাকালে স্পেশাল যাত্রীবাহী ট্রেনের বেশি ভাড়ার অভিযোগে একাধিকবার সরব হয়েছেন যাত্রীদের একটি বড় অংশ। এই বিষয়গুলোর উল্লেখ রিপোর্টে না থাকলেও সামগ্রিক পরিপ্রেক্ষিতের বিচারে সংসদীয় স্থায়ী কমিটির এহেন রিপোর্টকে যথেষ্ট তাৎপর্যপূর্ণ বলেই মনে করছে তথ্যাভিজ্ঞ মহল। অন্যদিকে, রেলকে যখন সাধারণ যাত্রীদের স্বার্থে চিন্তাভাবনার সুপারিশ করা হচ্ছে, সেইসময়ই আইআরসিটিসি গঙ্গাবক্ষে বিলাসবহুল রিভার ক্রুজে সফর করানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। গঙ্গাবক্ষে কলকাতা থেকে যাত্রা শুরু করে বিলাসবহুল ক্রুজ ফুলিয়া, বাঁশবেড়িয়া, চন্দননগর হয়ে ফের কলকাতায় ফেরত আসবে। দু’রাত তিন দিনের এই সফরে মাথাপিছু খরচ পড়বে ৩১ হাজার ৫০০ টাকা।